তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামাকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি জোরদার হয়েছে। সর্বদলীয় মঞ্চের ৮০ জন সংসদ সদস্য প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন। এই প্রস্তাব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে।
Dalai Lama Bharat Ratna: তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামাকে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান 'ভারতরত্ন' দেওয়ার দাবি ক্রমশ বাড়ছে। অল পার্টি ইন্ডিয়ান পার্লামেন্টারি ফোরাম অন তিব্বত (All Party Indian Parliamentary Forum on Tibet)-এর ব্যানারে ৮০ জনের বেশি সংসদ সদস্য এই দাবির সমর্থনে স্বাক্ষর করেছেন। এই প্রস্তাব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হতে পারে।
দালাই লামার ৯০তম জন্মদিনে বড় ঘোষণা
দালাই লামা সম্প্রতি ধর্মশালায় তাঁর ৯০তম জন্মদিন পালন করেন। এই সময় তিনি তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে একটি বড় ঘোষণা করেন। তিনি উত্তরসূরি নির্বাচনের অধিকার গাদেন ফোড্রাং ট্রাস্টকে অর্পণ করেন, যা তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পরেই চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে। চীন দাবি করে যে উত্তরসূরি নির্বাচনের অধিকার তাদের সরকারের রয়েছে।
সাংসদদের ফোরাম কেন এই উদ্যোগ নিয়েছে
অল পার্টি ফোরামের আহ্বায়ক ভর্তৃহরি মহতাবের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় তিব্বতি প্রশাসনের (Central Tibetan Administration - CTA) সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় রাজ্যসভার সাংসদ সুজিত কুমারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সুজিত কুমার জানিয়েছেন, ৮০ জন সংসদ সদস্য ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন এবং আরও ২০ জন সাংসদের স্বাক্ষর বাকি আছে। প্রস্তাবটি ১০০ জন সাংসদের সমর্থনের পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
তিব্বত নিয়েও সক্রিয়তা বাড়বে
সাংসদদের এই ফোরাম কেবল দালাই লামাকে ভারতরত্ন দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেনি, বরং তিব্বতের বিষয়টিকে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্থাপনেরও পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে সংসদে বিতর্ক থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফোরাম মনে করে যে তিব্বতের বিষয়টি কেবল ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক নয়, এটি একটি মানবিক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রশ্নও বটে।
চীনের কড়া জবাব
দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়ে চীনের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফোরাম। রাজ্যসভার সাংসদ সুজিত কুমার বলেছেন, চীনের দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার নেই। এটি তিব্বতি ঐতিহ্য ও ধর্মের বিষয়, যেখানে চীনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে অনুচিত।
চীনের আপত্তি ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
চীন ২ জুলাই দালাই লামা কর্তৃক উত্তরসূরি নির্বাচনের ঘোষণার ওপর আপত্তি জানিয়েছিল। চীনের দাবি, উত্তরসূরি নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু ভারতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সামাজিক মহলে এ বিষয়ে স্পষ্ট দ্বিমত রয়েছে। ভারতে মনে করা হয় যে দালাই লামার ভূমিকা আধ্যাত্মিক এবং তাঁর উত্তরসূরির সিদ্ধান্ত তিব্বতি ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুসারে হওয়া উচিত, কোনও রাজনৈতিক সরকারের নির্দেশে নয়।
দালাই লামাকে ভারতরত্ন কেন?
দালাই লামা বহু দশক ধরে ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন এবং অহিংসা, করুণা ও শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তিনি ভারতের ভূমিকে নিজের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাঁর অবদান বিবেচনা করে তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরে উঠছে।
দালাই লামা এর আগেও নোবেল শান্তি পুরস্কার, আমেরিকার Congressional Gold Medal-এর মতো সম্মান পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভারতরত্নের মতো সম্মানের জন্য তাঁর নাম প্রস্তাব করা তিব্বতি সম্প্রদায় এবং বিশ্ব মানবাধিকারের প্রতি ভারতের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।