কসবা কাণ্ডে নয়া মোড় তদন্তে উঠে এল রক্তের দাগ কলেজ চত্বরে আরও চাঞ্চল্য

কসবা কাণ্ডে নয়া মোড় তদন্তে উঠে এল রক্তের দাগ কলেজ চত্বরে আরও চাঞ্চল্য

তদন্তে গতি, কারাগারে বন্দি মনোজিৎ মিশ্র ও সঙ্গীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহে তৎপর পুলিশ

কসবা আইন কলেজে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে গোটা রাজ্য যখন ক্ষুব্ধ, ঠিক তখনই তদন্তে নয়া মোড়। অভিযোগকারিণী ছাত্রীর বয়ানকে কেন্দ্র করে লালবাজারের তদন্তকারীরা দ্রুত এগিয়ে চলেছেন। মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ও তার সহযোগীরা বর্তমানে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে। কিন্তু তদন্তে থেমে নেই পুলিশ। অভিযুক্তদের গতিবিধি, আর্থিক লেনদেন, ফরেন্সিক তথ্য সবই উঠে আসছে একে একে।

ফরেন্সিক রিপোর্টে উঠে এল মোবাইল ফোনের তথ্য, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও নজর তদন্তকারীদের

ঘটনার পর বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল চারটি মোবাইল। সেইসব মোবাইলের ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে এসেছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের। রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে মনোজিৎ ও তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনো আর্থিক লেনদেন বা চক্রান্তের ছাপ রয়েছে কি না, তার খতিয়ান তলব করা হয়েছে। তদন্তে উঠে আসা প্রতিটি তথ্য পর্যালোচনা করে অপরাধের পিছনে থাকা পরিকল্পনা ধরতে মরিয়া পুলিশ।

কারাগারে অভিযুক্তদের গেট প্যাটার্ন টেস্ট, মিলিয়ে দেখা হবে সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে

বুধবার এক বিশেষ পদক্ষেপ নেয় তদন্তকারী দল। তারা পৌঁছে যায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে। অভিযুক্তদের হাঁটা-চলার ধরন পরীক্ষার জন্য 'গেট প্যাটার্ন টেস্ট' করা হয়। তদন্তকারীরা এর আগেই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন, যাতে চার অভিযুক্তের গতিবিধি ধরা পড়েছে। সেই ফুটেজের সঙ্গে সংশোধনাগারে অভিযুক্তদের শরীরী ভাষা, গেট মিলিয়ে দেখার কাজ চলছে। উদ্দেশ্য একটাই—ঘটনাস্থলে অভিযুক্তদের উপস্থিতি সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করা।

কলেজ চত্বরে রক্তের দাগ, দুই জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহে চাঞ্চল্য

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে কলেজ ক্যাম্পাস থেকেই। তদন্তে নেমে পুলিশ রক্তের দাগ খুঁজে পেয়েছে দুটি স্থানে। প্রথমটি, কলেজের ইউনিয়ন রুমের মেঝেতে। দ্বিতীয়টি, গার্ড রুমে থাকা একটি হলুদ রঙের বেডশিটে বা চাদরে। এই রক্তের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই নমুনা নিঃসন্দেহে ঘটনার ভয়াবহতা ও অভিযোগকারিণীর দাবি কতটা সত্য, তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণে সাহায্য করতে পারে।

চাদর ও মেঝেতে রক্তের উপস্থিতি, নির্যাতনের পরিণতি আরও স্পষ্ট হচ্ছে তদন্তে

গোটা ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সরব রাজ্যবাসী। এদিকে রক্তের দাগ পাওয়ায় নির্যাতিতা ছাত্রীর অভিযোগ আরও জোরদার হচ্ছে। পুলিশের একাংশের মতে, এই রক্ত হয়তো নির্যাতনের সময়ের বা ঘটনার পর কোনও শারীরিক আঘাতের ফল। তা ছাড়া বেডশিট ও মেঝের অবস্থান বিচার করলে, নির্যাতনের সময় ছাত্রীর অবস্থা কী ভয়াবহ ছিল, তা অনুমান করাই যায়। তদন্তের অগ্রগতি প্রমাণ করছে, পুলিশ কোনওকিছু গোপন না রেখে যথাযথভাবে কাজ করে চলেছে।

চাপের মুখে কলেজ কর্তৃপক্ষ, মুখ খুলছে একের পর এক ছাত্রছাত্রী

এই ঘটনার পর থেকে কসবা আইন কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষক এবং কর্মীদের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন, আগের দিকেও নাকি মনোজিৎ মিশ্রর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু সেগুলি চেপে দেওয়া হয়েছিল কলেজের 'অভ্যন্তরীণ প্রভাব'-এর জেরে। এবার সেইসব চাপা সত্যই একে একে সামনে আসছে।

সমাজের প্রশ্ন—একটি শিক্ষাঙ্গন কীভাবে হয়ে উঠল নিপীড়নের স্থান?

একটি আইন কলেজ, যেখানে ন্যায়ের শিক্ষা দেওয়া হয়, সেই জায়গায় কীভাবে এমন বর্বরতা সম্ভব? অভিযুক্তর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এই দাবিতে ছাত্রমহল থেকে সাধারণ নাগরিক, সকলে সোচ্চার। পুলিশের হাতে রক্তের প্রমাণ আসায় এবার অভিযুক্তদের সাজা নিশ্চিত বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে সমাজের মনেই বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এতদিন কীভাবে চোখ বুজে ছিল কর্তৃপক্ষ?

Leave a comment