আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধিতে ভারতের সি-ফুড রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে: বিকল্প বাজারের সন্ধানে সরকার

আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধিতে ভারতের সি-ফুড রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে: বিকল্প বাজারের সন্ধানে সরকার

আমেরিকা কর্তৃক ৫০% শুল্ক আরোপের ফলে ভারতের সি-ফুড রপ্তানি প্রভাবিত হবে। সরকার রপ্তানিকারকদের রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো নতুন বাজার খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে আমেরিকার উপর নির্ভরতা কমে এবং বাণিজ্য স্থিতিশীলতা পায়।

ভারতে শুল্ক: আমেরিকা কর্তৃক ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ভারতীয় সি-ফুড শিল্পের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। বহু বছর ধরে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় ফ্রোজেন চিংড়ি এবং প্রনের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব ছিল, কিন্তু এখন বর্ধিত খরচের কারণে সেখানে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কেন্দ্র সরকার রপ্তানিকারকদের অবিলম্বে বিকল্প বাজার সন্ধান শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে।

আমেরিকার নির্ভরতা হ্রাসের প্রস্তুতি

গত এক দশকে ভারতের সি-ফুড রপ্তানি দ্রুত বেড়েছে এবং আমেরিকা এই বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার। ২০১৫ সালে আমেরিকার বাজারে ভারতের অংশীদারিত্ব ছিল ২৪.৪%, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৪০.৬% হয়েছে। অর্থবর্ষ ২০২৫-এ ভারতের মোট সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি ছিল ৭.৩৮ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আমেরিকার অবদান প্রায় ২.৮ বিলিয়ন ডলার (৩৫%)। এর মধ্যে বেশিরভাগ রপ্তানি ছিল ‘ভ্যান্নামেই চিংড়ি’।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ ভারতের জন্য বড় ধাক্কা। বিশেষ বিষয় হল, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে আমেরিকা ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, তবুও ভারত এখন রাশিয়ার সি-ফুড বাজারে প্রবেশ করার পরিকল্পনা করছে।

সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে

কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং সোমবার প্রধান সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, 'এটা সুযোগ খোঁজার সময়, ঘাবড়ানোর নয়। আমাদের কাছে অনেক বিকল্প বাজার রয়েছে এবং আমাদের সেখানে নিজেদের উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে হবে।'

সরকার রপ্তানিকারকদের গুণগত মান উন্নয়ন, আরও ভালো প্যাকেজিং এবং মূল্য সংযোজনের (Value Addition) উপর মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছে, যাতে নতুন বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা যায়।

নতুন বাজারের তালিকা

ভারত যে দেশগুলোকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইউকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ওমান, ইউএই, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া এবং চীন। দক্ষিণ কোরিয়াকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, কারণ সেখানে সি-ফুডের চাহিদা অনেক বেশি। একইভাবে, চীন এবং রাশিয়াও বিপুল পরিমাণে মাছ এবং চিংড়ি আমদানি করে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রক্রিয়াজাত এবং তাজা মাছের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকরা নিজেদের জন্য লাভজনক করে তুলতে পারে।

রপ্তানি বেড়েছে, তবে ঝুঁকিও বেড়েছে

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ভারতের মাছ রপ্তানি ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এই বৃদ্ধি মূলত আমেরিকা এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর চাহিদার কারণে সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখন, যদি আমেরিকা থেকে চাহিদা কমে যায় এবং নতুন বাজার সময় মতো তৈরি করা না যায়, তাহলে এই বৃদ্ধি ধীর হয়ে যেতে পারে।

শিল্পজগতের উদ্বেগ এবং প্রত্যাশা

অন্ধ্র প্রদেশের এক বৃহৎ চিংড়ি উৎপাদক বলেছেন, 'আমেরিকার বাজারে আমাদের শক্তিশালী দখল ছিল, কিন্তু শুল্কের পরে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে যাবে। রাশিয়া ও চীনের মতো বাজার ভালো সুযোগ, তবে আমাদের সেখানে লজিস্টিকস এবং দাম নিয়ে স্পষ্ট কৌশল তৈরি করতে হবে।'

কেরালার অন্য এক রপ্তানিকারক বলেছেন, 'সরকার যদি দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত করে, তাহলে আমরা স্থায়ী অর্ডার পেতে পারি।'

Leave a comment