কেওটি বিধানসভা আসন: মধুবাণী লোকসভার অংশ, এই হাইভোল্টেজ আসনে BJP বনাম RJD-র লড়াই, ২০২৫-এর আগে জেনে নিন ইতিহাস

কেওটি বিধানসভা আসন: মধুবাণী লোকসভার অংশ, এই হাইভোল্টেজ আসনে BJP বনাম RJD-র লড়াই, ২০২৫-এর আগে জেনে নিন ইতিহাস

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫ যত এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক তত্পরতা তত বাড়ছে। রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে একটি, কেওটি বিধানসভা আসন (নম্বর ৮৬), বরাবরই আলোচনায় থেকেছে। 

কেওটি: বিহার বিধানসভার ২৪৩টি আসনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা, যার ক্রমিক নম্বর ৮৬। এই আসনটি সাধারণ শ্রেণীর এবং তফসিলি জাতি বা উপজাতির জন্য সংরক্ষিত নয়। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই এলাকাটি রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD), জনতা দল ইউনাইটেড (JDU), ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) এবং কংগ্রেসের মতো প্রধান দলগুলির প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

কেওটি বিধানসভা ক্ষেত্রটি মধুবাণী লোকসভা ক্ষেত্রের অন্তর্গত। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মুরারি মোহন ঝা আরজেডির বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকীকে ৫,১২৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়লাভ করেছিলেন। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী অশোক কুমার যাদব আরজেডির মহম্মদ আলি আশরাফ ফাতিমিকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে ১,৫১,৯৪৫ ভোটের ব্যবধানে মধুবাণী লোকসভা আসনটি নিজেদের করে নেন।

কেওটি বিধানসভা: মধুবাণী লোকসভা ক্ষেত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ

কেওটি বিধানসভা আসনটি মধুবাণী লোকসভা ক্ষেত্রের অন্তর্গত। মধুবাণীকে মিথিলা অঞ্চলের রাজনৈতিক দুর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এখানকার প্রবণতা রাজ্যের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে। এই অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD), ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP), জনতা দল ইউনাইটেড (JDU) এবং কংগ্রেসের ঐতিহ্যবাহী প্রভাব রয়েছে।

২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচন: বিজেপির জয়

২০২০ সালের নির্বাচনে বিজেপির মুরারি মোহন ঝা আরজেডির প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুল বারি সিদ্দিকীকে পরাজিত করে এই আসনটি নিজেদের নামে করেন।

  • মুরারি মোহন ঝা পেয়েছিলেন ৭৬,৩৭২ ভোট।
  • আব্দুল বারি সিদ্দিকী পেয়েছিলেন ৭১,২৪৬ ভোট।
  • জয়ের ব্যবধান ছিল ৫,১২৬ ভোট।

এই নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী যোগেশ রঞ্জন ৩,৩০৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।

২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচন: আরজেডির পাল্লা ভারী

২০১৫ সালের নির্বাচনে আরজেডির প্রার্থী ফারাজ ফাতমি এই আসনটি জিতেছিলেন।

  • ফারাজ ফাতমি পেয়েছিলেন ৬৮,৬০৯ ভোট।
  • বিজেপির অশোক কুমার যাদব পেয়েছিলেন ৬০,৭৭৯ ভোট।
  • জয়ের ব্যবধান ছিল ৭,৮৩০ ভোট।

এই নির্বাচন মহাজোট বনাম এনডিএ-র রূপে লড়া হয়েছিল এবং ফলাফল সেই সময় রাজ্যের ক্ষমতা পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

২০১০ সালের পূর্বের ইতিহাস: বিজেপি ও আরজেডির আধিপত্য

কেওটি আসনে বিজেপি এবং আরজেডির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে।

  • ২০১০: অশোক কুমার যাদব (বিজেপি) জয়লাভ করেন।
  • ২০০৫ (ফেব্রুয়ারি ও অক্টোবর): অশোক কুমার যাদব (বিজেপি) বিজয়ী হন।
  • ২০০০: গোলাম সরোয়ার (আরজেডি) জয়লাভ করেন।
  • ১৯৯৫ এবং ১৯৯০: গোলাম সরোয়ার (জনতা দল) টানা জয়লাভ করেন।
  • ১৯৮৫: কালিম আহমেদ (কংগ্রেস) জয়লাভ করেন।
  • ১৯৮০: শমায়েলে নবী (কংগ্রেস) বিজয়ী হন।
  • ১৯৭৭: দুর্গাদাস ঠাকুর (জনতা পার্টি) এই আসনটি নিজেদের নামে করেন।

এই ইতিহাস বলে যে, এই আসনটি একসময় কংগ্রেসের দখলে ছিল, কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকে বিজেপি এবং আরজেডির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন: বিজেপির বড় জয়

মধুবাণী লোকসভা ক্ষেত্র, যার অধীনে কেওটি আসনটি পড়ে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ঝুলিতে যায়। বিজেপি প্রার্থী অশোক কুমার যাদব আরজেডির মহম্মদ আলি আশরাফ ফাতিমিকে পরাজিত করেন এবং জয়ের ব্যবধান ছিল ১,৫১,৯৪৫ ভোট। এই ফলাফল স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে এই অঞ্চলে বিজেপির জনসমর্থন শক্তিশালী। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় কেওটিতে মোট ২,৮৯,৬২৬ ভোটার নথিভুক্ত ছিলেন।

  • পুরুষ ভোটার: ১,৫৪,৪৯৪
  • মহিলা ভোটার: ১,৩৫,১২৩
  • তৃতীয় লিঙ্গ: ৯

এছাড়াও, ৪৩০টি ডাক ভোট এবং ২৪৫ জন পরিষেবা ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৫ সালের তুলনায় ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২৩,০০০ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই পরিসংখ্যান বলে যে, নতুন ভোটারদের ভোট কার পক্ষে যাবে, তা ২০২৫ সালের নির্বাচনে নির্ণায়ক প্রমাণিত হতে পারে।

Leave a comment