ভারতীয় বায়ুসেনা আরব সাগরে বিশেষ মহড়া, পাকিস্তানের কাছে প্রতিরোধ ক্ষমতার বার্তা

ভারতীয় বায়ুসেনা আরব সাগরে বিশেষ মহড়া, পাকিস্তানের কাছে প্রতিরোধ ক্ষমতার বার্তা

ভারতীয় বায়ুসেনা ২-৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ আরব সাগরে মহড়া করবে। NOTAM-এর অধীনে বেসামরিক ফ্লাইটগুলি রুট পরিবর্তন করবে। মহড়ায় লাইভ ফায়ারিং, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং উচ্চ-তীব্রতার এয়ার ম্যানুভার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাকিস্তানের কাছে প্রতিরোধ ক্ষমতার সংকেত।

Airspace: ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) ২ এবং ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ আরব সাগরে একটি বড় সামরিক মহড়ার জন্য প্রস্তুত। এই মহড়া পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রায় ২০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়কালে একটি NOTAM জারি করা হয়েছে, যার ফলে বেসামরিক বিমানগুলিকে তাদের রুট পরিবর্তন করতে হবে। এই মহড়ায় লাইভ ফায়ারিং, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং এয়ার ম্যানুভার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। IAF-এর এই প্রস্তুতি তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কমব্যাট রেডি‌নেস প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নিয়ে করা হচ্ছে।

এই মহড়ার সময় ভারতীয় বায়ুসেনার কৌশলগত শক্তি, আধুনিক জেট এবং অস্ত্র ব্যবস্থার ক্ষমতার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। মহড়ার স্থান পাকিস্তানের আকাশসীমার কাছাকাছি হওয়ার কারণে এর সংবেদনশীলতা এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। NOTAM অনুযায়ী, আকাশসীমায় অস্থায়ী বিধিনিষেধ থাকবে এবং বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলিকে রুট পরিবর্তন করতে হবে।

মহড়ার তারিখ, সময় এবং অঞ্চল

IAF-এর এই দুই দিনব্যাপী মহড়া গুজরাট এবং রাজস্থানের কাছে আরব সাগরে ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে ৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। এটি একটি নিয়মিত মহড়া, তবে এর স্থান এবং সময় এটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। NOTAM-এর মাধ্যমে বিমানবন্দর এবং এয়ারলাইন কোম্পানিগুলিকে সময়মতো জানানো হয়েছে, যাতে কোনও ধরনের অসুবিধা কম করা যায়।

পাকিস্তানের কাছাকাছি হওয়ায় এই মহড়াটিকে এক ধরনের প্রতিরোধ সংকেত হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। মহড়ায় উচ্চ-তীব্রতার ড্রিল, প্রিসিশন বোম্বিং, গ্রাউন্ড স্ট্রাইক এবং নাইট অপারেশনসের মতো অপারেশনাল উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই সমস্ত মহড়া ভারতীয় বায়ুসেনার অপারেশনাল রেডি‌নেস এবং মাল্টি-ডোমেন যুদ্ধ কৌশলের অংশ।

NOTAM কী এবং কেন এটি জরুরি

NOTAM অর্থাৎ Notice to Airmen হল একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি যা পাইলট এবং এয়ারলাইন কোম্পানিগুলিকে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অস্বাভাবিক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করে। এতে অস্ত্র পরীক্ষা, লাইভ ফায়ারিং বা অন্যান্য সামরিক মহড়ার তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কনভেনশন (CICA) অনুযায়ী জারি করা হয়। এই মহড়ার ক্ষেত্রে আকাশসীমা পাকিস্তানের করাচি থেকে মাত্র ২০০ নটিক্যাল মাইল দূরে, যা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

NOTAM-এর উদ্দেশ্য হল বেসামরিক বিমানগুলিকে নিরাপদ পথ প্রদান করা এবং মহড়া এলাকায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কমানো। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে কোনও বেসামরিক ফ্লাইটকে কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে না হয়।

IAF চিফ-এর নেতৃত্ব এবং জেটগুলির প্রদর্শন

পূর্ববর্তী মহড়াগুলিতে IAF চিফ নিজে জেট উড়িয়ে মহড়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই বারও রাফাল, সুখোই-৩০ MKI, মিগ-২৯, মিরাজ-২০০০ এবং তেজসের মতো ফ্রন্টলাইন জেটগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। গ্রাউন্ড স্ট্রাইক, প্রিসিশন বোম্বিং এবং নাইট অপারেশনস এই মহড়ার অংশ হতে পারে। এই মহড়া কেবল প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদর্শনই নয়, অপারেশনাল ক্ষমতা এবং উচ্চ প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণেরও একটি সংকেত।

IAF-এর শীর্ষ পাইলট এবং প্রযুক্তিগত দলের উপস্থিতি মহড়ার গুরুত্বকে তুলে ধরে। পূর্ববর্তী মহড়াগুলিতে বিকানের এবং রাজস্থানের সীমান্তে রাফাল এবং S-400-এর মতো সিস্টেমগুলির সাথে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা এই বারের মহড়ার প্রস্তুতির জন্য নির্দেশক।

কেন পাকিস্তানের কাছে মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে

আরব সাগরের এই করিডোর কৌশলগতভাবে সংবেদনশীল। এখান থেকে পাকিস্তানের এয়ার রুটগুলি অতিক্রম করে এবং এই অঞ্চলটি সমুদ্র সুরক্ষা এবং এয়ার ডিফেন্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই মহড়ার উদ্দেশ্য হল পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যে ভারত তার কমব্যাট রেডি‌নেস এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রেখেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বেশ কয়েকটি উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বিষয়গুলি প্রধান। এমন পরিস্থিতিতে IAF-এর এই মহড়া কেবল রেডি‌নেসই নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়।

IAF-এর প্রতিরোধ সংকেত

এই মহড়া ভারতের কৌশলগত ক্ষমতা এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলির শক্তি প্রদর্শন করে। মহড়ার সময় লাইভ ফায়ারিং এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পাকিস্তানের চোখে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সংকেত দেয়। এছাড়াও, বেসামরিক বিমানগুলিকে রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য করার মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

IAF-এর পূর্ববর্তী মহড়াগুলির প্যাটার্ন থেকে জানা যায় যে জুন ২০২৫-এ পাক সীমান্তের কাছে একটি বড় মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল, মে এবং জুলাই মাসে রাজস্থানে ওয়ারগেম এবং ড্রিল হয়েছিল। আগস্ট মাসে LoC-এর কাছে ১৯-২১ আগস্ট পর্যন্ত মহড়া হয়েছিল। এই মহড়াটি সেই রুটিন এবং কৌশলগত প্রস্তুতিরই একটি অংশ।

Leave a comment