মহারাষ্ট্রে ধর্মান্তরকরণ রোধে কঠোর আইন: প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

মহারাষ্ট্রে ধর্মান্তরকরণ রোধে কঠোর আইন: প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

মহারাষ্ট্র সরকার রাজ্যের বিধানমন্ডলের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে ধর্মান্তরকরণ রোধ করার জন্য একটি কঠোর আইন আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (গ্রামীণ) পঙ্কজ ভোয়ার বিধান পরিষদে।

নয়াদিল্লি: মহারাষ্ট্র সরকার এবার ধর্মান্তরকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চলেছে, যা দেশকে এই সংক্রান্ত আইনের ক্ষেত্রে ১১তম রাজ্যে পরিণত করবে। রাজ্য সরকার আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন ২০২৫-এ একটি কঠোর এবং কার্যকরী আইন পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (গ্রামীণ) পঙ্কজ ভোয়ার বিধান পরিষদে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এই আইনটি দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় অনেক বেশি কঠোর হবে।

রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন রাজ্যের আদিবাসী এলাকাগুলিতে দ্রুত ধর্মান্তরকরণ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই নতুন আইন সম্পর্কে মহারাষ্ট্র সরকারের দাবি, এটি ভবিষ্যতে অবৈধ ধর্মান্তরকরণ বন্ধ করতে একটি মাইলফলক হবে।

ধর্মান্তরকরণ বিরোধী আইন: মহারাষ্ট্রে কেন প্রয়োজন হচ্ছে?

মহারাষ্ট্রে বিজেপি, শিবসেনা এবং এনসিপি (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী)-এর জোট সরকার এই ইস্যুতে আগে থেকেই সক্রিয়। বিজেপির বিধায়করা বারবার অভিযোগ করেছেন যে রাজ্যের আদিবাসী এলাকাগুলিতে বিদেশি অর্থায়নে তৈরি অবৈধ চার্চের মাধ্যমে আদিবাসীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। বিজেপির বিধায়ক অনুপ আগরওয়াল বিধান পরিষদে দাবি করেছেন যে পালঘর এবং নন্দুরবারের মতো আদিবাসী-অধ্যুষিত জেলাগুলিতে হঠাৎ করে অবৈধ চার্চের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। 

তিনি অভিযোগ করেছেন যে ২,০০০ জন বাসিন্দার একটি গ্রামে অর্ধ ডজন চার্চ তৈরি হয়েছে। এই চার্চগুলির মাধ্যমে লোভ, ভয় বা চিকিৎসা সুবিধার অজুহাতে ধর্মান্তরকরণ করানো হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ ভোয়ার কী বলেছেন?

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ ভোয়ার জানিয়েছেন যে, পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি)-এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এই প্যানেল ধর্মান্তরকরণে নিষেধাজ্ঞার জন্য যে খসড়া তৈরি করেছে, তা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় আরও কঠোর হবে। ভোয়ারের মতে, ডিজিপি এই রিপোর্টটি সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন এবং বিলটি শীতকালীন অধিবেশনে বিধানসভার টেবিলে পেশ করা হবে। মহারাষ্ট্র বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন সাধারণত ডিসেম্বরে নাগপুরে অনুষ্ঠিত হয়।

দেশের কোন ১০টি রাজ্যে আগে থেকেই ধর্মান্তরকরণ বিরোধী আইন কার্যকর আছে?

  • রাজস্থান
  • উত্তর প্রদেশ
  • মধ্য প্রদেশ
  • ওড়িশা
  • আন্ধ্র প্রদেশ
  • ছত্তিশগড়
  • গুজরাট
  • হিমাচল প্রদেশ
  • ঝাড়খণ্ড
  • উত্তরাখণ্ড

আইনে কী কী বিধান থাকবে?

যদিও মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে এখনও বিলের পুরো খসড়াটি প্রকাশ করা হয়নি, তবে যে বিষয়গুলি জানা গেছে, তা অনুসারে: লোভ, ভয়, প্রতারণা বা বিবাহের মাধ্যমে ধর্মান্তরকরণে নিষেধাজ্ঞা। যদি কোনও ব্যক্তি ধর্ম পরিবর্তন করে, তবে তাকে আগে থেকে তথ্য দিতে হবে। জোর করে ধর্মান্তরকরণ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি ও জরিমানা। আদিবাসী এবং দুর্বল শ্রেণীর লোকেদের চিহ্নিত করে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে, মার্চ ২০২৫-এ মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশও মহারাষ্ট্রে তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’ এবং ধর্মান্তরকরণের ঘটনাগুলি বন্ধ করার জন্য কঠোর আইনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছিলেন। ফড়নবীশের দাবি ছিল, সরকার এমন ১ লক্ষেরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে। বিজেপির বক্তব্য, এই আইনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাঠামোকে রক্ষা করা যাবে।

Leave a comment