এই বছর করবা চৌথ 2025 সালের 10 অক্টোবর, শুক্রবার পালিত হচ্ছে, যা জ্যোতিষশাস্ত্রের দিক থেকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। শুক্রবার দিনটি শুক্র গ্রহের, যা প্রেম, সৌন্দর্য এবং দাম্পত্য সুখের প্রতীক। এমন পরিস্থিতিতে, এই বারের করবা চৌথ বৈবাহিক জীবনে মাধুর্য ও আকর্ষণ বাড়ানোর একটি বিশেষ যোগ নিয়ে এসেছে।
করবা চৌথ 2025: দেশজুড়ে 10 অক্টোবর, শুক্রবার বিবাহিত মহিলারা করবা চৌথের ব্রত রাখছেন। এই বছরের করবা চৌথ জ্যোতিষশাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ কারণ এটি শুক্রবারে পড়ছে, যা শুক্র গ্রহের দিন। শুক্রকে প্রেম, আকর্ষণ এবং সমৃদ্ধির কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অসাধারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ বিবাহিত জীবনে সামঞ্জস্য, রোম্যান্স এবং ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করবে। মহিলারা সারা দিন নির্জলা উপবাস করে চন্দ্রোদয়ের সময় পূজা-অর্চনা করবেন এবং স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করবেন।
জ্যোতিষশাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুভ যোগ
হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, এই বছর করবা চৌথ কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হচ্ছে। জ্যোতিষীদের মতে, যখন করবা চৌথ শুক্রবারের দিনে আসে, তখন এর ফল বহুগুণ বেড়ে যায়। এর কারণ হল শুক্রবারের অধিপতি শুক্র গ্রহ, যাকে প্রেম, সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধির কারণ হিসাবে ধরা হয়।
জ্যোতিষাচার্য অনীশ ব্যাস বলেন, শুক্রবারের দিন দাম্পত্য জীবনে প্রেম এবং আকর্ষণের প্রতীক। এই দিনে করবা চৌথ পড়া স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আরও বেশি সামঞ্জস্য, ঘনিষ্ঠতা এবং রোম্যান্স নিয়ে আসে। শুক্র গ্রহের প্রভাবে সৌন্দর্য, মানসিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বৈবাহিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।
করবা চৌথের ধর্মীয় গুরুত্ব
করবা চৌথের উৎসব ভারতের উত্তর, পশ্চিম এবং মধ্য অঞ্চলে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও উৎসাহের সাথে পালিত হয়। বিবাহিত মহিলারা সূর্যোদয়ের আগে উঠে সারগি গ্রহণ করেন এবং সারাদিন নির্জলা উপবাস রাখেন। এই ব্রত স্বামীর দীর্ঘায়ু, সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য উৎসর্গীকৃত।
সন্ধ্যায় মহিলারা মা গৌরী এবং ভগবান শিবের পূজা করেন। এরপর চন্দ্রোদয়ের সময় চন্দ্রকে অর্ঘ্য নিবেদন করে ব্রত ভঙ্গ করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, যে মহিলারা সম্পূর্ণ বিধি-বিধান মেনে এই ব্রত পালন করেন, তাঁরা অখণ্ড সৌভাগ্য এবং সুখী দাম্পত্য জীবনের আশীর্বাদ পান।
প্রেম এবং সৌন্দর্যের মিলন
শুক্রবার করবা চৌথ পড়ার সবচেয়ে বড় জ্যোতিষশাস্ত্রীয় গুরুত্ব হল যে শুক্র গ্রহকে প্রেম এবং সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। শুক্রকেই রোম্যান্স, আকর্ষণ, শিল্প, ঐশ্বর্য এবং সংবেদনশীলতার অধিপতি বলা হয়েছে।
জ্যোতিষীরা জানান যে, যখন করবা চৌথের মতো সৌভাগ্য সম্পর্কিত উৎসব শুক্রবারে পালিত হয়, তখন এই যোগ দাম্পত্য জীবনে নতুন শক্তি নিয়ে আসে। শুক্র এবং চন্দ্র উভয় গ্রহই অনুভূতির সাথে জড়িত, তাই এদের মিলন প্রেম এবং ভারসাম্যের একটি আশ্চর্যজনক যোগ তৈরি করে।
শুক্রবার পালিত এই ব্রত শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানের শক্তি অনুসারেও এটি উপকারী বলে মনে করা হয়। এই দিনে করা ব্রত এবং পূজা সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়, পুরনো মতভেদ দূর করে এবং বৈবাহিক জীবনে স্থিতিশীলতা আনে।
করবা চৌথ এবং চন্দ্রের বিশেষ সম্পর্ক
