রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফলপ্রকাশ নিয়ে ফের তৈরি হয়েছে বড় অনিশ্চয়তা। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, শুক্রবারই বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মেনশন করার চেষ্টা হবে। ওবিসি সংক্রান্ত রায়ের প্রেক্ষিতে এমন পরিস্থিতি যে তৈরি হতে পারে, তা রাজ্যের ধারণায় ছিল না বলেই জানিয়েছেন তিনি।
ওবিসি বিতর্কে হাইকোর্টের নির্দেশ
ওবিসি ক্যাটেগরির নতুন তালিকা নিয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল স্পষ্ট—এই নতুন তালিকা মেনে মেধাতালিকা প্রকাশ করা যাবে না। তালিকা প্রকাশ করতে হলে পুরনো নিয়ম মেনে করতে হবে। এর ফলে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত জয়েন্টের ফল প্রকাশ আর সম্ভব হয়নি। আদালতের এই নির্দেশ হঠাৎই গোটা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষোভ ও দ্রুত সমাধানের আশা
ব্রাত্য বসু শুক্রবার স্পষ্ট বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে হাইকোর্ট অন্যরকম কিছু ভাবতে পারে—এটা আমাদের চিন্তাভাবনায় ছিল না। তাই আজকেই আমরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব।” তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, স্নাতক স্তরের মেধাতালিকা প্রকাশের জট খুব শীঘ্রই কেটে যাবে। রাজ্যের উদ্দেশ্য, দ্রুততম সময়ে ফলপ্রকাশ নিশ্চিত করা, যাতে পড়ুয়ারা ভর্তি প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে না পড়ে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও ফলের অনিশ্চয়তা
৭ অগাস্ট অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফল ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ টালবাহানার পর শিক্ষার্থীরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ফল জানার জন্য, তখনই ওবিসি তালিকা সংক্রান্ত জটিলতা নতুন করে মাথাচাড়া দেয়। ফলে বহু পরিবার ও ছাত্রছাত্রী শেষ মুহূর্তে অজানা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়।
হাইকোর্টে নতুন তালিকা নিয়ে আপত্তি
বৃহস্পতিবার বিচারপতি কৌশিক চন্দ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মামলায় নতুন ওবিসি তালিকা নিয়ে সরাসরি আপত্তি জানান। আদালতের মতে, নতুন বিধি অনুযায়ী মেধাতালিকা প্রকাশ করা যাবে না, কারণ এতে ন্যায়বিচারের প্রশ্ন উঠতে পারে। এই অবস্থায় বোর্ডকে পুরনো নিয়ম মেনে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়, যা কার্যত ফলপ্রকাশ বিলম্বিত করে দেয়।
ফল আটকে আরও পরীক্ষায় প্রভাব
জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার পাশাপাশি বোর্ডের অধীনে হওয়া আরও কয়েকটি বড় পরীক্ষার ফলপ্রকাশও একই জটিলতার মধ্যে পড়েছে। ভর্তি মৌসুমের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন পরিস্থিতি শিক্ষাক্ষেত্রে এক বড় ধাক্কা। কলেজ-ইউনিভার্সিটির ভর্তি ক্যালেন্ডারও এতে প্রভাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা।
তিন লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে সুতোয়
পুরো ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রায় তিন লক্ষ পরীক্ষার্থী, যাদের ভর্তি ও পরবর্তী শিক্ষা জীবনের পরিকল্পনা এখন অনিশ্চিত। অনেকে ইতিমধ্যেই অন্যান্য রাজ্য বা বিদেশে পড়াশোনার সুযোগের জন্য আবেদন করেছেন, যেখানে সময়মতো জয়েন্টের ফল না পেলে সমস্যা তৈরি হবে। তাই রাজ্যের দ্রুত পদক্ষেপের ওপর এখন শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন নির্ভর করছে।