ভারতীয় নৌবাহিনী (ইন্ডিয়ান নেভি)-কে আগামী বছর তাদের প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলট পেতে চলেছে, যা নৌ বিমান চালনায় মহিলাদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
নয়াদিল্লি: ভারতীয় নৌবাহিনীর ইতিহাসে আগামী বছর একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় যুক্ত হতে চলেছে। উত্তরপ্রদেশের মেরঠের বাসিন্দা সাব-লেফটেন্যান্ট আস্থা পুনিয়া খুব শীঘ্রই ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলট হতে চলেছেন। আস্থা তার বেসিক এভিয়েশন ট্রেনিং সম্পন্ন করে ফাইটার স্ট্রিমের জন্য নির্বাচন অর্জন করেছেন। এখন তার সামনে এক বছরের কঠোর এবং বিশেষ ফাইটার প্রশিক্ষণ থাকবে, যার পরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলট হিসেবে পরিচিত হবেন।
'উইংগস অফ গোল্ড' পেয়ে উজ্জ্বল আস্থার ভাগ্য
সাব-লেফটেন্যান্ট আস্থা পুনিয়া তার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ বায়ুসেনা একাডেমিতে সম্পন্ন করেন, যা নৌবাহিনীর এভিয়েশন ক্যাডেটদের জন্যও বেসিক প্রশিক্ষণের কেন্দ্র। এরপর বিশাখাপত্তনমে অবস্থিত আইএনএস ডেগা-তে আস্থাবা বেসিক হॉक কনভার্সন কোর্স (বিএইচসিসি) পাস করেন, যার পরে তিনি 'উইংগস অফ গোল্ড' সম্মানে ভূষিত হন। এটি নেভি এভিয়েশনে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফাইটার স্ট্রিমের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পরে, আস্থাবা আগামী ১২ মাস ধরে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেবেন, যেখানে সমুদ্রের উপরে অপারেট হওয়া ফাইটার জেট যেমন মিগ-২৯কে (MiG-29K) বা ভবিষ্যতে অন্তর্ভুক্ত হতে যাওয়া রাফাল-এম (Rafale-M) ওড়ানোর কৌশল শেখানো হবে।
ছোটবেলা থেকেই ছিল উড়ানের স্বপ্ন
মেরঠের বাসিন্দা আস্থা পুনিয়া তার স্কুলজীবন মেরঠেই সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল তিনি উর্দি পরে দেশের সেবা করবেন এবং আকাশে উড়বেন। এই আবেগই তাকে ভারতীয় নৌবাহিনীতে নিয়ে আসে। পরিবারের সদস্যরা জানান, আস্থাবা শুরু থেকেই পড়াশোনা এবং খেলাধুলা উভয় ক্ষেত্রেই ভালো ছিলেন। নেভিতে যোগদানের পর তিনি কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতার সাথে প্রশিক্ষণে নিজেকে প্রমাণ করেন, যার ফলে তিনি প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলটের আসনে পৌঁছতে সফল হয়েছেন।
নেভিতে মহিলাদের জন্য নতুন অধ্যায়
ভারতীয় নৌবাহিনীতে এতদিন পর্যন্ত মহিলারা হেলিকপ্টার পাইলট বা মেরিটাইম রিকনসান্স (Maritime Reconnaissance) এয়ারক্রাফটের পাইলট হতেন, কিন্তু ফাইটার স্ট্রিমে মহিলা পাইলটের নির্বাচন এই প্রথম। এটি স্পষ্ট যে নৌবাহিনীও দ্রুত লিঙ্গ সমতার দিকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি শুধু আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে না, বরং দেশের মেয়েদের এই বার্তাও দেবে যে তারা প্রতিটি চ্যালেঞ্জিং ভূমিকায় নিজেদের প্রমাণ করতে পারে।
বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে ৪৯টি মিগ-২৯কে ফাইটার এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে পরিচালিত হয়। এদের মোতায়েন সমুদ্রসীমার সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ২৬টি রাফাল-এম যুদ্ধ বিমানের কেনার চুক্তিও হয়েছে, যার মধ্যে ২২টি সিঙ্গেল-সিটার এবং ৪টি টুইন-সিটার ফাইটার অন্তর্ভুক্ত। আস্থা পুনিয়ার মতো পাইলট ভবিষ্যতে এই অত্যাধুনিক বিমানগুলো ওড়ানোর দিকে প্রশিক্ষিত হবেন, যা নৌবাহিনীর ক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণা আস্থাবা
আস্থা পুনিয়ার এই কৃতিত্ব প্রত্যেক ভারতীয় মেয়ের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। যে ফাইটার এভিয়েশনকে এতদিন পুরুষদের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো, সেখানে আস্থাবা পা রেখে কেবল প্রথা ভাঙেননি, বরং এও প্রমাণ করেছেন যে মহিলাদের মধ্যেও সেই সাহস এবং দক্ষতা রয়েছে, যা একজন ফাইটার পাইলটের প্রয়োজন হয়।
আস্থাবা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "আমি সবসময় স্বপ্ন দেখেছি, আমি নীল আকাশে দেশের জন্য উড়ব। আমি গর্বিত যে এখন আমি ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য এই স্বপ্ন পূরণ করছি।" ভারতীয় নৌবাহিনী সম্প্রতি বছরগুলোতে মহিলা কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। মহিলা কর্মকর্তাদের যুদ্ধজাহাজে পোস্টিং, সাবমেরিনে নৌ-অপারেশনে ভূমিকা এবং এখন ফাইটার পাইলট হিসেবে সুযোগ দিয়ে নেভি একটি বড় পরিবর্তন দেখিয়েছে।