জম্মু ও কাশ্মীরে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (JE) ইলেকট্রিক্যাল পরীক্ষা নিয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর ছাত্র ইউনিয়ন (JKSA) এই বিষয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এবং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছে।
শ্রীনগর: জম্মু ও কাশ্মীরে অনুষ্ঠিত জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (JE) ইলেকট্রিক্যাল পরীক্ষা একটি বড় বিতর্কে জড়িয়েছে। প্রার্থী এবং ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ, এই পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে শুধুমাত্র প্রশ্নপত্র সময়ের আগে বিতরণ করা হয়নি, বরং কিছু প্রার্থীকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন এবং সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের (JKSSB) বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ছাত্র ইউনিয়নের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ
জম্মু ও কাশ্মীর ছাত্র ইউনিয়ন (JKSA)-এর জাতীয় আহ্বায়ক নাসির খুয়েহামি জানিয়েছেন যে JE (ইলেকট্রিক্যাল)-এর এই পরীক্ষাটি মূলত সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করে দুপুর ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত করা হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, এই নতুন সময়ের বিজ্ঞপ্তি প্রার্থীদের কাছে পৌঁছানোর আগেই অনেক পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র এবং OMR শিট বিতরণ করা হয়েছিল।
এরপর প্রার্থীদের বাইরে যেতে এবং পরে ফিরে আসতে বলা হয়। এতে শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কাই বাড়েনি, কেন্দ্রগুলিতে বিশৃঙ্খলার পরিবেশও তৈরি হয়। বিষয়টিকে আরও গুরুতর করে তোলে কিছু ভিডিও ক্লিপ, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে মোবাইল ফোন থেকে নকল করছে এবং OMR শিট পূরণ করছে। অনেক হলে প্রার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে—কাউকে লিখতে দেওয়া হয়েছে, আবার কাউকে অপেক্ষা করতে বাধ্য করা হয়েছে।
দূরের জেলা থেকে আসা প্রার্থীরা, যারা বিশেষভাবে চাকরির ছুটি নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন, তারা এই অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন। JKSA বলেছে যে এই পরীক্ষা "ন্যায়বিচারের সঙ্গে খোলাখুলি প্রতারণা" ছাড়া আর কিছুই নয়।
JKSSB-এর উপর আগেও প্রশ্ন উঠেছে
ছাত্র ইউনিয়নের আরও দাবি, JE (ইলেকট্রিক্যাল)-এর প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। অনেক জায়গায় প্রশ্নপত্র বিতরণের পর ফেরত নেওয়া হয় এবং পরে আবার ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়া পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। JKSA বলেছে যে "কিছু প্রার্থী অন্যায়ভাবে সুবিধা পেয়েছে, যেখানে বাকি পরীক্ষার্থীদের সময় এবং পরিশ্রম দুটোই নষ্ট হয়েছে। এটা যুবকদের যোগ্যতা এবং পরিশ্রমের অপমান।"
এই প্রথম নয় যে জম্মু ও কাশ্মীর সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের (JKSSB) উপর অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছরেও বোর্ডের উপর পেপার ফাঁস, নিয়োগ দুর্নীতি এবং কুশাসনের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদের বক্তব্য, বারবার এমন ঘটনায় তাদের ভরসা ভেঙে গেছে। ইতিমধ্যে সংরক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত অমীমাংসিত সমস্যায় জর্জরিত যুবকদের জন্য এই ঘটনাগুলি ভবিষ্যৎকে আরও অন্ধকার করে তুলছে।
ছাত্র ইউনিয়নের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর কাছে চারটি দাবি
জম্মু ও কাশ্মীর ছাত্র ইউনিয়ন লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এবং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ উভয়ের কাছে এই বিষয়ে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছে। তাদের প্রধান দাবিগুলি হল:
- দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: পরীক্ষায় কারচুপির জন্য দোষী সাব্যস্ত কর্মকর্তাদের অবিলম্বে পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।
- স্বচ্ছ তদন্ত: পেপার ফাঁস এবং নিয়োগ চক্রের কার্যকলাপের সময়োপযোগী এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
- কঠোর নিরাপত্তা প্রোটোকল: ভবিষ্যতের পরীক্ষাগুলিতে CCTV নজরদারি, অভিন্ন পরীক্ষার সময় এবং রিয়েল-টাইম মনিটরিং-এর মতো ব্যবস্থা নিতে হবে।
- স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা: যতক্ষণ না কাঠামোগত সংস্কার হচ্ছে, ততক্ষণ পরীক্ষার তত্ত্বাবধান মুখ্যমন্ত্রী অফিসের অধীনে একটি স্বাধীন ব্যবস্থার মাধ্যমে করা উচিত।
JKSA সতর্ক করে দিয়েছে যে এটি শুধু একটি পরীক্ষার সমস্যা নয়, বরং জম্মু ও কাশ্মীরের যুবকদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। বারবার এই ধরনের কেলেঙ্কারি যুবকদের স্বপ্ন চূর্ণ করে দিচ্ছে।