ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে, উচ্চ রিটার্নের লোভ দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা সাইবার প্রতারণার একটি ঘটনা সামনে এসেছে। ঝাড়খণ্ড সিআইডি-র সাইবার ক্রাইম শাখা এই মামলায় শাস্ত্রী নগর, কদমা থানা এলাকার বাসিন্দা দীনেশ কুমারকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে মেটাল ট্রেডিংয়ে মোটা মুনাফার টোপ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলে প্রায় ২.৯৮ কোটি টাকা প্রতারণা করেছে। ভুক্তভোগী ২৮ জুলাই সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, যার পরে মামলার তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তে জানা গেছে যে এই প্রতারণা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে করা হয়েছিল। অভিযুক্ত "গ্লোবাল ইন্ডিয়া" নামে একটি ভুয়া টেলিগ্রাম চ্যানেল চালায়, যেখানে একটি লিঙ্ক শেয়ার করা হয়। লিঙ্কে ক্লিক করার সাথে সাথেই শিকাগো বোর্ড অফ অপশনস এক্সচেঞ্জের সাথে যুক্ত একটি ভুয়া ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খোলা হত। এর পরে, মেটাল ট্রেডিংয়ে উচ্চ রিটার্নের লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে বলা হত।
অভিযুক্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাথে জড়িত একাধিক পুরনো মামলা
ঝাড়খণ্ড সিআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল থেকে এই জালিয়াতির তথ্য পেয়েছিল। তদন্তে আরও জানা যায় যে অভিযুক্ত দীনেশ কুমারের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একদিনে ১.১৫ কোটি টাকা স্থানান্তরিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই অ্যাকাউন্টের সাথে জড়িত আরও দুটি সাইবার প্রতারণার মামলা এর আগে নয়ডা সেক্টর-৩৬ (উত্তর প্রদেশ) এবং ঝাড়খণ্ডে নথিভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে মোট ৩.২৯ কোটি টাকা প্রতারণা করা হয়েছে।
সিআইডি অভিযুক্তের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ সহ অনেক ডিজিটাল সরঞ্জাম জব্দ করেছে। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং কর্মকর্তারা মনে করছেন যে এটি কোনও বড় সাইবার প্রতারণা নেটওয়ার্কের অংশ হতে পারে। সংস্থাগুলি এখন এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত অন্যান্য অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তি এবং ডিজিটাল ট্রেইলও খতিয়ে দেখছে।
সাধারণ মানুষকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে
ঝাড়খণ্ড সিআইডি সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করেছে যে তারা যেন কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আসা বিনিয়োগের প্রস্তাব বা "দ্বিগুণ রিটার্ন" জাতীয় প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস না করেন। কোনও অজানা পোর্টাল, লিঙ্ক বা অ্যাপে ক্লিক করার আগে তার সত্যতা যাচাই করুন এবং কখনওই কোনও অপরিচিত ইউপিআই আইডি বা অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করবেন না। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতারণা ক্রমাগত বাড়ছে, তাই সতর্কতা অবলম্বন করাই সবচেয়ে বড় উপায়।
যদি কেউ সাইবার প্রতারণার শিকার হন, তাহলে অবিলম্বে সাইবার হেল্পলাইন নম্বর 1930-এ কল করুন অথবা www.cybercrime.gov.in-এ গিয়ে অভিযোগ দায়ের করুন।
আগেও সামনে এসেছিল বড় সাইবার জালিয়াতি
এটি প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও রাঁচিতে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হয়েছিল। অভিযুক্ত নিজেকে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিক বলে পরিচয় দেয় এবং ভুক্তভোগীকে ৩০০ কোটির আর্থিক তছরুপের মামলায় গ্রেফতার করার হুমকি দেয়। ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ভয় দেখিয়ে প্রতারক টাকা হাতিয়ে নেয়। এই মামলায় গুজরাটের জুনাগড়ের ২৭ বছর বয়সী অভিযুক্ত রবি হসमुखলাল গোধনিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সাইবার প্রতারণার এই ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলি আবারও প্রমাণ করে যে বিনিয়োগের আগে সম্পূর্ণ খোঁজখবর নেওয়া জরুরি, নতুবা কয়েকটি ক্লিকেই আপনার বহু বছরের উপার্জন উড়ে যেতে পারে।