মার্কিন অর্থমন্ত্রীর ভারতকে গণতন্ত্র বলে অভিহিত: মোদীর চিন সফর ও SCO সম্মেলনের পর আমেরিকার মনোভাবে পরিবর্তন

মার্কিন অর্থমন্ত্রীর ভারতকে গণতন্ত্র বলে অভিহিত: মোদীর চিন সফর ও SCO সম্মেলনের পর আমেরিকার মনোভাবে পরিবর্তন

প্রধানমন্ত্রী মোদীর চীন সফর এবং SCO শীর্ষ সম্মেলনের পর আমেরিকার মনোভাবে পরিবর্তন। অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট ভারতকে গণতন্ত্র বলে অভিহিত করে বললেন, বাণিজ্য ও জ্বালানি সংক্রান্ত সমস্যা একসঙ্গে সমাধান করা হবে।

ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক চীন সফর এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) সম্মেলনে রাশিয়া ও চীনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমেরিকার মনোভাবের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করে বলেছেন যে দুই দেশের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য অবশ্যই আছে, তবে শেষ পর্যন্ত এই দুটি বড় দেশ একসঙ্গে তাদের সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে বের করবে। 

তিনি আরও বলেন যে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং এর মূল্যবোধ আমেরিকার ও চীনের কাছাকাছি, রাশিয়ার নয়। বেসেন্টের এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে আমেরিকা ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে, বিশেষত জ্বালানি ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে।

রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে আমেরিকার অসন্তোষ

আমেরিকা ভারতের বিরুদ্ধে রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। বেসেন্ট এই ক্রয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এটিকে বিশ্ব নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে অনুচিত বলে উল্লেখ করেছেন। ভারত এই অভিযোগগুলি নাকচ করে স্পষ্ট জানিয়েছে যে তাদের তেল ক্রয় সম্পূর্ণভাবে জাতীয় স্বার্থ এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। ভারত সবসময় বলেছে যে তারা সাশ্রয়ী মূল্যে তেল কিনছে যাতে দেশে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জ্বালানির স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। এই বিষয়ে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে স্পষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে, তবে উভয় দেশই আলোচনা-ভিত্তিক সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

SCO সম্মেলনে মোদী-পুতিন-চিনফিং-এর সাক্ষাৎ

২০২৫ সালের SCO শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদী রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উষ্ণ আলোচনা করেন। এই সম্মেলনে তিন নেতার মধ্যে স্পষ্ট বন্ধুত্ব দেখা যায় এবং অনেক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়। আমেরিকা SCO-কে একটি 'লোকদেখানো' (performative) সংগঠন বলে অভিহিত করেছে, যার প্রভাব তেমন বেশি নয়, কিন্তু মোদীর নেতৃত্বে ভারত সম্মেলনে একটি সক্রিয় ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বাণিজ্যিক শুল্ক নিয়ে উত্তেজনা

আমেরিকার পক্ষ থেকে ভারতের উপর ৫০% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি করেছে। মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে যে এই শুল্ক রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার কারণে আরোপ করা হয়েছে। ভারত এটিকে অনুচিত ও অযৌক্তিক বলে অভিহিত করে বলেছে যে তাদের নীতিগুলি শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার উপর ভিত্তি করে। বেসেন্ট এও স্বীকার করেছেন যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা ধীর গতিতে এগোচ্ছে এবং এটি সমাধান করার প্রয়োজন আছে।

রাশিয়ার প্রতি আমেরিকার অবস্থান

বেসেন্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করে বলেছেন যে রাশিয়া ইউক্রেনে বিমান হামলা জোরদার করেছে, যা আমেরিকা নিন্দনীয় বলে মনে করে। ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে এবং সমস্ত বিকল্প খোলা আছে। ভারত সবসময় স্পষ্ট করেছে যে তারা কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয় এবং তাদের নীতিগুলি কেবল জাতীয় স্বার্থের উপর ভিত্তি করে। রাশিয়া থেকে তেল কেনা ভারতের জ্বালানি স্বার্থের অংশ এবং এর উদ্দেশ্য কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করা।

ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা

বেসেন্ট আস্থা প্রকাশ করেছেন যে ভারত ও আমেরিকা তাদের মতপার্থক্য মিটিয়ে নেবে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষত প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও কৌশলগত ক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক শুল্ক এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টি এখনও উত্তেজনার কারণ হয়ে রয়েছে। ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা তাদের জ্বালানি চাহিদা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কোনও আপোস করবে না।

Leave a comment