দুর্বল শুরুতেই দেশীয় শেয়ার বাজার: বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা

দুর্বল শুরুতেই দেশীয় শেয়ার বাজার: বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা

মঙ্গলবার সকালে, দেশীয় শেয়ার বাজার আবারও দুর্বলতার সাথে লেনদেন শুরু করেছে। বাজার খোলার সাথে সাথেই বিএসই সেনসেক্স প্রায় ১৩০ পয়েন্ট কমে যায়, যেখানে এনএসই-র নিফটিও লাল চিহ্নে চলে আসে। বিশ্ব বাজারের সংকেত থেকে চাপের মধ্যে থাকা বাজারের গতিবিধির দিকে বিনিয়োগকারীদের নজর রয়েছে।

সকাল ৯টা বেজে ১৯ মিনিটে, বিএসই সেনসেক্স ১৩০.০৯ পয়েন্ট কমে ৮০৭৬০.৯৩ স্তরে লেনদেন করছিল। একই সময়ে, এনএসই-র নিফটি ১৯.৫৫ পয়েন্ট কমে ২৪,৬৬১-এর কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছিল। প্রাথমিক ঘণ্টাতেই বাজারের মেজাজ দুর্বল দেখা যায় এবং বেশিরভাগ সেক্টরে বিক্রয়চাপ লক্ষ্য করা যায়।

কতগুলি শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং কতগুলিতে কমেছে

বাজার খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০৬১টি শেয়ারের দাম বাড়তে দেখা যায়, যেখানে ১০৮০টি শেয়ারের দাম কমে যায়। এছাড়াও, ১৪৬টি শেয়ারে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এই পরিসংখ্যানগুলি থেকে বোঝা যায় যে বাজারে উত্থান-পতন চলছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্পষ্টতই সতর্কতা দেখা যাচ্ছে।

কোন শেয়ারগুলিতে শক্তি দেখা গেছে

এই দুর্বল পরিস্থিতিতেও কিছু বাছাই করা শেয়ারের দাম বেড়েছে। নিফটি ৫০-এর মধ্যে ওএনজিসি, জেএসডব্লিউ স্টিল, মারুতি সুজুকি, এইচসিএল টেক এবং জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর শেয়ারগুলিতে প্রাথমিক দিকে বৃদ্ধি দেখা যায়।

  • ওএনজিসি: অপরিশোধিত তেলের দাম সামান্য বাড়ার কারণে ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে।
  • জেএসডব্লিউ স্টিল: এবং অন্যান্য মেটাল শেয়ারগুলি বিশ্বব্যাপী চাহিদা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে।
  • মারুতি সুজুকি: ক্রেতাদের আগ্রহ বজায় ছিল।
  • এইচসিএল টেক: আইটি শেয়ারগুলিতে সামান্য পুনরুদ্ধারের কারণে শক্তিশালী ছিল।
  • জিও ফিনান্সিয়াল: সামান্য বৃদ্ধি বজায় ছিল।

কোন শেয়ারগুলি লোকসানে ছিল

অন্যদিকে, অনেক বড় কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত ইলেকট্রনিক্স, শ্রীরাম ফিনান্স, ইনফোসিস, টাটা স্টিল এবং আইসিআইসিআই ব্যাংক।

  • ভারত ইলেকট্রনিক্স: মুনাফা বুকিংয়ের কারণে দুর্বল হয়েছে।
  • শ্রীরাম ফিনান্স: সাম্প্রতিক বৃদ্ধির পরে চাপের মধ্যে রয়েছে।
  • ইনফোসিস:-এর মতো আইটি শেয়ারগুলিতে আবারও বিক্রয়চাপ দেখা গেছে।
  • টাটা স্টিল এবং আইসিআইসিআই ব্যাংক: দুর্বল বিনিয়োগ ধারণার প্রভাব পড়েছে।

