স্মৃতি মন্ধানার সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে রেকর্ড গড়ল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল

স্মৃতি মন্ধানার সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে রেকর্ড গড়ল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল

ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল মুল্লানপুরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। স্মৃতি মন্ধানার ঝড়ো সেঞ্চুরি এবং বোলারদের চমৎকার পারফরম্যান্সের সুবাদে ভারত অস্ট্রেলিয়া মহিলা দলকে ১০২ রানে পরাজিত করেছে।

স্পোর্টস নিউজ: স্মৃতি মন্ধানার দুর্দান্ত সেঞ্চুরি এবং বোলারদের চমৎকার পারফরম্যান্সের সুবাদে ভারতীয় মহিলা দল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ১০২ রানে পরাজিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি অস্ট্রেলিয়া মহিলা দলের রানের নিরিখে সবচেয়ে বড় হার এবং প্রথমবারের মতো তাদের ১০০ রানের বেশি ব্যবধানে হারতে হয়েছে। এই জয়ের সাথে সাথে হরমনপ্রীত কউরের নেতৃত্বে ভারতীয় দল সিরিজ ১-১ এ ড্র করেছে।

টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৪৯.৫ ওভারে ২৯২ রানে অলআউট হয়ে যায়, যার জবাবে অস্ট্রেলিয়া পুরো দল ৪০.৫ ওভারে ১৯০ রানে গুটিয়ে যায়। এখন নির্ধারক তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে ২০ সেপ্টেম্বর।

মন্ধানার ইনিংস দিল শক্তিশালী সূচনা

টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা ভারতীয় দলকে স্মৃতি মন্ধানা এবং তরুণ ওপেনার প্রতীকা রাওয়াল দারুন সূচনা এনে দেন। দুজনে মিলে প্রথম উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়েন। ১২তম ওভারে রাওয়াল আউট হলেও মন্ধানা অন্য প্রান্তে হাল ধরে রাখেন। মন্ধানা আক্রমনাত্মক ব্যাটিং করে মাত্র ৭৭ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ১২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। বিশেষ বিষয় হলো, এটি ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরিও ছিল।

তিনি মোট ৯১ বলে ১১৭ রান করেন, যার মধ্যে ১৪টি চার এবং ৪টি ছক্কা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার এই ইনিংস ভারতীয় ইনিংসকে একটি মজবুত ভিত্তি দিয়েছিল। তবে, তার আউট হওয়ার পর মধ্যম সারির ব্যাটিং কিছুটা টালমাটাল হয়ে পড়ে।

মন্ধানার পর কেবল দীপ্তি শর্মা (৪০ রান) টিকে থেকে ব্যাটিং করতে পারেন। ঋচা ঘোষ ২৯ রান করেন। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর ১৭ রান যোগ করতে পারেন। শেষে স্নেহা রানা ১৮ বলে দ্রুত ২৪ রানের ইনিংস খেলেন। ভারত ৪৯.৫ ওভারে ২৯২ রানে অলআউট হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ডার্সি ব্রাউন সেরা বোলার ছিলেন এবং তিনি ৩ উইকেট নেন।

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস

২৯৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা অত্যন্ত খারাপ হয়। ভারতীয় বোলাররা শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে এবং নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নেয়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এলিস পেরি (৪৪ রান) এবং অ্যানাবেল सदरল্যান্ড (৪৫ রান) লড়াই করলেও কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। এর ফলে পুরো দল ৪০.৫ ওভারে ১৯০ রানে গুটিয়ে যায়।

ক্রান্তি গৌড় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। দীপ্তি শর্মা ২ উইকেট নেন। রেণুকা ঠাকুর, স্নেহা রানা, অরুণ্ধতী রেড্ডি এবং রাধা যাদব প্রত্যেকে ১টি করে উইকেট পান। এভাবে ভারতীয় বোলাররা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের অবাধে খেলার কোনো সুযোগ দেননি।

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় হার (ওয়ানডে)

এই ম্যাচটি অস্ট্রেলিয়া মহিলা দলের জন্য একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করে। এটি ছিল তাদের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হার (১০২ রান)। এর আগে তাদের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স ছিল:

  • ৯২ রান বনাম ইংল্যান্ড, এজবাস্টন (১৯৭৩)
  • ৮৮ রান বনাম ভারত, চেন্নাই (২০০৪)
  • ৮৪ রান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, নর্থ সিডনি (২০২৪)
  • ৮২ রান বনাম নিউজিল্যান্ড, লিংকন (২০০৮)

এই ম্যাচে স্মৃতি মন্ধানার পারফরম্যান্স নির্ধারক প্রমাণিত হয়। তার সেঞ্চুরি ভারতীয় ইনিংসের মেরুদণ্ড ছিল এবং দলকে একটি শক্তিশালী স্কোরে পৌঁছে দিয়েছিল। মন্ধানা আগেও অনেকবার ভারতের জয়ের ভিত্তি স্থাপন করেছেন, কিন্তু এই ইনিংসটি বিশেষ ছিল কারণ এর জোরে ভারত মহিলা ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী দলকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছে।

Leave a comment