কেরালা হাইকোর্ট মন্দিরের পুরোহিত নিয়োগে জাতি বা বংশভিত্তিক নির্বাচনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। আদালত বলেছে যে এখন নির্বাচন শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে, ঐতিহ্যবাহী জাতি-প্রথার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই।
কেরালা: কেরালা হাইকোর্ট (Kerala High Court) একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে মন্দিরের পুরোহিত (শাস্তি/পূজারী) নিয়োগে কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা বংশের হওয়া আবশ্যক নয়। আদালত ঐতিহ্যবাহী তন্ত্রী পরিবারের জাতি-ভিত্তিক নির্বাচনকে (Caste-Based Selection) অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে এবং স্পষ্ট করেছে যে এটিকে সংবিধানে প্রাপ্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার (Religious Freedom) অংশ হিসাবে গণ্য করা যাবে না।
তন্ত্রী সমাজমের আবেদন
আখিল কেরালা তন্ত্রী সমাজম এবং এর সভাপতি ইসানন নাম্বুদিরিপাদ ত্রাভাঙ্কোর দেবাস্বোম বোর্ড (TDB) এবং কেরালা দেবাস্বোম রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (KDRB)-এর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। সমাজম-এর বক্তব্য ছিল যে তন্ত্র বিদ্যালয়গুলি (Tantra Schools) থেকে শংসাপত্র (Certificate) দেওয়ার প্রক্রিয়া ঐতিহ্যবাহী তান্ত্রিক শিক্ষাকে দুর্বল করছে। আবেদনকারীরা দাবি করেছিল যে আগম ও তন্ত্র গ্রন্থ অনুসারে পুরোহিত নিয়োগ ধর্মীয় অনুশীলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটিকে সংবিধানের ২৫ ও ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুরক্ষা দেওয়া উচিত।
আদালত কী বলেছে
আদালত তান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে বলেছে যে পুরোহিত নিয়োগ মূলত একটি ধর্মনিরপেক্ষ (Secular) কাজ। আদালত জানিয়েছে যে আবেদনকারীরা বংশগত বিশেষাধিকার এবং জাতি-ভিত্তিক নিয়োগ বজায় রাখতে চায়। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা বংশ থেকে পুরোহিত নির্বাচন করা ধর্মীয় অনুশীলন, রীতি বা পূজার অপরিহার্য অংশ নয়।
তন্ত্র বিদ্যালয়গুলির প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি
আদালত তন্ত্র বিদ্যালয়গুলি থেকে প্রাপ্ত শংসাপত্রগুলির প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও কঠোর বলে উল্লেখ করেছে। পাঠ্যক্রম সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের দীক্ষা সমারোহ (Initiation Ceremony)-এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা মন্দিরে তাদের ভবিষ্যৎ কাজের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। চূড়ান্ত নির্বাচন মেধা (Merit)-এর ভিত্তিতে হয় এবং এতে বিদ্বান ও সুপরিচিত তন্ত্রীরা জড়িত থাকেন।
ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দাবি খারিজ
আদালত সমাজমের ধর্মীয় সম্প্রদায় (Religious Denomination) হওয়ার দাবিও খারিজ করে দিয়েছে। আদালত বলেছে যে সংস্থাটি কোনো পৃথক বিশ্বাস প্রদর্শন করেনি এবং কোনো সাংগঠনিক কাঠামোও উপস্থাপন করেনি, যা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মর্যাদা পাওয়ার জন্য অপরিহার্য।
আদালত আরও বলেছে যে সংবিধান পূর্ববর্তী কোনো প্রথা বা রীতি যদি মানবাধিকার, মর্যাদা বা সামাজিক সমতার (Social Equality) পরিপন্থী হয়, তাহলে তা আইনের মর্যাদা পেতে পারে না। জাতি বা বংশের ভিত্তিতে পুরোহিত নির্বাচনের দাবি এই ভিত্তিতেই অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে।