রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ার বাস্তবতা

রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ার বাস্তবতা

কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তায় আজকাল চোখে পড়ছে বাসের অভাব। শহরের বিভিন্ন প্রধান রুটে দীর্ঘ সময় ধরে বাস কম চলাচল করছে, আর এতে সাধারণ যাত্রীর ভোগান্তি বেড়েছে। পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণ হল যাত্রীসংখ্যার পরিবর্তন। যেসব রুটে আগে সবসময় ভিড় থাকত, এখন সেগুলোতে ফাঁকা বসার আসনও দেখা যাচ্ছে। শহরের রুটিন যাত্রীদের জন্য এটি বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে।

পরিবহণমন্ত্রীর মন্তব্য

পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, “৬ থেকে ৮ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন মেট্রো ব্যবহার করছেন। এর ফলে বিপুল সংখ্যক যাত্রী বাস থেকে সরে যাচ্ছে। অনেক রুটে বাসের জ্বালানি খরচও উঠছে না, তাই বেসরকারি বাস সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম সীমিত করেছে।” তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, মেট্রোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাস সেবা সংকটের মধ্যে পড়েছে।

যাত্রী হারানো ও অর্থনৈতিক প্রভাব

পরিবহণমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেছেন, শহরের অনেক রুটে বাসের খরচ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, বেসরকারি সংস্থাগুলি যেসব রুটে তেমন লাভ করতে পারছে না, সেখানে তারা রুট বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে বাসের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, বিশেষ করে সেই যাত্রীদের জন্য যারা মেট্রো স্টেশনের কাছাকাছি থাকে না।

মেট্রোর প্রভাব

মেট্রোর যাত্রীসংখ্যা এত বেশি বেড়ে গেছে যে, প্রতিদিন প্রায় ৬-৮ লক্ষ মানুষ মেট্রো ব্যবহার করছে। স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানালেন, এ কারণেই বাসের যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে লোকজন বাসের পরিবর্তে মেট্রোকে বেছে নিচ্ছে। এতে শুধু যাত্রী সংখ্যা নয়, বাসচালকদের আয়ের ওপরও প্রভাব পড়ছে।

জ্বালানি ও রুট বন্ধের চ্যালেঞ্জ

বেসরকারি বাস সংস্থাগুলোর জন্য জ্বালানির খরচ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক রুটে ডीजেলের দাম বৃদ্ধির কারণে লাভের সুযোগ সীমিত। ফলে সংস্থাগুলি কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে বা সীমিত সংখ্যক বাস চালাচ্ছে। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “যেসব রুটে যাত্রী কম, সেখানে খরচ উঠছে না। তাই কিছু রুট বন্ধ হয়েছে।”

শহরের যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া

যাত্রীরা বলছেন, বাস কমে যাওয়ায় ভিড় এবং অপেক্ষার সময় বেড়েছে। সকাল ও সন্ধ্যার সময় বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিছু এলাকায় তো বাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা মেট্রো বা অটো ভাড়া ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। শহরের রুটিন যাত্রীদের জন্য এটি বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে।

সম্ভাব্য সমাধান ও পরিকল্পনা

পরিবহণমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, কলকাতার বাস সেবাকে আরও কার্যকর ও সহজলভ্য করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। শহরের ব্যস্ততম রুটগুলোতে অতিরিক্ত বাস চালানোর এবং জ্বালানি খরচের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, যাত্রীদের যাতায়াত আরও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করতে নতুন রুট চালু করার পরিকল্পনাও চলমান। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে শহরের বাস পরিবহণে স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে আসবে এবং যাত্রীদের দৈনন্দিন যাত্রা অনেকটা সহজ ও নিরাপদ হবে।

উপসংহার

কলকাতার রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমে যাওয়া একটি জটিল বিষয়, যা মেট্রোর জনপ্রিয়তা, বেসরকারি সংস্থার আর্থিক চ্যালেঞ্জ এবং যাত্রী পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শহরের বাস সেবার বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য সরকার সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। যাত্রীদের জন্য এটি আশা জাগানো সংবাদ হলেও, বর্তমানে ভোগান্তি কমানোর জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।

Leave a comment