ভারতের আত্মনির্ভরতার দিকে আরও একটি বড় পদক্ষেপ নিয়ে, ভারতীয় নৌবাহিনী আজ দুটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ পেতে চলেছে। বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে আইএনএস উদয়গিরি এবং আইএনএস হিমগিরি নৌবহরে যুক্ত করা হবে।
নয়াদিল্লি: আজ ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন, কারণ তারা একসঙ্গে দুটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ আইএনএস উদয়গিরি এবং আইএনএস হিমগিরি পেতে চলেছে। এই দুটি জাহাজ দুপুর ২:৪৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবহরে যুক্ত হবে। এই প্রথমবার দুটি ভিন্ন ভারতীয় শিপইয়ার্ডে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ একই দিনে নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
এই যুদ্ধজাহাজগুলো যুক্ত হওয়ার ফলে ভারতের তিনটি ফ্রিগেট স্কোয়াড্রন তৈরি হয়ে যাবে, যা দেশীয় প্রযুক্তি, শিল্প ক্ষমতা এবং আত্মনির্ভরতার একটি শক্তিশালী প্রদর্শণ করবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, আইএনএস উদয়গিরি, নীলগিরি ক্লাসের একটি স্টেলথ ফ্রিগেট, যা ১ জুলাই হস্তান্তর করা হয়েছিল, যেখানে আইএনএস হিমগিরি, প্রোজেক্ট-১৭এ এর অধীনে নির্মিত একটি অ্যাডভান্সড স্টেলথ ফ্রিগেট, যা ৩১ জুলাই নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
দেশীয় যুদ্ধজাহাজের বৈশিষ্ট্য
আইএনএস উদয়গিরি মুম্বাইয়ের মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (MDL)-এ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আইএনএস হিমগিরি কলকাতা-র গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (GRSE) দ্বারা নির্মিত হয়েছে। দুটি যুদ্ধজাহাজ প্রোজেক্ট 17A-এর অধীনে নির্মিত এবং অত্যাধুনিক স্টেলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত। এই প্রকল্পের অধীনে এমন জাহাজ তৈরি করা হয় যা শত্রুর রাডার, ইনফ্রারেড এবং শব্দ সেন্সর থেকে বাঁচতে সক্ষম।
আইএনএস উদয়গিরির নামকরণ করা হয়েছে অন্ধ্র প্রদেশের উদয়গিরি পর্বতশ্রেণীর নামে এবং এটি মাত্র ৩৭ মাসে তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে, আইএনএস হিমগিরির নামকরণ করা হয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর পুরনো আইএনএস হিমগিরির নামে, যা কয়েক দশক ধরে সেবা দিয়েছে।
১. ডিজাইন এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
দুটি যুদ্ধজাহাজের ওজন প্রায় ৬,৬৭০ টন এবং এদের দৈর্ঘ্য ১৪৯ মিটার। এগুলো প্রায় ১৫ তলা বিল্ডিংয়ের সমান উঁচু। এদের সর্বোচ্চ গতি ৫২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা এবং এটি একবার জ্বালানি ভরার পরে ১০,০০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। যুদ্ধজাহাজগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে সেগুলি অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং সেন্সর দিয়ে সজ্জিত হয়ে সমুদ্রে যে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।
এগুলোতে ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল লাগানো আছে, যা স্থল এবং সমুদ্র উভয় স্থানে ২৯০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারে। এছাড়াও, এই যুদ্ধজাহাজগুলো খুব কাছ থেকে আসা শত্রুর মিসাইল এবং ড্রোনকেও ভূপাতিত করতে সক্ষম।
২. হেলিকপ্টার এবং ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী ক্ষমতা
আইএনএস উদয়গিরি এবং আইএনএস হিমগিরি সি কিং হেলিকপ্টারগুলোকেও পরিচালনা করতে পারে। এই হেলিকপ্টারগুলো ডুবোজাহাজ এবং উপরিভাগের জাহাজগুলির অনুসন্ধান এবং সেগুলোকে ধ্বংস করতে অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও, যুদ্ধজাহাজগুলো উন্নত সোনার সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত, যা গভীর সমুদ্রে লুকানো ডুবোজাহাজগুলোকে খুঁজে বের করতে পারে। এই যুদ্ধজাহাজগুলোর নির্মাণে ২০০টিরও বেশি MSME কোম্পানির অংশীদারিত্ব রয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪,০০০ জন সরাসরি কর্মসংস্থান পেয়েছেন। এটি কেবল দেশের নৌ সক্ষমতাই শক্তিশালী করেনি, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পকেও একটি নতুন গতি দিয়েছে।