আমেরিকা কর্তৃক আরোপিত শুল্ক ভারতের সৌর শিল্পে রপ্তানিতে ক্ষতি করতে পারে, তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা এর ক্ষতিপূরণ করছে। সরকারি নীতি, ভর্তুকি এবং ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা ভারতের সৌর শক্তি খাতকে গতি দিয়েছে। আগামী বছরগুলিতে, ভারত তার সক্ষমতা এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহের উপর নির্ভর করে চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যাবে।
India solar industry: আমেরিকান শুল্কের চাপ সত্ত্বেও ভারতের সৌর শক্তি খাত দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আমেরিকা ভারতীয় সৌর সংস্থাগুলির একটি বড় গ্রাহক ছিল, কিন্তু রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কর্তৃক ৫০% শুল্ক আরোপের পর রপ্তানি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও, অভ্যন্তরীণ বাজারে পরিচ্ছন্ন শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, সরকারি নীতি এবং খরচ হ্রাস শিল্পকে শক্তিশালী করেছে। জয়পুরের ReNew এবং হায়দ্রাবাদের Vega Solar-এর মতো সংস্থাগুলি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পরিচ্ছন্ন শক্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যেখানে সৌর শক্তির একটি প্রধান ভূমিকা থাকবে।
অভ্যন্তরীণ বাজারই প্রধান অবলম্বন
ভারতে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির দিকে মানুষের ঝোঁক এই খাতের সবচেয়ে বড় ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আমেরিকান শুল্ক সংস্থাগুলির রপ্তানিতে অবশ্যই প্রভাব ফেলবে, কিন্তু দেশের ভিতরে সৌর শক্তির চাহিদা এতটাই বেশি যে সংস্থাগুলির ক্রেতা খুঁজে পেতে অসুবিধা হবে না। বর্তমানে, ভারতে উৎপাদিত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সৌর প্যানেল আমেরিকায় পাঠানো হত। এখন রপ্তানি কমলে এই প্যানেলগুলি অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হবে।
আমেরিকান শুল্কের চ্যালেঞ্জ
আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এর সরাসরি প্রভাব সৌর সংস্থাগুলির রপ্তানিতে পড়েছে। আমেরিকা ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য সবচেয়ে বড় বিদেশী গ্রাহক ছিল। কিন্তু এখন তাদের তাদের মনোযোগ পরিবর্তন করতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে আমেরিকান শুল্কের ফলে ক্ষতি যতটা দেখা যাচ্ছে ততটা বড় নয়, কারণ অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে এবং সরকারও এই খাতকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে।
চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি
চীন এখনও বিশ্বের ৮০% এর বেশি সৌর যন্ত্রাংশের উৎপাদন করে। ভারতের সংস্থাগুলিও কাঁচামাল এবং অনেক প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চীন থেকেই আমদানি করে। তা সত্ত্বেও, ভারত গত কয়েক বছরে উৎপাদন ক্ষমতা দ্রুত বাড়িয়েছে। এখন ভারতীয় সংস্থাগুলি কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাচ্ছে না, বরং ধীরে ধীরে রপ্তানির উপর নির্ভরতা কমানোর দিকে এগিয়ে চলেছে।
দ্রুত বর্ধনশীল উৎপাদন ক্ষমতা
জয়পুরের ReNew কোম্পানি প্রতি বছর এত সৌর মডিউল তৈরি করে, যা প্রায় ৪ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। এটি প্রায় ২৫ লক্ষ ভারতীয় বাড়ির শক্তির চাহিদা পূরণের সমতুল্য। এই কারখানাটি প্রায় ১,০০০ মানুষকে কর্মসংস্থান দেয় এবং ভারতের সৌর শক্তি শিল্পের ক্রমবর্ধমান গতির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। একইভাবে, হায়দ্রাবাদের Vega Solar কোম্পানিও তাদের ব্যবসায়িক মডেল পরিবর্তন করেছে। কোভিড-১৯ এর আগে এর ৯০% ব্যবসা রপ্তানির উপর নির্ভরশীল ছিল এবং মাত্র ১০% অভ্যন্তরীণ সরবরাহের উপর। এখন এই অনুপাত পুরোপুরি বদলে গেছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারই এর প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত সরকার ক্রমাগত এই খাতকে উন্নীত করার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ভর্তুকি, কর ছাড় এবং পরিচ্ছন্ন শক্তিকে উৎসাহ দেওয়ার ফলে সংস্থাগুলি শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় সৌর শক্তির খরচ এখন প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। এই কারণেই সংস্থাগুলি এটিকে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় শক্তির প্রয়োজন হিসাবে দেখছে।
সৌর শক্তির ক্রমবর্ধমান পরিধি
গত ১০ বছরে ভারতে স্থাপিত সৌর শক্তির ক্ষমতা ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৭০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে, যার বেশিরভাগই সৌর শক্তির সাথে যুক্ত। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রকল্পগুলি সম্পন্ন হবে। ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যেখানে সৌর শক্তির অংশীদারিত্ব সবচেয়ে বেশি হবে।
রপ্তানিতে নতুন গতি
IEEFA এবং JMK Research-এর মতো সংস্থাগুলি মনে করে যে আগামী দুই বছরে ভারতের সৌর মডিউলের চাহিদা অভ্যন্তরীণ বিক্রির চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। এর কারণ হল ভারত কেবল নিজের জন্য মডিউল তৈরি করবে না, বরং রপ্তানিও করবে। যদিও, চীনের কাছ থেকে আমদানি করার প্রয়োজনীয়তা এখনও বিদ্যমান, তবে ভারত ধীরে ধীরে এই নির্ভরতা কমানোর দিকে কাজ করছে।