আমেরিকা কর্তৃক ৫০% শুল্ক আরোপের পর ভারত বস্ত্র রফতানি বাড়ানোর জন্য ৪০টি দেশে বিশেষ প্রচার অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে ব্রিটেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স-সহ অন্যান্য প্রধান বাজার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল ভারতকে গুণমান এবং স্থিতিশীলতার নিরিখে একটি নির্ভরযোগ্য বস্ত্র সরবরাহকারী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা এবং বিশ্ব বাজারে অংশীদারিত্ব বাড়ানো।
US Tariff: আমেরিকা কর্তৃক ২৭শে অগাস্ট থেকে কার্যকর হওয়া ৫০% শুল্কের মধ্যে বস্ত্র রফতানিকে উৎসাহিত করতে ভারত ৪০টি প্রধান দেশে বিশেষ প্রচার অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অভিযানে ব্রিটেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশের বাজার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল এবং ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী এই কৌশলের অধীনে উৎপাদন কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করা দেশগুলির সাথে যুক্ত করবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাগুলিতে ভারতের অংশগ্রহণ বাড়াবে। এর উদ্দেশ্য হল ভারতীয় বস্ত্র শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা জোরদার করা এবং রফতানিকে সুরক্ষিত রাখা।
৪০টি দেশে নতুন সুযোগ
ভারত ইতিমধ্যেই ২২০টির বেশি দেশে বস্ত্র রফতানি করে, কিন্তু এই অভিযানে অন্তর্ভুক্ত ৪০টি দেশে আসল সুযোগ দেখা যাচ্ছে। এই দেশগুলির মধ্যে ব্রিটেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, কানাডা, মেক্সিকো, রাশিয়া, বেলজিয়াম, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রধান বাজার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই দেশগুলিতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৫৯০ বিলিয়ন ডলারের বস্ত্র এবং পোশাক আমদানি হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে ভারত এই দেশগুলিতে কৌশলগতভাবে কাজ করবে। এর অধীনে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী, এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল এবং দেশের মিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর উদ্দেশ্য হল ভারতকে গুণমান, স্থিতিশীলতা এবং নতুনত্ব যুক্ত বস্ত্র পণ্যের একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
আমেরিকার শুল্কের প্রভাব
আমেরিকা ২৭শে অগাস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছে। এতে ভারতের ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি প্রভাবিত হবে। বিশেষভাবে বস্ত্র, রত্ন-গহনা, চিংড়ি, চামড়া ও পাদুকা, পশু পণ্য, রসায়ন, বৈদ্যুতিক এবং মেকানিক্যাল মেশিনারী ক্ষেত্রগুলি এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বস্ত্র ক্ষেত্র, যার আমেরিকাতে রফতানি ১০.৩ বিলিয়ন ডলারের, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকা সত্ত্বেও শিল্প এটি সামাল দিতে পারত, কিন্তু এখন মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতীয় বস্ত্র শিল্পকে আমেরিকান বাজারে প্রায় বাইরে করে দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশকে ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশগুলির তুলনায় ৩০-৩১ শতাংশ বেশি শুল্কের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ফোকাস ক্ষেত্রগুলিতে অভিযান
ভারত এই অভিযানে ঐতিহ্যবাহী এবং নতুন উভয় ধরনের ক্ষেত্রের উপর মনোযোগ দেবে। এর অধীনে রফতানিকারকদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবং প্রদর্শনীতে উৎসাহিত করা হবে। এর সাথে সাথে ‘ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া’র অধীনে বিভিন্ন বস্ত্র পণ্যের বিপণন করা হবে। এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টস-এর ব্যবহার, স্থিতিশীলতা মানদণ্ড অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট অর্জনে রফতানিকারকদের সহায়তা করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এফটিএ এবং অনেক দেশের সাথে চলমান আলোচনা ভারতীয় রফতানিকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এছাড়াও এই অভিযান ভারতের বস্ত্র শিল্পকে বিশ্ব বাজারে একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।
এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের ভূমিকা
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল এই কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে। এই কাউন্সিল বাজারের চাহিদা বুঝবে, প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র যেমন সুরাট, পানিপথ, তিরুপুর এবং ভাদোহীকে লক্ষ্য করা দেশগুলির সাথে যুক্ত করবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবং প্রদর্শনীতে ভারতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে।