সেপ্টেম্বরের প্রথম দিনেই বড় ঘোষণা
সেপ্টেম্বরের একেবারে প্রথম দিনেই সাধারণ মানুষকে আরেকটি স্বস্তির বার্তা দিল তেল বিপণন সংস্থাগুলি। সোমবার সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন দামের তালিকা। এলপিজি সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে বড়সড় ছাড় ঘোষণা করেছে সংস্থাগুলি। যদিও এই পরিবর্তন শুধুমাত্র বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেই কার্যকর করা হয়েছে।
৫১ টাকার বেশি কমল দাম
সরকারি নথি অনুযায়ী, এবার ১৯ কেজির বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম সর্বোচ্চ ৫১.৫০ টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন শহরে ব্যবসায়ীদের খরচ কিছুটা হলেও কমতে চলেছে। দিল্লিতে এই সিলিন্ডারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৫৮০ টাকা। কলকাতায় দাম কমে হয়েছে ১৬৮৪ টাকা।
কলকাতার নতুন হার কত?
আগে যেখানে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ১৯ কেজির সিলিন্ডারের জন্য ১৭৩৪.৫০ টাকা খরচ করতে হত, এখন সেই সিলিন্ডার মিলবে ১৬৮৪ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি সিলিন্ডারে সাশ্রয় হচ্ছে ৫০.৫০ টাকা। বড় রেস্তোরাঁ হোক বা ছোট হোটেল, সকলে স্বস্তি পাবেন এই নতুন হারে।
মুম্বই ও চেন্নাইতেও ছাড়
শুধু দিল্লি–কলকাতা নয়, মুম্বই ও চেন্নাইয়েও হ্রাস পেয়েছে সিলিন্ডারের দাম। মুম্বইতে ১৫৮২.৫০ টাকা থেকে দাম কমে হয়েছে ১৫৩১.৫০ টাকা। অন্যদিকে চেন্নাইতে ১৭৮৯ টাকার সিলিন্ডার মিলছে এখন ১৭৩৮ টাকায়। অর্থাৎ দেশের চার মেট্রো শহরেই প্রভাব পড়েছে এই হ্রাসের।
ধারাবাহিকভাবে কমছে দাম
গত কয়েক মাস ধরেই দেখা যাচ্ছে, বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বারবার সংশোধন করে কমানো হচ্ছে। অগাস্ট মাসের শুরুতেই রাখির আগে দাম কমানো হয়েছিল ৩৩.৫০ টাকা। তারও আগে জুলাই মাসে কমানো হয়েছিল ৫৮ টাকা। টানা তিন মাস ধরে এই ধারাবাহিক ছাড়ে ব্যবসায়ী মহলে স্বস্তির হাওয়া।
ব্যবসায়ীদের বড় উপকার
১৯ কেজির এই সিলিন্ডার মূলত হোটেল, ধাবা, রেস্তোরাঁ, বিয়ে–বাড়ি কিংবা ক্যাটারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত হয়। তাই প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা, যাদের প্রতিদিন অনেক সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়, তারা কিছুটা হলেও খরচ বাঁচাতে পারবেন।
ঘরোয়া সিলিন্ডারে হতাশা
তবে সাধারণ মানুষের হতাশা কাটেনি। বাড়িতে ব্যবহৃত ১৪ কেজির গার্হস্থ্য গ্যাস সিলিন্ডারের দামে এবারও কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। অনেকেই আশা করেছিলেন, সেপ্টেম্বর থেকে হয়তো ঘরোয়া সিলিন্ডারের দাম কমবে, কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলেছে সংস্থাগুলি।
১৪ কেজি সিলিন্ডারের বর্তমান দাম
বর্তমানে ১৪ কেজি সিলিন্ডারের দাম দিল্লিতে ৮৫৩ টাকা, কলকাতায় ৮৭৯ টাকা, মুম্বইতে ৮৫২.৫০ টাকা এবং চেন্নাইতে ৮৬৮.৫০ টাকা। এপ্রিল মাসে শেষবার এই দামে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তারপর থেকে চার মাস কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত আর কোনও সংশোধন হয়নি।
কেন শুধু বাণিজ্যিক সিলিন্ডারে ছাড়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড অয়েলের ওঠানামা, আমদানি খরচ এবং ভর্তুকি নীতির কারণে এই পরিবর্তন করা হয়। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের দাম প্রায়ই সংশোধন হয়, কিন্তু গার্হস্থ্য ক্ষেত্রে সরকার সাধারণত দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে।
পুজোর আগে বাড়তি স্বস্তি
আগামী দিনে দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে হোটেল–রেস্তোরাঁয় বাড়তি ভিড় জমবে। সেই সময়ে এই দাম হ্রাস ব্যবসায়ীদের জন্য বড় স্বস্তি আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে কলকাতা ও মুম্বইয়ের মতো শহরে উৎসবের মরশুমে ক্যাটারিং সার্ভিস ও রেস্তোরাঁয় সিলিন্ডারের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
দাম কমলেও প্রশ্ন রয়ে যায়
যদিও ব্যবসায়ীরা এই হ্রাসকে স্বাগত জানিয়েছেন, সাধারণ পরিবারের মধ্যে এখনও ক্ষোভ রয়েছে। বারবার বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম কমলেও গার্হস্থ্য সিলিন্ডারের দামে পরিবর্তন না হওয়ায় বহু মধ্যবিত্ত পরিবারের খরচের বোঝা একই রয়ে গেছে।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী মাসগুলিতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে স্থিতিশীলতা এলে হয়তো ঘরোয়া সিলিন্ডারের দামেও পরিবর্তন দেখা যাবে। তবে আপাতত বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেই স্বস্তি পাওয়া গেল সেপ্টেম্বরের শুরুতে।