দীর্ঘ সময় ধরে খারাপ ফর্মের মধ্যে থাকলে কোনও বড় প্লেয়ারকেও অন্ধভাবে সমর্থন করা ঠিক নয়—এমনই কড়া মন্তব্য করলেন প্রাক্তন অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান। প্রথমদিকে ভরসা দেখানো জরুরি হলেও, সেটি যদি বছরের পর বছর চলতে থাকে, তবে উল্টে দলেরই ক্ষতি হতে পারে বলে স্পষ্ট বার্তা দিলেন তিনি।
২০১৬ থেকে ২০১৯—কোহলির ‘সোনালি অধ্যায়’
ভারতীয় ক্রিকেটে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল নিঃসন্দেহে ছিল বিরাট কোহলির সেরা সময়। এই চার বছরে ৪৩টি টেস্টে ৪,২০৮ রান করেছিলেন তিনি। গড় ছিল অবিশ্বাস্য—৬৬.৭৯। এই সময়েই এল ১৬টি সেঞ্চুরি আর ১০টি অর্ধশতরান। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর আগ্রাসী মনোভাবও ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। পাঠানের মতে, এই রেকর্ডই প্রমাণ করে কেন তাঁকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার বলা হয়।
হঠাৎ ফর্মে ধস, শুরু সমালোচনা
কিন্তু ২০২০ সাল থেকে ছবিটা পুরো উল্টে যায়। টানা তিন বছর একটি সেঞ্চুরিও পাননি বিরাট কোহলি। ভরসা হারাতে শুরু করে ভক্তরা, প্রশ্ন ওঠে তাঁর ব্যাটিং কৌশল নিয়ে। পাঠান এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রথমে তিনি নিজেও কোহলিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু খারাপ ফর্ম যদি তিন বা পাঁচ বছর ধরে চলতে থাকে, তবে দলের মঙ্গলকে প্রাধান্য দেওয়াই উচিত।
"চ্যাম্পিয়নের কাজ প্রতিপক্ষকে প্ল্যান বদলাতে বাধ্য করা"
ইরফান পাঠান আরও যুক্তি দেন—যদি কোনও ব্যাটার বারবার একই ভুলে আউট হতে থাকেন, তবে প্রতিপক্ষকে অন্য কোনও প্ল্যান ব্যবহার করতে হয় না। কোহলি বহুদিন ধরে একইভাবে আউট হচ্ছিলেন। এটাই তাঁর প্রধান সমস্যার জায়গা। যদিও পাঠান স্পষ্ট করে দেন, এতে বিরাট কোহলির মাহাত্ম্য কমে না। তিনি নিঃসন্দেহে গ্রেট প্লেয়ার। কিন্তু মাঠের বাস্তব পরিস্থিতি স্বীকার করাই সবার আগে প্রয়োজন।
স্পিনে দুর্বলতা? বাড়ছে বিতর্ক
২০২৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে বিরাটের ব্যাটিং আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ে। বিশেষ করে স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে তাঁর কিছুটা দুর্বলতা চোখে পড়ে। তখনই তাঁকে রঞ্জি ট্রফি খেলার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদিও দিল্লির হয়ে নামলেও প্রত্যাশা মতো পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। ফলে এই বিতর্ক আরও গভীর হয়।
টেস্ট থেকে বিদায়, বাকি শুধু ওয়ানডে
অস্ট্রেলিয়া সফরের পর বিরাট কোহলি ঘোষণা করেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর। এই সিদ্ধান্ত অনেককেই অবাক করে দেয়। বর্তমানে তিনি কেবল ওয়ানডে খেলছেন। তবে এই ফরম্যাটে তিনি কতদিন থাকবেন, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। ক্রিকেট মহলে জল্পনা বাড়ছে—কোহলি কি শিগগিরই ওয়ানডে থেকেও বিদায় নেবেন, নাকি শেষবারের মতো ব্যাট হাতে লড়াই চালিয়ে যাবেন?
কোহলি-রোহিত যুগ কি শেষ হতে চলেছে?
সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে রোহিত শর্মা, অন্যদিকে বিরাট কোহলির ভবিষ্যৎ—দুজনকেই নিয়ে অবসর জল্পনা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন প্রজন্মকে জায়গা দিতে গেলে এই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। পাঠানের বক্তব্যও সেই ভাবনাকেই আরও জোরদার করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ড্রেসিং রুম, কোহলিকে ঘিরে অগ্নিপরীক্ষা
বিরাট কোহলির জনপ্রিয়তা এখনও আকাশছোঁয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা কোটি কোটি। মাঠে ব্যর্থ হলেও ভক্তদের একাংশ তাঁকে ‘কিং কোহলি’ হিসেবেই মানেন। কিন্তু জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমে এখন হিসেবনিকেশ ভিন্ন। পাঠান স্পষ্ট করে দিলেন—একজন খেলোয়াড় যত বড়ই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত টিমের স্বার্থই সবার আগে।
শেষ প্রশ্ন—বিদায় নাকি কামব্যাক?
আজকের দিনে বিরাট কোহলিকে ঘিরে মূল প্রশ্ন একটাই—তিনি কি আবার পুরনো ফর্মে ফিরতে পারবেন, নাকি ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের ইতি টানবেন? পাঠানের কথায়, প্রতিটি খেলোয়াড়ের উত্থান-পতন থাকে, কিন্তু দীর্ঘদিনের খারাপ ফর্ম দলের ভবিষ্যৎকেই অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। তাই বাস্তব মেনে চলাই এখন সময়ের দাবি।