লাদাখের আমূল পরিবর্তন: ৫ বছরে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও আত্মনির্ভরতায় নতুন দিগন্ত

লাদাখের আমূল পরিবর্তন: ৫ বছরে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও আত্মনির্ভরতায় নতুন দিগন্ত
সর্বশেষ আপডেট: 1 ঘণ্টা আগে

গত পাঁচ বছরে লাদাখের চিত্র সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে। প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। ভারতনেট প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৩টি পঞ্চায়েত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়েছে এবং ১৭৫টি নতুন মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। শ্রীনগর-লেহ ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থায়ী হয়েছে। সৌর প্রকল্প, MSME এবং কর্মসংস্থান প্রকল্পগুলি আত্মনির্ভরতা ও উন্নয়নের নতুন দিক দিয়েছে। 

লাদাখের উন্নয়ন: লাদাখ, যা একসময় যোগাযোগ এবং বিদ্যুতের গুরুতর সমস্যায় জর্জরিত ছিল, এখন দ্রুত ডিজিটাল এবং আত্মনির্ভর ভারতের পথে এগিয়ে চলেছে। মোদী সরকারের প্রকল্পগুলির মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। ভারতনেট প্রকল্পের অধীনে সমস্ত ১৯৩টি পঞ্চায়েতকে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করা হয়েছে এবং ১৭৫টি নতুন মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। একই সাথে, শ্রীনগর-লেহ ট্রান্সমিশন লাইন এবং নতুন সৌরশক্তি প্রকল্পগুলির মাধ্যমে স্থায়ী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্ভব হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসা, MSME এবং কর্মসংস্থান প্রকল্পগুলির মাধ্যমে ৫৪,০০০-এরও বেশি মানুষ কর্মসংস্থান পেয়েছে। এই পরিবর্তন লাদাখকে উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরতার এক নতুন মডেল তৈরি করছে।

প্রতিটি গ্রামে ইন্টারনেটের সুবিধা

কিছু সময় আগেও লাদাখের অনেক এলাকায় মোবাইল সিগন্যাল পাওয়া যেত না। মানুষ নিজেদেরকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে। ভারতনেট প্রকল্পের অধীনে লাদাখের সমস্ত ১৯৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে শিশুরা অনলাইনে পড়াশোনা করতে পারছে, মানুষ অনলাইন পরিষেবা ব্যবহার করছে এবং প্রশাসনিক কাজও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে।

এছাড়াও, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৭৫টি নতুন মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। এখন উঁচু পাহাড়ি এলাকা এবং সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতেও মোবাইল সিগন্যাল পৌঁছে গেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে অনেক সুবিধা এসেছে।

অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা

লাদাখে বিদ্যুতের সমস্যা সবচেয়ে বড় ছিল। শীতকালে যখন তুষারপাত হত, তখন গ্রামগুলি অন্ধকারে ডুবে থাকত। ২০১৯ সালে সরকার শ্রীনগর থেকে লেহ পর্যন্ত ৩৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ২২০ কিলোওয়াটের একটি ট্রান্সমিশন লাইন চালু করে। এই লাইনের কারণেই গত পাঁচ বছরে লাদাখ স্থায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে।

এখন নুব্রা এবং জাংস্কারের মতো দুর্গম এলাকাগুলিকেও এই বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার প্রস্তুতি চলছে। এর জন্য নতুন ২২০ কিলোওয়াটের লাইন তৈরি করা হচ্ছে। একই সাথে হিম্মায়া থেকে ন্যোমা এবং খারু থেকে দুরবুক পর্যন্ত ৬৬ কিলোওয়াটের লাইনও স্থাপন করা হচ্ছে। সরকার ফিয়াং থেকে ডিস্কিট (নুব্রা) এবং দ্রাস থেকে পাদুম (জাংস্কার) পর্যন্ত দুটি নতুন ট্রান্সমিশন লাইনও তৈরি করছে, যা আগামী বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে।

সৌরশক্তিতে আলোকিত হবে লাদাখ

লাদাখে সূর্যের আলো প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে এখানে সৌরশক্তিকে উৎসাহিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তারু এলাকায় একটি বড় সৌর প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। এতে ২৫ মেগাওয়াট এসি সোলার প্ল্যান্ট, ৫০ মেগাওয়াট পিক ক্ষমতা এবং ৪০ মেগাওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে।

এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে লাদাখ তার বিদ্যুতের চাহিদা নিজেরাই পূরণ করতে পারবে এবং দেশের বাকি অংশকেও সবুজ শক্তি সরবরাহ করতে পারবে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং পরিবেশেরও উপকার হবে।

ক্ষুদ্র ব্যবসার নতুন শক্তি

লাদাখে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা দ্রুত বাড়ছে। গত কয়েক বছরে এখানে ১৮,৫০০-এরও বেশি ব্যবসা নিবন্ধিত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৫৪,০০০ মানুষ কর্মসংস্থান পেয়েছে। সরকারের সাহায্যে সহজ ঋণ এবং প্রকল্পগুলির সুবিধা গ্রহণ করে মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছে।

প্রায় ১০,০০০ মানুষ খাদি গ্রামোদ্যোগ যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী রোজগার গ্যারান্টি কর্মসূচির অধীনে নিজেদের কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র তাদেরই কর্মসংস্থান হয়নি, বরং অন্যদেরও কাজ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার অধীনে লাদাখের ৪,০০০-এরও বেশি ঐতিহ্যবাহী কারিগরকে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ, টুলকিট এবং দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুরোনো কারুশিল্পগুলি পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে এবং স্থানীয় পরিচয় আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

পরিবর্তিত চিত্রের প্রভাব

লাদাখের মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সংযুক্ত অনুভব করছে। ইন্টারনেট এবং মোবাইল সুবিধার মাধ্যমে তারা বিশ্বের সাথে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুতের স্থায়ী ব্যবস্থা জীবনকে সহজ করেছে। অন্যদিকে, সৌরশক্তি প্রকল্প এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলি কর্মসংস্থান ও আত্মনির্ভরতার নতুন পথ খুলে দিয়েছে।

গত পাঁচ বছরে লাদাখের পরিচিতি শুধু সীমান্তবর্তী এবং দুর্গম এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এখন এটি ডিজিটাল, আলোকিত এবং আত্মনির্ভর ভারতের একটি শক্তিশালী অংশ হয়ে উঠেছে।

Leave a comment