করবা চৌথে চন্দ্রের পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মহিলারা সারাদিন ব্রত রাখার পর রাতে চন্দ্রোদয়ের জন্য অপেক্ষা করেন। চাঁদ উঠলে, তাঁরা চালুনির মাধ্যমে প্রথমে চন্দ্রকে দেখেন এবং তারপর স্বামীকে দেখে ব্রত ভঙ্গ করেন।
এই ঐতিহ্য কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং মানসিক বন্ধনেরও প্রতীক। চন্দ্রকে শীতলতা, শান্তি এবং মানসিক স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। অন্যদিকে শুক্র অনুভূতি এবং প্রেমের প্রতিনিধিত্ব করে। এইবার করবা চৌথের দিনে এই দুটি গ্রহের মিলন একটি অসাধারণ জ্যোতিষশাস্ত্রীয় সমন্বয় তৈরি করছে, যা দাম্পত্য জীবনে প্রেম, রোম্যান্স এবং সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করবে বলে মনে করা হয়।
কীভাবে করবেন করবা চৌথের পূজা
পণ্ডিতদের মতে, করবা চৌথের পূজা সন্ধ্যায় চন্দ্রোদয়ের আগে করা হয়। মহিলারা ষোল শৃঙ্গার করেন, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন এবং পূজার জন্য থালা সাজান। থালায় করবা (জল ভরা মাটির কলসি), প্রদীপ, চন্দন, রোলি, অক্ষত, মিষ্টি এবং চালুনী রাখা হয়।
পূজার সময় মা গৌরী, ভগবান শিব, কার্তিকেয় এবং গণেশ জির পূজা করা হয়। এরপর গল্প শোনানো হয়। মহিলারা নিজেদের মধ্যে গল্প বিনিময় করেন এবং স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
যখন চাঁদ ওঠে, তখন মহিলারা চন্দ্রকে অর্ঘ্য নিবেদন করে, চালুনী দিয়ে প্রথমে চন্দ্রকে এবং তারপর স্বামীকে দেখে ব্রত ভঙ্গ করেন। এই দৃশ্য প্রতি বছর করবা চৌথের রাতকে সবচেয়ে আবেগঘন এবং সুন্দর করে তোলে।
এই করবা চৌথে কী পরবেন এবং কী করবেন
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, শুক্রবার করবা চৌথ পড়ার কারণে এই দিনে গোলাপী, সাদা বা হালকা লাল রঙের পোশাক পরা শুভ হবে। এই রংগুলি শুক্র গ্রহের প্রিয় বলে মনে করা হয় এবং সৌভাগ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
এই দিনে মা গৌরীর পূজা অবশ্যই করা উচিত। এমনটা করলে বৈবাহিক জীবনে স্থিতিশীলতা এবং পারিবারিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি শুক্র গ্রহের শান্তির জন্য রূপা দান, সাদা বস্ত্র বা সাদা মিষ্টি (যেমন রসগোল্লা বা ক্ষীর) বিতরণও ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়।
জ্যোতিষশাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুভ ফল
এই বছরের করবা চৌথ কেবল ধর্মীয় নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত বিশেষ বলে বিবেচিত হয়েছে। শুক্রবার পালিত এই উৎসবটি এমন একটি দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন চন্দ্র এবং শুক্রের মিলন মানসিক স্থিতিশীলতা এবং রোমান্টিক শক্তির একটি সঙ্গম তৈরি করবে।
জ্যোতিষাচার্য অনীশ ব্যাস বলেন, করবা চৌথের দিনে চন্দ্র ও শুক্রের যোগ প্রেম, সৌন্দর্য এবং দাম্পত্য সুখ বৃদ্ধি করবে। যে দম্পতিদের মধ্যে কোনো কারণে দূরত্ব বা মতবিরোধ আছে, তাদের সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনাও বাড়বে। এই সময় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক গুরুত্ব
করবা চৌথ কেবল একটি ধর্মীয় ব্রত নয়, বরং ভারতীয় নারীর নিষ্ঠা এবং প্রেমের প্রতীক। পরিবর্তিত সময়েও এই উৎসব মহিলাদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছে। আধুনিক যুগে যেখানে অনেক ঐতিহ্য পরিবর্তিত হচ্ছে, সেখানে করবা চৌথ আজও আত্মত্যাগ এবং সম্পর্কের গভীর অনুভূতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
এই দিনের রাত, যখন মহিলারা সেজেগুজে বারান্দা বা ছাদে চালুনী দিয়ে চাঁদ এবং তাদের স্বামীকে দেখেন, সেই মুহূর্তটি কেবল ঐতিহ্য নয় বরং প্রেমের এক জীবন্ত দৃশ্য। এই কারণেই করবা চৌথ আজও প্রতিটি বয়স এবং প্রতিটি প্রজন্মের মহিলাদের জন্য ততটাই বিশেষ রয়ে গেছে।