আফগানিস্তানে আইএস-কের বিস্তার: আমেরিকা ও ইউরোপের জন্য হুমকি

আফগানিস্তানে আইএস-কের বিস্তার: আমেরিকা ও ইউরোপের জন্য হুমকি

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি একটি গুরুতর সতর্কতা জারি করে বলেছেন যে আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএস-কে)-এর দ্রুত বিস্তার শুধুমাত্র আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, আমেরিকা ও ইউরোপের মতো পশ্চিমা দেশগুলির জন্যও একটি বড় হুমকি হয়ে উঠছে।

নিউইয়র্ক: আফগানিস্তানে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (আইএস-কে)-এর ক্রমাগত বাড়তে থাকা প্রভাব এখন আমেরিকা, ইউরোপ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে সামনে আসছে। রাষ্ট্রসংঘের (UN) বিশেষজ্ঞরা ৩০শে জুলাই নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা তাদের রিপোর্টে এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রিপোর্ট অনুসারে, আফগানিস্তান আবারও বিশ্ব সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে, যেখান থেকে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ পরিচালিত ও ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেছেন যে আইএস-কে-এর আন্তর্জাতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং এর অপপ্রচার নেটওয়ার্ক বিশ্ব সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিতে সক্ষম হচ্ছে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়ছে আইএস-কে-এর প্রভাব

জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে আইএস-কে এখন ডিজিটাল মাধ্যমগুলির ব্যাপক ব্যবহার করছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়া এবং এনক্রিপ্টেড প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নতুন জঙ্গি নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং উগ্রবাদী ধ্যানধারণা প্রচারের কাজ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএস-কে-এর অনলাইন উপস্থিতি এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে তারা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে থাকা অসন্তুষ্ট যুবকদের কট্টরপন্থী আদর্শের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে গাজা-ইসরায়েল সংঘাতের শিকার যুবকরাও আইএস-কে-এর প্রচারণার শিকার হচ্ছে।

রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে যে তালেবানদের অধিগ্রহণের পর আফগানিস্তান আইএস-কে-এর জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন যে আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ায় ফিরে আসা বিদেশি জঙ্গি যোদ্ধারা এই পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলতে পারে। এই জঙ্গিদের উপস্থিতি কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি নয়, এটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে পুনরায় শক্তিশালী করতে পারে। খামা প্রেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে আইএস-কে এখন প্রকাশ্যে আমেরিকা ও তার নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিচ্ছে।

ইউরোপ ও আমেরিকার জন্য কেন এই হুমকি?

জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও বিশ্ব নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, আইএস-কে-এর কৌশল এখন স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক হয়ে উঠছে। সংগঠনটির উদ্দেশ্য শুধু আফগানিস্তান বা মধ্য এশিয়ায় হামলা করা নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাস ছড়ানো। আইএস-কে-এর নেটওয়ার্ক বিস্তার, মতাদর্শ প্রচার এবং অপপ্রচার অভিযান আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়েছিল যে আফগানিস্তান আইএস-কে-এর জন্য নতুন লঞ্চপ্যাড হতে পারে, যা পশ্চিমা দেশগুলিতে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।

বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন

জাতিসংঘের এই রিপোর্ট আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরও প্রশ্ন তুলেছে। তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণের অভাব, সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার অস্থিরতার সুযোগ আইএস-কে-এর মতো সংগঠনগুলো নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এর ওপর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ আনা না যায়, তবে আগামী মাসগুলোতে আইএস-কে-এর কার্যকলাপ সিরিয়া ও ইরাকের সময়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Leave a comment