ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) টেকনিক্যাল কমিটি ও ওয়ার্কিং কমিটির যৌথ ভার্চুয়াল বৈঠকে ৪৮ বছর বয়সি খালিদ জামিলকে জাতীয় দলের কোচ হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছর পরে কোনও দেশি কোচের কাঁধে জাতীয় দলের দায়িত্ব উঠল। ২০১২ সালে স্যাভিও মেডেইরা-র পর এই প্রথম এমন নজির।
কাফা কাপে চোখ রেখে দ্রুত দায়িত্বভার গ্রহণ
খালিদের নিয়োগ তড়িঘড়ি করতে হয়েছে কারণ চলতি মাসের শেষেই তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানে শুরু হচ্ছে কাফা কাপ নেশন্স আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট। এরপর অক্টোবরে রয়েছে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব। এই কঠিন আন্তর্জাতিক সূচিকে মাথায় রেখেই ফেডারেশন দ্রুত তাঁকে মাঠে নামাতে চাইছে। ভারত যদি এশিয়া কাপের মূলপর্বে উঠতে চায়, তাহলে বাছাইয়ের চারটি ম্যাচেই জয় ছাড়া গতি নেই।
চুক্তির মেয়াদ এখনই খোলসা নয়, রহস্য বজায়
যদিও AIFF এখনও খালিদের সঙ্গে ঠিক কত বছরের চুক্তি হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি। তবে পরিস্থিতি বুঝে এটা অনেকটাই অন্তর্বর্তী দায়িত্ব বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের কোচ নিয়োগ নিয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই, কারণ চূড়ান্ত তিনজনের ইন্টারভিউ বা পরিকল্পনা জনসমক্ষে আনা হয়নি।
স্টিফেন বনাম খালিদ: খরচের অঙ্কে বড় ফারাক
এই পদে খালিদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রাক্তন কোচ স্টিফেন কন্সট্যান্টাইন। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার জেরে AIFF স্টিফেনের প্রস্তাবে যেতে পারেনি। কারণ, স্টিফেন সঙ্গে বিদেশি স্টাফ আনতে চেয়েছিলেন, যার খরচ অনেকটাই বেশি। সেখানে খালিদ রাজি হয়েছেন দেশি সাপোর্ট স্টাফ নিয়ে কাজ করতে, যা খরচের অঙ্কে অনেক সাশ্রয়ী।
রাজনৈতিক সমীকরণেও কৌশলী পদক্ষেপ ফেডারেশনের
রাজনৈতিক অঙ্কের কথাও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। খালিদ জামিলকে বাতিল করলে "বিজেপি সমর্থিত AIFF মুসলিম কোচকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিচ্ছে"—এমন বিতর্ক তৈরির সম্ভাবনা ছিল প্রবল। সেই সম্ভাবনা এড়াতে ফেডারেশন যেন নিজের নিরপেক্ষ অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছে এই পদক্ষেপে।
অন্তঃসারশূন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া, নেই স্বচ্ছতা
শুক্রবারের কোচ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সাধারণত যে ধরণের ইন্টারভিউ ও কোচদের পরিকল্পনা রিপোর্ট রাখা হয়, তা এবার ছিল না। পদ্ধতিগত স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফুটবল মহলের একাংশ। পুরো বিষয়টি যেন অন্দরের চাপে ও কৌশলগত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই নির্ধারিত হয়েছে।
দেশি আবেগের জয়, বড় ভূমিকা দেশের তিন অভিজ্ঞ কোচের
খালিদের কোচ হওয়ার নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন ভারতের তিন অভিজ্ঞ কোচ—সাব্বির আলি, আর্মান্দো কোলাসো এবং বিমল ঘোষ। দীর্ঘদিন বিদেশি কোচ নিয়ে কাজ করার পরে এবার তাঁরা আওয়াজ তোলেন দেশি কোচের পক্ষে। তাঁদের মতে, দেশি কোচ হিসেবে খালিদকে সুযোগ দিলে দেশীয় ফুটবলের নিজস্ব চরিত্র ফুটে উঠবে।
সংখ্যাগরিষ্ঠের মতেই সিদ্ধান্ত, মতবিরোধ থাকলেও সিলমোহর খালিদের নামেই
যদিও ফেডারেশনের অন্দরে খালিদকে নিয়ে সকলের মত এক ছিল না। তবুও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন ও ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবের সিদ্ধান্তেই খালিদ জামিলের নাম চূড়ান্ত হয়। দেশের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তাঁর কাছে এখন আত্মপ্রমাণের বড় মঞ্চ হাজির।