জামুই বিধানসভা: ৪০ বছরের লড়াই শেষে বিজেপির ঐতিহাসিক জয় ও ২০২৫-এর চ্যালেঞ্জ

জামুই বিধানসভা: ৪০ বছরের লড়াই শেষে বিজেপির ঐতিহাসিক জয় ও ২০২৫-এর চ্যালেঞ্জ

বিহারের জামুই বিধানসভা আসনে বিজেপি ২০২০ সালে প্রথমবার জয়লাভ করে। শ্রেয়সী সিং ৪১ হাজার ভোটে জয়ী হয়ে কংগ্রেস ও সমাজবাদীদের ঘাঁটি ভেঙে দেন। এটি বিজেপির জন্য ৪০ বছরের লড়াইয়ের ফল।

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: বিহারের রাজনীতিতে জামুই বিধানসভা আসনকে বরাবরই একটি হট সিট হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে এই আসনটি সমাজবাদী ও কংগ্রেসীদের ঘাঁটি ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে বিজেপি প্রথমবারের মতো এখানে জয়লাভ করে এবং শ্রেয়সী সিং বিধায়ক হন। এই জয় বিজেপির জন্য কেবল একটি নির্বাচনী সাফল্য ছিল না, বরং চার দশকের লড়াইয়ের ফলও ছিল। আসুন জেনে নেওয়া যাক জামুই আসনের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং এখানে বিজেপির যাত্রার সম্পূর্ণ গল্প।

জামুই বিধানসভা আসনের গুরুত্ব

জামুই জেলা শুধু ভৌগলিকভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এখানকার রাজনীতি সবসময়ই উত্থান-পতনে ভরা ছিল। এই আসনটি ১৯৫২ সাল থেকে রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের কেন্দ্রবিন্দু। কংগ্রেস থেকে শুরু করে সমাজবাদী এবং জনতা দল থেকে राजद-জেডিইউ পর্যন্ত, প্রতিটি দল এখানে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে।

বিজেপির প্রবেশ ও প্রাথমিক সংগ্রাম

বিজেপি ১৯৯৫ সালে প্রথমবার এই আসনে প্রবেশ করে। সেই সময় দলের প্রার্থী বীরেন্দ্র সিং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু তিনি মাত্র ৫০০০ ভোটে সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হন। এরপর জোট রাজনীতির কারণে এই আসনটি জেডিইউ-এর দখলে চলে যায় এবং বিজেপিকে অপেক্ষা করতে হয়।

জোট পর্ব ও জেডিইউ-এর আধিপত্য

২০০০-এর দশকে জেডিইউ এই আসনে তাদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। নরেন্দ্র সিং জেডিইউ প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। এরপর নরেন্দ্র সিং-এর পরিবারও এই আসন থেকে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি জানান দেয়। কিন্তু বিজেপি তখনও এখানে জায়গা করে নিতে পারেনি।

বিজেপির ব্যর্থ প্রচেষ্টা ও হার

২০১৫ সালে বিজেপি তৎকালীন বিধায়ক অজয় প্রতাপকে টিকিট দেয়। দল আশা করেছিল যে জোটের পরিস্থিতি বদলানোর পর এবার সাফল্য আসবে। কিন্তু ফলাফল ভিন্ন হয় এবং অজয় প্রতাপকে হার মানতে হয়। এখানে জয়লাভের জন্য বিজেপিকে আরও অপেক্ষা করতে হয়।

২০২০ সালে শ্রেয়সী সিং-এর বড় পরিবর্তন

দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচন বিজেপির জন্য গেম-চেঞ্জার প্রমাণিত হয়। এবার দল প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত दिग्विजय সিং-এর কন্যা শ্রেয়সী সিং-এর উপর বাজি ধরে। তরুণ মুখ এবং ক্রীড়া জগতের সঙ্গে যুক্ত পরিচয় ভোটারদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। শ্রেয়সী বিজেপির টিকিটে জামুই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ৪১,০০০-এর বেশি ভোটে জয়লাভ করেন। এই জয় বিজেপির জন্য ঐতিহাসিক ছিল কারণ এই প্রথম দল এখানে পতাকা উত্তোলন করে।

১৯৫২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত নির্বাচনী ইতিহাস

জামুই আসনে এ পর্যন্ত অনেক বিশিষ্ট নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৫২ সালে কংগ্রেসের দুর্গা মন্ডল প্রথম বিধায়ক হন। এরপর হরি প্রসাদ শর্মা এবং গুরু রামদাসও কংগ্রেস থেকে জয়লাভ করেন।

  • ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরারি সিং प्रजा सोशलिस्ट पार्टी-র টিকিটে টানা চারবার জয়লাভ করেন এবং বিধানসভার অধ্যক্ষ পদও অলংকৃত করেন।
  • ১৯৮০ সালে নরদেব প্রসাদ ভগত নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন।
  • ১৯৮৫ এবং ১৯৯০ সালে সুশীল কুমার সিং কংগ্রেস থেকে বিধায়ক হন।
  • ১৯৯৫ সালে অর্জুন মন্ডল জনতা দল থেকে জয়লাভ করেন।
  • ২০০০ সালে নরেন্দ্র সিং জেডিইউ থেকে, এরপর উপ-নির্বাচনে সুশীল কুমার সিং জেডিইউ থেকে জয়ী হন।
  • ২০০৫ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফেব্রুয়ারিতে আরজেডি-র বিজয় প্রকাশ এবং নভেম্বরে জেডিইউ-এর অভয় সিং জয়লাভ করেন।
  • ২০১০ সালে অজয় প্রতাপ জেডিইউ থেকে, ২০১৫ সালে বিজয় প্রকাশ আরজেডি থেকে বিধায়ক হন।
  • এবং অবশেষে ২০২০ সালে শ্রেয়সী সিং বিজেপির টিকিট থেকে বিধায়ক হন।

জামুই আসনে বড় নাম এবং তাদের ভূমিকা

এই আসন থেকে অনেক নেতা কেবল নির্বাচনই জেতেননি, বরং রাজ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ত্রিপুরারি সিং মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিধানসভার অধ্যক্ষ পর্যন্ত ভূমিকা পালন করেন। অর্জুন মন্ডল বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হন। সুশীল কুমার সিং কংগ্রেস ও জেডিইউ উভয় দল থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। নরেন্দ্র সিং এবং তার পুত্ররাও এই আসন থেকে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখেন।

বিজেপির জন্য জয়ের গুরুত্ব

জামুই বিধানসভা আসনে বিজেপির জয় কেবল একটি নির্বাচনী অর্জন নয়, বরং ৪০ বছরের লড়াইয়ের ফল। এই জয় দলকে এই বিশ্বাস জুগিয়েছে যে এখন বিহারের সেইসব অঞ্চলেও বিজেপির প্রভাব শক্তিশালী হতে পারে যেখানে পূর্বে সমাজবাদী এবং কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল।

২০২৫-এর নির্বাচন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ

এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, বিজেপি এখানে তাদের প্রভাব বজায় রাখতে পারবে কিনা। ২০২০ সালের জয় নিঃসন্দেহে দলকে নতুন শক্তি দিয়েছে, কিন্তু বিরোধী পক্ষও জামুইকে হালকাভাবে নিতে প্রস্তুত নয়। এবারের নির্বাচনে দেখতে হবে, শ্রেয়সী সিং তার জয় ধরে রাখতে পারেন কিনা অথবা বিরোধী পক্ষ তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সফল হয় কিনা।

Leave a comment