শনিবার রাতে ফের ধস বন্ধই থাকল জাতীয় সড়ক ১০

শনিবার রাতে ফের ধস বন্ধই থাকল জাতীয় সড়ক ১০

শনিবার গভীর রাতে ফের ধস নামে শিলিগুড়ি-সিকিম সংযোগকারী জাতীয় সড়ক ১০-এর তারখোলা এলাকায়। প্রবল বৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা বড় বড় বোল্ডার রাস্তায় আছড়ে পড়ে। সেইসঙ্গে কাদা-পাথরে একাধিক জায়গা চাপা পড়ে যায়। এর জেরে রবিবার সকালেও এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পুরোপুরি বন্ধ থাকে। ফলে সিকিম-কালিম্পং হয়ে শিলিগুড়িগামী যান চলাচল ব্যাহত হয়।

বিপজ্জনক অবস্থায় শ্বেতিখোলার রাস্তা, তিস্তার জলেও উদ্বেগ

ধস নামার পাশাপাশি শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং রুটে শ্বেতিখোলার কাছে তিস্তার তোড়ে রাস্তাও অনেকটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। নদী খেয়ে নিয়েছে রাস্তার একাংশ, যে কোনও মুহূর্তে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে এই অংশ। পাশাপাশি, তিস্তার জলপৃষ্ঠও দ্রুত বাড়ছে, যার ফলে আরও ভূমিধসের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের সতর্ক করা হয়েছে।

২৯তম মাইল-জেলখোলা সেকশন বিপজ্জনক, সীমিত যান চলাচল

২৯তম মাইল ও জেলখোলার মধ্যবর্তী অংশটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে প্রশাসন। যদিও কিছু অংশে রাস্তা খোলা থাকলেও সেখান দিয়ে কেবলমাত্র স্থানীয় ছোট গাড়িই চলাচল করছে। পর্যটক বা ভারী গাড়ির প্রবেশে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সেতিঝোরা ও কাটারায় ধস, ভারী গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা

সেতিঝোরায় রাস্তার উপর ফাটল এবং কাটারার কাছে বড় ধস নামায় রংপো থেকে শিলিগুড়িগামী ও বিপরীতমুখী রুটে ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ছোট গাড়ি তাঁদের ঝুঁকিতে চলাচল করছে। জাতীয় সড়ক ১০-এর একাধিক অংশ এখন কার্যত অচল।

ভূমিধসে বন্ধ একাধিক বিকল্প রুট, পরিস্থিতি জটিলতর

রেসি রোড, লাভা রুটেও শনিবার রাতে নতুন করে ভূমিধস হয়েছে। লাভা-ঋষি রোড একেবারে বন্ধ। কাটারার ধস ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ঋষি রোডকে। দ্রুত মেরামতির কাজ চললেও বারবার ধস নামার ফলে সেটিও থমকে যাচ্ছে। ২ আগস্ট থেকে বন্ধ এই রুটে রবিবার ফের বড় পাথর ধসে পড়ায় পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে যায় যাত্রাপথ।

কোন রাস্তাগুলি খোলা আছে? পর্যটকদের জন্য বিকল্প রুট

পর্যটকদের জন্য যেসব রুট এখনো খোলা রয়েছে সেগুলি হল—

লাভা থেকে কালিম্পং

লাভা থেকে সিকিম হয়ে মুনসং

লাভা থেকে গোরুবাথান হয়ে শিলিগুড়ি

তবে এই রুটগুলিও ধসের আশঙ্কা থেকে মুক্ত নয়। তাই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে যাত্রা না করার পরামর্শ।

কোন রাস্তাগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ? বিপদ যেন ঘনিয়ে আসছে

সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে লাভা থেকে লোলেগাঁও এবং লাভা থেকে সিকিম হয়ে ঋষি রোডের সংযোগ। ফলে সিকিমগামী বহু পর্যটকই মাঝপথে আটকে পড়েছেন। অনেক জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন। ফলে সমস্যায় পড়েছেন আটকে পড়া যাত্রী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও।

দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে গেলেও হাল ফেরেনি, ক্ষোভ প্রশাসনে

২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে বারবার ধসের কবলে পড়ছে এই রাস্তাটি। শুরুতে এই জাতীয় সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হাতে থাকলেও বর্তমানে তা জাতীয় হাইওয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (NHIDCL)-এর অধীনে। তবু ধস নিয়ন্ত্রণ বা রাস্তা মেরামতির কাজ খুব ধীরগতিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

সেবক-কালিঝোরায় অতীত অভিজ্ঞতা ফের মনে পড়ছে

মাত্র কয়েক দিন আগেই সেবক ও কালিঝোরার মাঝে ধসে বিশাল বোল্ডার রাস্তায় পড়ে যায়। একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে উদ্ধারকার্য চালিয়ে রাস্তা আংশিক খোলা হলেও ফের নতুন ধসের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এবার ধসের কেন্দ্র বিরিকদাড়া, যেখানে আগেও বারবার ধস নেমেছে।

উত্তর সিকিমের পর্যটকদের উদ্ধার করতে হয় সেনাবাহিনীকে

এর আগেও সিকিমে টানা বৃষ্টির কারণে ধসের ফলে বিপদে পড়েছিলেন বহু পর্যটক। কোথাও রাস্তা ভেঙে পড়েছে, কোথাও ধসে পাহাড়ি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এমন অবস্থায় সেনাবাহিনীকেও নামতে হয়েছিল উদ্ধারকার্যে। এবারও একই রকম পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে, তাই প্রশাসন ও সেনা প্রস্তুত।নিষ্ক্রিয় অবস্থায় উদ্ধার ও সংস্কার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে বর্তমানে প্রশাসন ধস পরিষ্কার এবং বিকল্প রুট চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছে। তবে অনবরত বৃষ্টি ও বোল্ডারের আছড়ে পড়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ও যানবাহনের চালকদের ধৈর্য ধরার ও প্রশাসনের নির্দেশ মানার আবেদন করা হচ্ছে।

Leave a comment