ভারত তার বিমানবাহিনীর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এখন পঞ্চম প্রজন্মের সুপার অ্যাডভান্সড ফাইটার জেট কেনার দিকে গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বর্তমান আলোচনায় রাশিয়ার Su-57 এবং আমেরিকার F-35 দুটি প্রধান বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর শক্তিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে দেশ এখন পঞ্চম প্রজন্মের সুপার ফাইটার জেট কেনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়ার Su-57 এবং আমেরিকার F-35 দুটি এমন বিকল্প, যেগুলি নিয়ে সরকার এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। গত শনিবার প্রতিরক্ষা সচিব আর.কে. সিং এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভারত এখন হাই-টেক ফাইটার জেট কেনার বিষয়ে সিরিয়াস।
চীন-পাকিস্তানের বিমান হামলার জবাবের প্রস্তুতি
ভারতের বিমানবাহিনী এই মুহূর্তে প্রায় ৩০টি স্কোয়াড্রন নিয়ে কাজ করছে, যেখানে প্রয়োজন ৪২টি স্কোয়াড্রনের। অন্যদিকে, চীনের কাছে জে-২০-এর মতো স্টিলথ ফাইটার রয়েছে, যেখানে পাকিস্তান চীন ও তুরস্ক থেকে উন্নত প্রযুক্তি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের একটি শক্তিশালী এবং আধুনিক বিকল্পের প্রয়োজন, যা আগামী এক দশক পর্যন্ত দেশের আকাশ সুরক্ষার মেরুদণ্ড হতে পারে।
রাশিয়া বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে, Su-57-এর সাথে বড় প্রস্তাব
রাশিয়া ভারতকে Su-57 ফাইটার জেট-এর প্রস্তাব দিয়েছে। এটি একটি টুইন ইঞ্জিন, মাল্টি রোল স্টিলথ জেট, যা আকাশ থেকে আকাশে, আকাশ থেকে ভূমিতে এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধে দক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাশিয়া এই প্রস্তাবের সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তর, 'মেক ইন ইন্ডিয়া' এবং এমনকি সোর্স কোড শেয়ার করার প্রস্তাবও দিয়েছে। এছাড়াও রাশিয়া ভারতের AMCA প্রোগ্রামে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছে।
আমেরিকার F-35-ও শক্তিশালী দাবিদার
অন্যদিকে, আমেরিকা ভারতকে F-35 ফাইটার জেট অফার করেছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক স্টিলথ ফাইটার হিসেবে বিবেচিত হয়। F-35-এর একক ইঞ্জিন ডিজাইন, স্টিলথ ক্ষমতা এবং মাল্টি মিশন পারফরম্যান্স এটিকে বিশেষ করে তোলে। আমেরিকা থেকে ভারতকে কোনো প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি, তবে কৌশলগত সহযোগিতার দিকে এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
Su-57 বনাম F-35: বৈশিষ্ট্য এবং শক্তির তুলনা
Su-57 একটি ভারী টুইন ইঞ্জিন ফাইটার, যা রাশিয়ার টি-50 প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এর সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২-এর বেশি এবং এটি দীর্ঘ দূরত্বে আঘাত হানতে পারে। এর বিশেষত্ব হল এটি মাল্টি ফ্রন্টে কাজ করতে পারে, অর্থাৎ একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যে হামলা করতে পারে।
F-35-এর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব এর স্টিলথ ডিজাইনের উপর দেওয়া হয়। এটি শত্রুর রাডারকে ফাঁকি দিয়ে আক্রমণ করতে পারে। এর অ্যাভিওনিক্স এবং সেন্সর প্রযুক্তি খুব উন্নত বলে মনে করা হয়। এটি নেট-ওয়ার্কড ওয়ারফেয়ারের জন্যও উপযুক্ত, অর্থাৎ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে।
ভারতের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে না
ফাইটার জেট-এর নির্বাচন কেবল প্রযুক্তির ভিত্তিতে করা যায় না। এটি একটি বড় কূটনৈতিক এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত হবে। রাশিয়া ও ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বহু পুরনো এবং ভারতের প্রায় ৬০ শতাংশ সামরিক চাহিদা আজও রাশিয়া থেকে পূরণ হয়।
অন্যদিকে, আমেরিকার সঙ্গে গত এক দশকে কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব বেশ দ্রুত বেড়েছে। ভারত আমেরিকার সঙ্গে লজিস্টিক সাপোর্ট এগ্রিমেন্ট থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। তাই ভারতের সামনে এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি এবং কৌশল, উভয় দিক বিবেচনা করে নিতে হবে।
আসন্ন মাসগুলিতে বড় ঘোষণা হতে পারে
রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির সফরের সময় Su-57 নিয়ে কোনো ठोस প্রস্তাবের বিষয়ে सहमति আসতে পারে। অন্যদিকে, আমেরিকার তরফ থেকে F-35 নিয়ে কোনো সরাসরি চুক্তি সামনে আসেনি, তবে গোপন আলোচনার খবর শোনা যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অবস্থান আপাতত নিরপেক্ষ বলে জানা গেছে।