এলজি ইলেকট্রনিক্স ইন্ডিয়ার আইপিও আজ ঘরোয়া বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ₹১,১৪০ টাকার শেয়ার বিএসইতে ₹১,৭১৫ এবং এনএসইতে ₹১,৭১০ টাকায় খোলা হয়েছে, অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ৫০% এর বেশি তালিকাভুক্তির লাভ পেয়েছেন। আইপিওটি 'অফার ফর সেল'-এর অধীনে ছিল, যার ফলে কোম্পানি কোনও অর্থ পায়নি, বরং শেয়ার বিক্রেতা বিনিয়োগকারীরা লাভবান হয়েছেন।
LG Electronics IPO Listing: এলজি ইন্ডিয়ার আইপিও আজ ঘরোয়া শেয়ার বাজারে একটি দুর্দান্ত তালিকাভুক্তির মাধ্যমে শুরু হয়েছে। ₹১,১৪০ প্রতি শেয়ার দরে জারি করা শেয়ারগুলি বিএসইতে ₹১,৭১৫ এবং এনএসইতে ₹১,৭১০ টাকায় ট্রেডিংয়ের জন্য খোলা হয়, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৫০% লাভ পেয়েছেন। এই আইপিওটি ছিল 'অফার ফর সেল', অর্থাৎ কোম্পানি কোনও নতুন শেয়ার জারি করেনি, বরং পুরনো শেয়ারহোল্ডাররা তাদের শেয়ার বিক্রি করেছেন।
আইপিওর সাড়া এবং বিডের রেকর্ড
এলজি ইলেকট্রনিক্সের আইপিও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে जबरदस्त সাড়া পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে এটি ৫৪ গুণেরও বেশি সাবস্ক্রিপশন পেয়েছে। এতে কোয়ালিফাইড ইনস্টিটিউশনাল বায়ার্স (QIB)-এর অংশ ১৬৬.৫১ গুণ, নন-ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরস (NII)-এর অংশ ২২.৪৪ গুণ, খুচরা বিনিয়োগকারীদের অংশ ৩.৫৫ গুণ এবং কর্মচারীদের অংশ ৭.৬২ গুণ পূরণ করা হয়েছে। এই আইপিও-এর অধীনে কোনও নতুন শেয়ার জারি করা হয়নি, বরং 'অফার ফর সেল' উইন্ডোর অধীনে ₹১০ অভিহিত মূল্যের ১০,১৮,১৫,৮৫৯টি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে।
কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে কোনও অর্থ পায়নি কারণ এটি ছিল 'অফার ফর সেল' ইস্যু। এর অধীনে শুধুমাত্র শেয়ার বিক্রেতা শেয়ারহোল্ডাররাই অর্থ পেয়েছেন। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের লাভবান করা এবং শেয়ারের লেনদেনকে উৎসাহিত করা।
কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বাস্থ্য
এলজি ইলেকট্রনিক্স ইন্ডিয়া ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস এবং কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স (গৃহস্থালি সরঞ্জাম ও ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স) ক্ষেত্রে কাজ করে। কোম্পানি মোবাইল ফোন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, এসি এবং টিভির মতো পণ্য উৎপাদন ও বিক্রিতে সক্রিয়। কোম্পানি সরাসরি গ্রাহক এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছে তার পণ্য বিক্রি করে।
মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত কোম্পানির ২ ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট, ২ সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার, ২৩ রিজিওনাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার এবং ৫১টি ব্রাঞ্চ অফিস ছিল। এছাড়াও, ৩০,৮৪৭ জন সাব-ডিলার এবং ১,০০৬টি সার্ভিস সেন্টার সারা দেশে বিদ্যমান। জুন ২০২৫ পর্যন্ত এর ১৩,৩৬৮ জন প্রকৌশলী এবং ৪টি কল সেন্টারও কার্যকর ছিল।
আর্থিক পরিসংখ্যান
এলজি ইলেকট্রনিক্সের আর্থিক স্বাস্থ্য ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী রয়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ₹১,৩৪৪.৯৩ কোটি, যা ২০২৪ অর্থবছরে বেড়ে ₹১,৫১১.০৭ কোটি এবং ২০২৫ অর্থবছরে ₹২,২০৩.৩৫ কোটিতে পৌঁছেছে। একই সময়ে, কোম্পানির মোট আয় বার্ষিক ১০% এর বেশি চক্রবৃদ্ধি হারে (CAGR) বেড়ে ₹২৪,৬৩০.৬৩ কোটি হয়েছে।
চলতি ২০২৬ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন ২০২৫) কোম্পানি ₹৫১৩.২৬ কোটি নিট মুনাফা এবং ₹৬,৩৩৭.৩৬ কোটি মোট আয় অর্জন করেছে। কোম্পানির রিজার্ভ ও সারপ্লাসের অবস্থাও শক্তিশালী ছিল। ২০২৩ অর্থবছরের শেষে এটি ছিল ₹৪,২৪৩.১২ কোটি, ২০২৪ অর্থবছরে ₹৩,৬৫৯.১২ কোটি এবং ২০২৫ অর্থবছরের শেষে ₹৫,২৯১.৪০ কোটি। জুন ২০২৫ ত্রৈমাসিকের শেষে এই অঙ্কটি ₹৫,৮০৫.৫০ কোটি হয়েছে।
আইপিও থেকে কোম্পানির ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
আইপিও 'অফার ফর সেল'-এর মাধ্যমে কোম্পানি সরাসরি তহবিল সংগ্রহের বিকল্প বেছে নেয়নি, তবে এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং বাজারে কোম্পানির সুনাম শক্তিশালী হয়েছে। এছাড়াও, তালিকাভুক্তির লাভ বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় ছিল, যার ফলে বাজারে এলজি ইলেকট্রনিক্সের ব্র্যান্ড ইমেজ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোম্পানির সারা দেশে একটি শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন নেটওয়ার্ক রয়েছে। দুটি উন্নত ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট নয়ডা এবং পুনেতে রয়েছে, এবং এর ২৫টি পণ্য গুদাম সারা ভারতে ছড়িয়ে আছে। এই নেটওয়ার্ক কোম্পানিকে সময়মতো গ্রাহকদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে এবং পরিষেবার মান বজায় রাখতে সহায়তা করে।