পাকিস্তান-এর জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত ব্লগার জ্যোতি মালহোত্রকে কেরল সরকার পর্যটন অভিযানে ডেকেছিল। RTI থেকে জানা গেছে যে তাঁর ভ্রমণের সমস্ত খরচ সরকার বহন করেছে।
জ্যোতি মালহোত্রা: পাকিস্তান-এর জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ব্লগার জ্যোতি মালহোত্রাকে কিছু দিন আগে কেরল সরকার তাদের পর্যটন প্রচার কর্মসূচির অধীনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। RTI থেকে জানা গেছে যে তাঁর ভ্রমণের সমস্ত খরচ রাজ্য সরকার বহন করেছে। জ্যোতি মুন্নার, কোচি-র মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ভ্রমণ করেছিলেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করেছিলেন। এই ঘটনা বর্তমানে কেরল সরকারের প্রচার অভিযানের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
কে এই জ্যোতি মালহোত্রা?
জ্যোতি মালহোত্রা একজন বিখ্যাত ভ্রমণ ব্লগার, যাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষাধিক অনুসারী রয়েছে। তাঁর ইউটিউব চ্যানেল 'ট্র্যাভেল উইথ জো' বিশেষভাবে একক ভ্রমণ, ব্লগিং এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণগুলির উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। তিনি মূলত হরিয়ানার বাসিন্দা এবং ৩৩ বছর বয়সে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের মধ্যে গণ্য হতেন। কিন্তু সম্প্রতি, গুপ্তচরবৃত্তির গুরুতর অভিযোগের কারণে তাঁর পরিচিতি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
RTI-এ চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
সম্প্রতি একটি RTI থেকে জানা গেছে যে জ্যোতি মালহোত্রাকে কেরল সরকার তাদের সরকারি পর্যটন প্রচার কর্মসূচির অধীনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই অভিযানে জ্যোতির ভ্রমণ, বাসস্থান, খাওয়া এবং স্থানীয় ভ্রমণের সমস্ত খরচ রাজ্য সরকার বহন করেছে।
তথ্য অনুসারে, এই ভ্রমণটি ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে হয়েছিল। এই সময়ে জ্যোতি কেরলের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কান্নুর, কোঝিকোড়, কোচি, আলাপ্পুঝা এবং মুন্নার ভ্রমণ করেছিলেন।
পর্যটন অভিযানের উদ্দেশ্য কী ছিল?
কেরল পর্যটন বিভাগের এই অভিযান সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালীদের মাধ্যমে রাজ্যকে একটি প্রধান ডিজিটাল পর্যটন গন্তব্য হিসাবে প্রচার করার জন্য শুরু করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, যাদের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে, তাঁরা তাঁদের কনটেন্টের মাধ্যমে কেরলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সংস্কৃতি এবং বৈচিত্র্যকে বিশ্ব মঞ্চে প্রচার করবে।
জ্যোতি মালহোত্রা এই প্রোগ্রামের অংশ ছিলেন এবং তিনি কেরলে ঘুরে বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করেছিলেন, যা ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামে খুব ভাইরাল হয়েছিল।
পাকিস্তান-এর সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ
অন্যদিকে, জ্যোতি এখন এমন একটি গুরুতর মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন, যা এই সরকারি উদ্যোগকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাকিস্তান-এর জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন। তদন্ত সংস্থার মতে, তিনি বেশ কয়েকবার পাকিস্তান গিয়েছিলেন এবং সেখানকার গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। একটি প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে যে তিনি পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন, যাকে পরে ভারত সরকার বহিষ্কার করে।
গুপ্তচর নেটওয়ার্কের অংশ ছিলেন জ্যোতি?
জ্যোতি মালহোত্রা তাঁদের মধ্যে একজন, যাঁকে সম্প্রতি পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশে ধরা পড়া একটি বড় গুপ্তচর নেটওয়ার্কের অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নেটওয়ার্কটি ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালীদের লক্ষ্য করে তাঁদের কাছ থেকে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ।
NIA এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জ্যোতির ইউটিউব চ্যানেল 'ট্র্যাভেল উইথ জো'-এরও তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তের মূল বিষয় হল, তিনি ভ্রমণের ছলে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন কিনা এবং এই ভ্রমণটি পাকিস্তানের নির্দেশে হয়েছিল কিনা।
কেরল সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
কেরল সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযানে অন্তর্ভুক্ত করে ভ্রমণের খরচ বহন করা বর্তমানে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এমন একজন ব্যক্তিকে কীভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলো, যাঁর ব্যাকগ্রাউন্ডের উপযুক্ত তদন্ত করা হয়নি। অভিযোগের পর পর্যটন বিভাগের কর্মকর্তারা এখনও কোনও সর্বজনীন বিবৃতি দেননি। RTI-এর নথিগুলি থেকে জানা যায় যে অভিযানের জন্য আমন্ত্রণ এবং সমস্ত ব্যবস্থা সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমেই হয়েছিল।