শ্রাবণ মাসের পবিত্র সময়ে ভগবান বিষ্ণুর কল্কি অবতারের পূজা করার বিশেষ দিনটি আসে, যা কল্কি জয়ন্তী নামে পরিচিত। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনেই ভগবান বিষ্ণু কল্কি রূপে আবির্ভূত হওয়ার সংকল্প করেছিলেন। এই বছর ২০২৫ সালে কল্কি জয়ন্তী ৩০ জুলাই, বুধবার পালিত হবে।
তিথি ও মুহুর্তের তথ্য
হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, কল্কি জয়ন্তীর ষষ্ঠী তিথি ৩০ জুলাই রাত ১২টা ৪৬ মিনিটে শুরু হয়ে ৩১ জুলাই রাত ২টা ৪১ মিনিটে শেষ হবে। এই সময়ে পূজার শুভ মুহুর্ত বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এই সময়ে ভগবান বিষ্ণুর কল্কি অবতারের বিশেষ আরাধনা করা হয়।
কে এই ভগবান কল্কি?
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, ভগবান বিষ্ণু এ পর্যন্ত নয়টি অবতার নিয়েছেন এবং তাঁর দশম অবতার কলিযুগের শেষে কল্কি রূপে হবে। কল্কি অবতারকে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ন্যায়পরায়ণ বলে মনে করা হয়। কথিত আছে যে তিনি পাপীদের ধ্বংস করে ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। কল্কিকে পুরাণে সাদা ঘোড়ায় восседания, হাতে তলোয়ার ধারণ করা অবস্থায় বর্ণনা করা হয়েছে।
কীভাবে পূজা করবেন: পূজার বিধি জেনে নিন
কল্কি জয়ন্তীর দিনে ভক্তরা বিশেষ পূজা-বিধি অনুসরণ করেন। এই দিনে উপবাস রাখা, মন্ত্র জপ করা এবং ভগবানকে ভোগ নিবেদন করা শুভ বলে মনে করা হয়। পূজার প্রস্তুতি ব্রাহ্ম মুহূর্ত থেকেই শুরু হয়ে যায়।
- সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে স্নান করুন এবং ব্রতের সংকল্প নিন।
- ঘর এবং পূজার স্থান গঙ্গাজল বা পরিষ্কার জল দিয়ে শুদ্ধ করুন।
- হলুদ বা সাদা পোশাক পরুন।
- পূজা চৌকিতে ভগবান বিষ্ণু ও কল্কির মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন।
- ভগবানকে পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করান।
- পরিষ্কার বস্ত্র পরিয়ে চন্দন, হলুদ ও অক্ষত অর্পণ করুন।
- তুলসী পাতা ও হলুদ ফুল নিবেদন করুন।
- ধূপ-দীপ জ্বালান এবং ভগবানের আরতি করুন।
- ভোগে ফল, মিষ্টি, পঞ্চামৃত এবং ছাপ্পান্ন ভোগ অর্পণ করা হয়।
- "ওঁ কল্কিনে নমঃ" মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করুন।
- বিষ্ণু সহস্রনাম ও কল্কি স্তোত্র পাঠ করুন।
মন্দিরে হয় বিশেষ প্রস্তুতি
কল্কি জয়ন্তী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন বিষ্ণু মন্দিরে বিশেষ আয়োজন করা হয়। অনেক স্থানে কল্কি পুরাণ পাঠ, কল্কি অবতারের উপর ভিত্তি করে प्रवचन, ছাপ্পান্ন ভোগ, ভান্ডারা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং দক্ষিণ ভারতের অনেক মন্দিরে এই দিনে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হয়ে सामूहिक ভাবে পূজা করেন। কিছু জায়গায় ভগবান কল্কির झांकीও বের করা হয়।
ভক্তরা উপবাস রাখেন এবং পারায়ণ করেন
কল্কি জয়ন্তীতে ভক্তরা উপবাস রাখেন এবং পরের দিন পারণ করেন। ব্রততে সাত্ত্বিক খাবার খাওয়া হয় এবং সারাদিন ভগবানের ভক্তিতে সময় কাটানো হয়। মহিলারা কল্কি অবতারের কাহিনী শোনেন এবং বাড়িতে কল্কি স্তোত্র পাঠ করেন।
কল্কি অবতারের মাহাত্ম্য পুরাণে
পুরাণে বর্ণিত আছে যে কলিযুগে যখন অধর্ম ও अन्याय চরম সীমায় পৌঁছাবে, তখন ভগবান বিষ্ণু কল্কি রূপে प्रकट হবেন। এই অবতার অন্য সব অবতার থেকে আলাদা, কারণ এর আগমন এখনও হয়নি, ভবিষ্যতে হবে।
শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণে কল্কি অবতারের উল্লেখ विस्तारित ভাবে করা হয়েছে। তাতে এও বলা হয়েছে যে কল্কি নিজের হাতে তলোয়ার নিয়ে অধর্মের বিনাশ করবেন এবং এক নতুন সত্যযুগের শুরু করবেন।
কোথায় কোথায় কল্কি জয়ন্তী বিশেষভাবে পালিত হয়
উত্তর প্রদেশের बलिया, বারাণসী, প্রয়াগরাজ, মথুরা এবং বৃন্দাবনে কল্কি জয়ন্তী धूमधाम করে পালিত হয়। वहीं দক্ষিণ ভারতে অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকের অনেক অংশে এই দিনে বিষ্ণু মন্দিরগুলোতে বিশেষ পূজা হয়।
দিল্লি, মুম্বাই, ইন্দোর, আহমেদাবাদ এবং জয়পুরের মতো শহরগুলোর অনেক ধর্মীয় সংগঠন এই দিনে कथा, पूजन ও भजन সন্ধ্যার আয়োজন করে।