আমেরিকান শুল্কের ধাক্কা সামাল দিতে ভারত ঝুঁকছে ব্রিটেন ও ইউরোপের দিকে

আমেরিকান শুল্কের ধাক্কা সামাল দিতে ভারত ঝুঁকছে ব্রিটেন ও ইউরোপের দিকে

আমেরিকান শুল্কের কারণে ভারতের বস্ত্র রপ্তানি ৯-১০% কমতে পারে। ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে নিতে ভারত ব্রিটেন এবং ইইউ-এর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াবে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রেডিমেড পোশাক এবং হোম টেক্সটাইল খাতকে সুবিধা দেবে এবং ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য নতুন বাজার উন্মোচন করবে।

India Textile Export: আমেরিকা ভারতের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে বস্ত্র রপ্তানিতে পতনের আশঙ্কা রয়েছে। এই ক্ষতি কমাতে ভারত ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তার বাণিজ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ভারত-ইউকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সম্ভাব্য ভারত-ইইউ চুক্তি রেডিমেড পোশাক এবং হোম টেক্সটাইল খাতকে সুবিধা দেবে, যা আমেরিকান শুল্কের প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে।

আমেরিকান শুল্কের প্রভাব

আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কেনার অজুহাতে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি বিশ্বের অনেক দেশের উপরও তাঁর শুল্কের চাপ সৃষ্টি করেন। যদিও আমেরিকান আদালত এই পদক্ষেপের জন্য ট্রাম্পকে ভর্ৎসনাও করেছে। ভারতের জন্য এর সরাসরি প্রভাব বস্ত্র রপ্তানির উপর পড়ে, যার ফলে আনুমানিক ৯ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত পতন হতে পারত। এই ক্ষতি মূলত রেডিমেড গার্মেন্টস (RMG) এবং হোম টেক্সটাইল খাতকে প্রভাবিত করতে পারত।

ব্রিটেন এবং ইউরোপে সুযোগ

ভারতীয় বস্ত্র শিল্প এখন ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এর সুবিধা নিয়ে তাদের রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। কেয়ারএজ রেটিংসের প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে এই চুক্তি RMG এবং হোম টেক্সটাইল খাতের জন্য অত্যন্ত লাভজনক প্রমাণিত হবে। এই চুক্তির ফলে ভারত ব্রিটেনের প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে।

ইউরোপের বাজারও আগামী সময়ে ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য উন্মুক্ত হতে চলেছে। ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে FTA নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি চুক্তি চূড়ান্ত রূপ নেয়, তবে ভারতীয় বস্ত্র রপ্তানিকারকরা সেখানে তাদের পণ্য পাঠাতে সক্ষম হবে এবং আমেরিকান শুল্কের কারণে হওয়া ক্ষতি কমাতে পারবে।

ভারতীয় বস্ত্র খাতের উপর প্রভাব

আমেরিকা ভারতীয় বস্ত্র এবং পোশাক খাতের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। ভারতীয় সংস্থাগুলি সেখানে তাদের পণ্যের উপর ভাল মুনাফা পায়। প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকান শুল্কের কারণে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ভারতীয় খাতকে ৯-১০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। RMG এবং হোম টেক্সটাইল রপ্তানিকারকদের PBILDT মার্জিন ৩-৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করবে ভারতীয় সংস্থাগুলি কীভাবে আমেরিকান গ্রাহকদের সঙ্গে তাদের মূল্য কাঠামো পরিচালনা করে। যদি সংস্থাগুলি সঠিক কৌশল অবলম্বন করে, তবে আমেরিকান বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব বজায় রেখে ক্ষতি ন্যূনতম করা সম্ভব।

আমেরিকা বস্ত্রের সবচেয়ে বড় বাজার

ভারতের বস্ত্র এবং পোশাক খাতের জন্য আমেরিকা সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ২০১৪ সালের পর থেকে গত চার বছরে ভারতের প্রায় ২৮-২৯ শতাংশ রপ্তানি আমেরিকাতে হয়েছে। বিশেষ করে সুতির তৈরি পণ্য আমেরিকান বাজারে বেশি চাহিদার মধ্যে রয়েছে।

এই বাজারে ভারতের শক্তি মূলত পণ্যের গুণমান, সময়মতো সরবরাহ এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের উপর নির্ভর করে। আমেরিকান শুল্ক ভারতীয় রপ্তানিকারকদের নতুন কৌশল গ্রহণে বাধ্য করেছে।

বাণিজ্যের নতুন পথ

ভারতীয় বস্ত্র শিল্প এখন আমেরিকার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকবে না। ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারগুলিতে বাণিজ্য বাড়িয়ে আমেরিকান শুল্কের প্রভাব কমানো যেতে পারে। এছাড়াও, ভারতীয় সংস্থাগুলি নতুন বিপণন কৌশল এবং পণ্য বৈচিত্র্যকরণের উপরও কাজ শুরু করেছে।

এর সঙ্গে, RMG এবং হোম টেক্সটাইল খাতে উৎপাদন এবং গুণমান বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগও করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ ভারতকে বিশ্ব বাজারে আরও শক্তিশালী করবে এবং আমেরিকান শুল্কের চাপকে ভারসাম্যপূর্ণ করবে।

Leave a comment