ভারত রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলে ৩৯০ টন চাল পাঠিয়ে কঠিন সময়ে বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়েছে। আমেরিকা ও ন্যাটো কর্তৃক সম্ভাব্য হামলার মধ্যে এই পদক্ষেপ রাশিয়ার জন্য বড় স্বস্তি হিসেবে এসেছে।
India-Russia: ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব আবারও বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। রাশিয়ার কৌশলগত এবং সংবেদনশীল অঞ্চল কালিনিনগ্রাদকে ঘিরে আমেরিকা ও ন্যাটো দেশগুলোর সাথে যেভাবে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারত এই অঞ্চলে ৩৯০ টন চাল সরবরাহ করে বিশ্বকে এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা রাশিয়ার পাশে আছে, বিশেষ করে যখন এই অঞ্চলটি বিশ্ব উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
কালিনিনগ্রাদ কেন আলোচনায়?
কালিনিনগ্রাদ রাশিয়ার সেই ভূখণ্ড যা মূল রাশিয়া থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে, পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যে অবস্থিত। এটি ১৫,১০০ বর্গ কিলোমিটারের একটি সীমিত কিন্তু অত্যন্ত কৌশলগত অঞ্চল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান শহর কোনিগসবার্গকে সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং ১৯৪৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কালিনিনগ্রাদ রাখা হয়।
এই অঞ্চলটি রাশিয়ার জন্য কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে রাশিয়া, ইউরোপ ও ন্যাটোর কার্যকলাপের ওপর নজর রাখতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলোর ধারণা, রাশিয়া এই অঞ্চলটিকে ইউরোপের ওপর হামলার জন্য ব্যবহার করতে পারে। যদি রাশিয়া সুওয়ালকি গ্যাপ দখল করে নেয়, তবে সেটি বাল্টিক দেশগুলোকে বাকি ন্যাটো দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।
আমেরিকা ও ন্যাটোর পরিকল্পনা, রাশিয়ার সতর্কতা
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একজন মার্কিন জেনারেলের বক্তব্যে বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আমেরিকা ও ন্যাটো সেনারা কালিনিনগ্রাদের ওপর সামরিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। রাশিয়া এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বলেছে যে, যদি এই অঞ্চলের ওপর হামলা হয়, তবে তারা এটিকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু হিসেবে গণ্য করবে। রাশিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কালিনিনগ্রাদের রক্ষা তারা যে কোনো মূল্যে করবে।
ভারতের প্রবেশে সমীকরণের পরিবর্তন
এমন একটি সংকটপূর্ণ সময়ে ভারতের পক্ষ থেকে কালিনিনগ্রাদে ৩৯০ টন চালের সরবরাহ পুরো বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভারত এই বছর ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই অঞ্চলে একাধিক দফায় চাল পাঠিয়েছে, যার মধ্যে একটি সাম্প্রতিক চালানে ১২৫ টন চাল ছিল।
রাশিয়ার মিডিয়া ও সরকার ভারতের এই পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছে এবং ভারতকে "প্রকৃত বন্ধু" বলে অভিহিত করেছে। এটা সেই সময়, যখন আমেরিকা ও ন্যাটো এই অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে এবং ভারত কালিনিনগ্রাদকে স্থিতিশীল ও সমর্থন জোগাতে সাহায্য করছে।
ভারত ও কালিনিনগ্রাদের পুরনো সম্পর্ক
ভারত ও কালিনিনগ্রাদের সম্পর্ক শুধু সাম্প্রতিক চাল সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই অঞ্চলটি এর আগেও ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে উপযোগী প্রমাণিত হয়েছে। কালিনিনগ্রাদে অবস্থিত ইয়ান্তার শিপইয়ার্ডে ভারতের জন্য দুটি স্টিলথ ফ্রিগেট তৈরি করা হয়েছিল - 'তুশীল' ও 'তমাল'। এই ফ্রিগেটগুলোর নির্মাণ ভারত ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ ছিল। 'তমাল' ফ্রিগেটটি সম্প্রতি ১ জুলাই ভারতে এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, কালিনিনগ্রাদ ভারতের প্রতিরক্ষা চাহিদাও পূরণ করে আসছে।
বলা বাহুল্য, এটি ভারতের বিদেশনীতির 'মাল্টি-অ্যালাইনমেন্ট' কৌশলের অংশ। ভারত আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে সমানভাবে সম্পর্ক বজায় রাখছে। কিন্তু যখন রাশিয়ার এত গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডের ওপর সংকটের মেঘ ঘনিয়ে আসছে, তখন ভারতের পক্ষ থেকে সেখানে মানবিক সাহায্য পাঠানো একটি কূটনৈতিক বার্তা বহন করে।