আরবিআই-এর সোনার ভান্ডার সর্বকালীন উচ্চতায়: ৮৮০.১৮ মেট্রিক টন

আরবিআই-এর সোনার ভান্ডার সর্বকালীন উচ্চতায়: ৮৮০.১৮ মেট্রিক টন

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর সোনার ভান্ডার সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ৮৮০.১৮ মেট্রিক টন সর্বকালীন উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই আরবিআই ২০০ কিলোগ্রাম সোনা কিনেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করে এর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।

সোনার ভান্ডার: উৎসবের মরসুমের সাথে সাথে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারেও সোনার ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে। আরবিআই-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট সোনার ভান্ডার ৮৮০.১৮ মেট্রিক টন হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্তর। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ২০০ কিলোগ্রাম সোনা যোগ করা হয়েছে, অন্যদিকে, চলতি আর্থিক বছরের প্রথমার্ধে মোট ৬০০ কিলোগ্রাম সোনা কেনা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আরবিআই সোনাকে একটি নিরাপদ ও কৌশলগত সম্পদ হিসাবে শক্তিশালী করছে।

সেপ্টেম্বরে সোনা কেনা

আরবিআই সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর শেষ পর্যন্ত তার ভান্ডারে মোট ৮৮০.১৮ মেট্রিক টন সোনা অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০ কিলোগ্রাম অর্থাৎ ০.২ মেট্রিক টন সোনা কিনেছে। এই পদক্ষেপ এমন সময়ে এসেছে যখন বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের সন্ধান করছেন এবং সোনা তাদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার চাহিদার এই বৃদ্ধি মার্কিন ডলারের শক্তি, আমেরিকা ও ইউরোপে সুদের হারের অনিশ্চয়তা এবং মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করেন।

প্রথমার্ধে মোট কেনাকাটা

২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে আরবিআই মোট ০.৬ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৬০০ কিলোগ্রাম সোনা কিনেছে। এর মধ্যে জুনে ৪০০ কিলোগ্রাম এবং সেপ্টেম্বরে ২০০ কিলোগ্রাম সোনা কেনা অন্তর্ভুক্ত। এইভাবে আরবিআই ধীরে ধীরে তার ভান্ডারকে শক্তিশালী করে সোনাকে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছে।

২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে আরবিআই মোট ৫৪.১৩ মেট্রিক টন সোনা কিনেছিল। এটি গত এক দশকে সোনার দ্রুততম বৃদ্ধি ছিল। যদিও এই বছরের কেনার গতি ধীর, তবুও এটি ইঙ্গিত দেয় যে আরবিআই তার ভান্ডারে সোনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং এটিকে আর্থিক সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলে মনে করে।

সোনার মূল্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত আরবিআই-এর সোনার মোট মূল্য প্রায় ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৭.৯ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই পরিসংখ্যানটি দেখায় যে সোনা কেবল একটি ভৌত সম্পদ নয়, বরং দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে সোনা কেনা আরবিআই-এর কৌশলগত চিন্তাভাবনার অংশ। এটি বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে বৈচিত্র্য দেয় এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক অস্থিরতার সময় এটি ভারতের জন্য একটি সুরক্ষামূলক ঢাল হিসাবে কাজ করে।

বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকগুলির ভূমিকা

আরবিআই ছাড়াও, ভারতীয় ব্যাংকগুলিও সোনা কেনার ক্ষেত্রে অংশ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির কেনাকাটা সোনার দাম বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করেছে।

বর্তমানে সোনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং লাভজনক বিকল্প হয়ে উঠেছে। দেশের আর্থিক নীতিগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সোনার ভান্ডার বাড়ানো কেবল আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে না, বরং বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসকেও বাড়িয়ে তোলে।

Leave a comment