আইটি এবং ব্যাঙ্কিং সেক্টরের উপর ভারী চাপ

আজকের লেনদেনের শুরুতে, বিশেষ করে আইটি এবং ব্যাঙ্কিং সেক্টরের উপর চাপ দেখা গেছে। ইনফোসিস, एचडीएफसी ব্যাংক, কোटक ব্যাংকের মতো লার্জক্যাপ স্টকগুলিতে বিক্রয়চাপ দেখা যায়। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত অর্থ তুলে নেওয়া এবং ডলারের শক্তিশালী হওয়ার কারণে ব্যাঙ্কিং শেয়ারের উপর প্রভাব পড়েছে।

মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপে মিশ্র প্রবণতা

মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ শেয়ারগুলিতে সামান্য ওঠানামা দেখা গেছে। তবে, এইগুলিতে বিক্রয়চাপ লার্জক্যাপ শেয়ারের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বর্তমানে কয়েকটি নির্দিষ্ট সেক্টরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

বিশ্ব বাজারের সংকেতের প্রভাব অব্যাহত

মার্কিন বাজারে গত কার্যদিবসে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। একই সময়ে, এশিয়ার বাজারগুলিতেও সামান্য পতন হয়েছে। চীন ও জাপানের বাজারে দুর্বলতার কারণে দেশীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও, আমেরিকাতে সুদের হার নিয়ে আশঙ্কা এবং মুদ্রাস্ফীতির পরিসংখ্যানও বিনিয়োগকারীদের ধারণাকে প্রভাবিত করেছে।

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিক্রয় উদ্বেগ বাড়িয়েছে

গত কয়েক দিন ধরে, এফআইআই (বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী)-এর পক্ষ থেকে ক্রমাগত বিক্রি করা হচ্ছে। এটি দেশীয় বাজারের জন্য একটি নেতিবাচক সংকেত হিসাবে দেখা দিয়েছে। সোমবারও এফআইআই-এর পক্ষ থেকে ৭০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে, যেখানে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (ডিআইআই) কিছু কেনাকাটা করেছে।

তেলের দাম এবং ডলারের গতিবিধির উপর নজর

অপরিশোধিত তেলের দাম আবারও ব্যারেল প্রতি ৮৪ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা ভারত-এর মতো তেল আমদানিকারী দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। একই সাথে, ডলারের বিপরীতে টাকার দামও দুর্বল হয়ে ৮৩.৬০-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে, যার ফলে আমদানি ব্যয়বহুল হতে পারে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য রিটার্ন কমতে পারে।

বাজারে অস্থিরতা বজায় রয়েছে

গত কয়েক দিনে বাজার প্রচুর ওঠানামা দেখেছে। কখনও সেনসেক্স ১০০০ পয়েন্ট পর্যন্ত কমে যায়, আবার কখনও সামান্য পুনরুদ্ধার দেখায়। তবে প্রবণতা এখনও দুর্বল রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের নজর এখন কোম্পানিগুলির ত্রৈমাসিক ফলাফল, বিশ্ব বাজারের সংকেত এবং বিদেশী বিনিয়োগের উপর রয়েছে।

সেক্টোরাল পারফরম্যান্স

  • অটো সেক্টর: মারুতি এবং টাটা মোটরসের কারণে সামান্য শক্তি দেখা গেছে।
  • মেটাল সেক্টর: জেএসডব্লিউ স্টিল এবং হিন্দালকো সহায়তা করেছে।
  • আইটি সেক্টর: আবারও দুর্বল, ইনফোসিস এবং টিসিএস লাল চিহ্নে রয়েছে।
  • ফিনান্সিয়াল সেক্টর: শ্রীরাম ফিনান্স, আইসিআইসিআই ব্যাংকের মতো স্টকগুলি চাপ সৃষ্টি করেছে।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা দেখা গেছে

বাজারে অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব বর্তমানে সতর্ক রয়েছে। ব্যবসায়ীরা ছোট মুনাফাতেও বুকিং করছেন, যার কারণে শেয়ারের দাম বাড়লেও তা স্থায়ী হচ্ছে না।

Leave a comment