কলকাতা: চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদী তত্ত্ব অনুযায়ী ‘Survival of the Fittest’ অর্থাৎ ‘যোগ্যতমই টিকে থাকে’। একই তত্ত্ব আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগেও প্রযোজ্য। গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিক গ্রিসের অ্যাক্রোপলিসে একটি প্রাচীন থিয়েটারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এআই-এর দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে ভবিষ্যত অন্ধকারময় হবে।

এআই-এর প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ:
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতিমধ্যেই চাকরির বাজারে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। বিশেষত আমেরিকার তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রতি মাসে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে এআই-এর কারণে। গবেষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এআই-এর প্রভাবের কারণে চাকরি হারাতে পারেন। তাই এই ‘ভয়াবহ এআই আক্রমণ’ থেকে বাঁচার উপায় কী—এই প্রশ্ন এখন প্রতিটি পেশাজীবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।ডেমিস হাসাবিক এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এআই-এর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারলে বা এর প্রযুক্তি বোঝার চেষ্টা না করলে আগামী দশকে মানুষ বিপন্ন হবে। এআই-এর প্রভাব শুধুমাত্র চাকরির বাজারে নয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলছে।

এজিআই ও মেটা-স্কিলের গুরুত্ব:
ডেমিস আরও বলেন, এজিআই বা আর্টিফিসিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে এমন এক প্রযুক্তি যা মানুষের মতো যুক্তি, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম। যদিও এজিআই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, গুগল আগামী দশকের মধ্যে এটি তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।

তবে তিনি মেটা-স্কিল বা ‘উচ্চতর দক্ষতা’ অর্জনের উপর জোর দেন। এর মধ্যে রয়েছে:
ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং: সমস্যা সমাধানের জন্য যুক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা
ক্রিয়েটিভিটি: নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করা

অ্যাডাপ্টেবিলিটি: দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো
এই দক্ষতাগুলি মানুষকে পরিবর্তনশীল, জটিল ও অনিশ্চিত বিশ্বের মধ্যে সফল হতে সাহায্য করবে।
শেখার ধারাবাহিকতা ও মানবজীবন:
২০২৪ সালে কেমিস্ট্রিতে নোবেলজয়ী ডেমিস হাসাবিক বলেন, মানুষকে রোজ নতুন কিছু শেখা উচিত। পুরো কর্মজীবন জুড়ে শেখার মনোভাব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, যিনি নতুন প্রযুক্তি ও দক্ষতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবেন, তারাই ‘ফিটেস্ট’ বা যোগ্য হয়ে উঠবেন।অন্যদিকে যারা শেখার সঙ্গে তাল মিলাতে পারবে না, তারা প্রযুক্তির জগতে হারিয়ে যেতে বাধ্য। এআই ও এজিআই-এর যুগে চাকরি, সামাজিক স্থান ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন আর ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও এবং নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডেমিস হাসাবিক জানান, আগামী দশ বছরে এআই বা এজিআই-এর দাপটে যে প্রযুক্তিগত ও কর্মজীবন বিপ্লব ঘটবে, তার মোকাবিলায় এখনই শেখার মনোভাব ও ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং, ক্রিয়েটিভিটি ও অ্যাডাপ্টেবিলিটির মতো মেটা-স্কিল আয়ত্ত করতে হবে।













