নর্দমা থেকে পুকুরমোবাইল ফেলে পালালেন জীবনকৃষ্ণ সাহা

নর্দমা থেকে পুকুরমোবাইল ফেলে পালালেন জীবনকৃষ্ণ সাহা

বড়ঞা: ফের একবার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে ধরা পড়ল নাটকীয়তা। সোমবার SSC-র নবম ও দশম নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ED তল্লাশি চালাতে গেলে জীবনকৃষ্ণ সাহা বাড়িতে মোবাইল ছুঁড়ে নর্দমায় ফেলে দেন। তবে এটাই ছিল কেবল শুরু। ED অফিসারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করেই তিনি বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে দেওয়াল টপকে পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তৎক্ষণাৎ তাকে ধরে ফেলেন এবং বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসেন।

ED তল্লাশি, ফের মোবাইল নিক্ষেপ

জীবনকৃষ্ণ সাহার এই আচরণ নতুন নয়। এর আগে CBI-এর তল্লাশি চলাকালীনও তিনি পুকুরে মোবাইল ফোন ফেলেছিলেন। সোমবারের ঘটনায় জানা গেছে, ED অফিসাররা বাড়ির পিছনের ঝোপে প্রবেশ করলে তিনি মোবাইলটি সেখানে ফেলে দেন। পরে একটি নর্দমা থেকে উদ্ধার করা হয় সেটি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা না থাকলে হয়তো মোবাইলটি আর উদ্ধার হতো না।

পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা, কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা

জীবনকৃষ্ণ সাহা পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনজন কেন্দ্রীয় জওয়ান তৎক্ষণাৎ তাকে ধরে ফেলেন। এরপরই তাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং শুরু হয় তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ। ED সূত্রে জানা গেছে, বিধায়ককে আপাতত মুর্শিদাবাদের আন্দি গ্রামে তাঁর বাসভবনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার ইতিহাস

জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে এই মামলা নতুন নয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে CBI তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মিডলম্যানদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের অভিযোগ পায়। টানা ৭২ ঘণ্টা অভিযান চলাকালীন জীবনকৃষ্ণ সাহা তার দুটি মোবাইল পুকুরে ফেলে দেন। পরে বিশেষজ্ঞ তদন্তকারীরা পুকুর থেকে মোবাইল উদ্ধার করেন। সেই সময় টানা জেরার মুখে বিধায়ক ভেঙে পড়েছিলেন।

জামিনে মুক্তি, ১৩ মাস পর সুপ্রিম কোর্টের ছাড়

প্রায় এক বছর জেলবন্দি থাকার পর জীবনকৃষ্ণ সাহা জামিনে মুক্তি পান। ১৩ মাস পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি জামিন পান এবং বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। তবে সোমবারের ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে, বিধায়কের বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে তার আচরণ এখনও নাটকীয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ।

মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে বিস্তৃত তল্লাশি

জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়ি ছাড়াও মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে মোট চারটি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি জায়গা হল জীবনকৃষ্ণ সাহার পিসি এবং তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহার বাড়ি। মায়া সাহা সাঁইথিয়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। ED-এর তল্লাশি এই এলাকায়ও চলছে।

মোবাইল উদ্ধার ও নতুন চিত্র

মোবাইল ফেলার এই ঘটনা শুধু চমক নয়, এটি তদন্তকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। ED সূত্রে জানা গেছে, মোবাইলের ভিতরে থাকা চ্যাট ও কলের তথ্য মামলার তদন্তে সহায়ক হতে পারে। এটি নতুন তথ্য উন্মোচন করতে পারে, যা SSC-র শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

নাটকীয়তা, বিধায়ক ও রাজনৈতিক প্রভাব

জীবনকৃষ্ণ সাহার এই আচরণ রাজনীতির জন্যও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, এর ফলে বিধায়কের রাজনৈতিক প্রভাব কিছুটা নষ্ট হতে পারে। তবে বিরোধীরা এটিকে সুযোগ হিসেবে দেখছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি, মোবাইল ফেলা এবং পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টার ভিডিও ও ছবি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

ED ও প্রশাসনের তৎপরতা

সোমবারের ঘটনায় দেখা গেল, ED অফিসাররা খুব দ্রুত এবং সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন। মোবাইল উদ্ধার, বিধায়ককে ধরে আনা এবং তল্লাশি চালানো—all এই প্রক্রিয়া নির্দেশ করছে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। ED সূত্রে জানা গেছে, তল্লাশির সময় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে যা তদন্তে নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে।

ভবিষ্যতের ধাক্কা

জীবনকৃষ্ণ সাহার এই ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। SSC-র শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তার জড়িত থাকার অভিযোগ থাকায়, ED-এর তদন্ত আরও জোরদার হতে পারে। একই সঙ্গে এটি দেখিয়েছে, কোনো বিধায়কই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। মোবাইল ফেলার নাটকীয়তা এবং পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা সমাজ ও রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a comment