ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি মিনি ট্রেড ডিলের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর আনুষ্ঠানিক সম্মতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি সীমিত বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মিনি ট্রেড ডিল নিয়ে উভয় দেশের কর্মকর্তারা কিছু দিন ধরে আলোচনা করছেন, তবে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কিছু সংবেদনশীল ক্ষেত্র এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। বিশেষ করে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের মতো ক্ষেত্র, যেগুলি নিয়ে ভারতের অবস্থান শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল।
ভারত চায় না কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের উপর সমঝোতা
সূত্র মারফত জানা গেছে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের মতো বিষয়গুলি খুবই সংবেদনশীল এবং সেগুলিকে এই ডিল থেকে বাইরে রাখা উচিত। এই ক্ষেত্রগুলিতে ভারতের লক্ষ লক্ষ কৃষক ছোট ও প্রান্তিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, যারা কোনো বড় বিদেশি হস্তক্ষেপের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এমতাবস্থায়, ভারত এই ক্ষেত্রগুলির উপর আলোচনা আপাতত স্থগিত রেখেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্তটি ভেবেচিন্তে নেওয়া হয়েছে, কারণ যদি আমেরিকাকে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য ভারতে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে ভারতীয় কৃষকদের উপর বড় প্রভাব পড়তে পারে। আমেরিকান দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন খরচ কম এবং তারা প্রযুক্তিগত দিক থেকেও উন্নত, যা অভ্যন্তরীণ উৎপাদকদের বাজার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
কেবলমাত্র পণ্যের বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে চুক্তি
প্রস্তাবিত চুক্তিটি কেবলমাত্র পণ্যের বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এর মানে হল যে পরিষেবা, বিনিয়োগ বা ডিজিটাল ট্রেডের মতো বিষয়গুলি এতে অন্তর্ভুক্ত হবে না। কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে এটি একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে, যার পরে অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতেও আলোচনার সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
ভারত এই ডিলের অধীনে তার অভ্যন্তরীণ শিল্পগুলিকে আমেরিকান বাজারে আরও বেশি প্রবেশাধিকার পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক্স এবং অটো যন্ত্রাংশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এই ক্ষেত্রগুলিতে ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা বেশ ভালো বলে মনে করা হয় এবং এটি আমেরিকান বাজারে নিজেদের প্রতিযোগিতামূলকভাবে পেশ করতে পারে।
আমেরিকার দাবি
অন্যদিকে, আমেরিকা চায় যে ভারতে তারা জেনেটিকালি মডিফাইড (জিএম) শস্য, পশু খাদ্য এবং দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করার অনুমতি পাক। আমেরিকার জোর এই বিষয়ে যে ভারত বাজার খুলতে কার্পণ্য না করুক এবং কৃষি পণ্যগুলির বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখুক।
যদিও ভারত এই দাবিগুলির সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত নয়। ভারতের আপত্তি এই বিষয়ে যে জিএম শস্য দেশের ছোট কৃষকদের জন্য একটি ঝুঁকি হতে পারে। ভারতে এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল একটি বৃহৎ জনসংখ্যা রয়েছে, যাদের সীমিত সম্পদ রয়েছে। জিএম বীজের আগমনের ফলে ঐতিহ্যবাহী কৃষির উপর চাপ বাড়তে পারে এবং কৃষকদের কর্পোরেট সংস্থাগুলির উপর নির্ভরশীল হতে হতে পারে।
ট্রাম্পের হুমকি এবং ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা
এই পুরো ঘটনায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকেও চাপ ক্রমাগত বজায় রয়েছে। ট্রাম্প আগেই বলেছেন যে যে দেশগুলি ৯ জুলাইয়ের সময়সীমার মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করবে না, তাদের বেশি শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে। এমন দেশগুলিকে আমেরিকার পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হবে, যেখানে শুল্কের নতুন হার উল্লেখ করা হবে।
ভারতের জন্য এই সময়সীমা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এপ্রিল মাসে আমেরিকা ভারতের কিছু পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। এখন এটি অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে, তবে যদি চুক্তি না হয় তবে এই শুল্ক পুনরায় চালু হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
ডিলের প্রভাবের উপর নজর রাখবে শিল্পমহল
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে এই মিনি ট্রেড ডিল যদি নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়, তবে এর প্রভাব উভয় দেশের বাণিজ্যের উপর দেখা যাবে। ভারতের শিল্পমহলের দৃষ্টি এই দিকে নিবদ্ধ যে কোন কোন ক্ষেত্র এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কী ধরনের করের সুবিধা পাওয়া যায়।
টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক্স, অটো পার্টস এবং ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের ব্যবসায়ীরা এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন। এই ক্ষেত্রগুলির আশা, আমেরিকান বাজারে প্রবেশাধিকার পেলে তাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
আলোচনার দৌর চলছে, চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে
সূত্র মারফত জানা যায়, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। উভয় পক্ষই দ্রুত এই বিষয়ে সিলমোহর করতে চাইছে, যাতে ৯ জুলাইয়ের সময়সীমার আগে কোনো দৃঢ় ফলাফল পাওয়া যায়।
যদিও এখনও কিছু বিষয়ে সমঝোতা হওয়া বাকি আছে, তবে আলোচনা দ্রুত গতিতে চলছে। উভয় দেশের কর্মকর্তারা ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছেন এবং আশা করা হচ্ছে যে শীঘ্রই এর উপর কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন দিশার দিকে পদক্ষেপ
এই প্রস্তাবিত ডিল সীমিত হলেও, এটিকে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ বিষয় হল, ভারত তার শর্তে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং এই বার্তা দিচ্ছে যে চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
এখন দেখার বিষয় হল, চূড়ান্ত মুহূর্তে কোন বিষয়গুলির উপর সমঝোতা হয় এবং এই ডিল কোন কোন ক্ষেত্রকে উপকৃত করে। ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, কথা শুধু বাণিজ্যের হতে পারে, আত্মসম্মানের নয়।