নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য সরকার সংঘাত নতুন মাত্রা পেল। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালকে হুঁশিয়ারি দেন, তা ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে কমিশন। সূত্রের খবর, সিইও অফিসের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর পুরো ভিডিয়ো ক্লিপ ও ইংরেজি তর্জমা পাঠাতে বলা হয়েছে। ইসি এখন খতিয়ে দেখছে, এই মন্তব্যের ভিত্তিতে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
মমতার মন্তব্য ঘিরে ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশন
নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মনোজ আগরওয়ালকে নাম না করে সতর্ক করে বলেন, “বেশি বেড়ে না খেলাই ভালো।” সেই সঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগ ফাঁস করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের শীর্ষস্তরে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কমিশনের মতে, এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ উপস্থিত থাকাকালীন এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত অশালীন ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ।
ভিডিয়ো ও অনুবাদ চেয়ে পাঠানো, আইনি পরামর্শ শুরু
কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যের সিইও অফিসের কাছে সাংবাদিক বৈঠকের পূর্ণ ভিডিয়ো ক্লিপ ও বক্তব্যের ইংরেজি অনুবাদ দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে। ইসি-র আইন বিভাগ ইতিমধ্যেই এই ঘটনার আইনি দিক নিয়ে পরামর্শ শুরু করেছে। কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যদি দেখা যায় মন্তব্যটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাহলে কেন্দ্রীয় স্তরে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
বিরোধীর পাল্টা চ্যালেঞ্জ ও স্মারকলিপি
শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিনই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। তিনি মমতাকে ‘ডেডলাইন’ বেঁধে বলেছেন, অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ দিতে হবে। নচেৎ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করা উচিত কমিশনের। শুভেন্দু কমিশনের কাছেও স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি ইসি কোনও পদক্ষেপ না করে, তাহলে বুঝতে হবে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাচ্ছে।
‘সার’ প্রক্রিয়া নিয়েই মূল অসন্তোষ
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মূলত ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা ‘সার’ প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ, ওই সময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী। বৈঠকে অনেক বিএলও জানান, তাঁরা শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের চাপের মুখে পড়ছেন। ইসি মনে করছে, এমন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মনোবলে প্রভাব ফেলতে পারে।
কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে
এখনও রাজ্যে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি, ফলে কমিশনের হাতে সীমিত ক্ষমতা রয়েছে। তবুও নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনও হস্তক্ষেপ বা হুমকি ইসির নজরদারির আওতায় পড়ে। প্রয়োজনে কমিশন রাজ্য সরকারকে সুপারিশ করতে পারে কিংবা বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে তুলতেও পারে। কমিশনের এক শীর্ষকর্তা বলেন, আমরা সমস্ত প্রমাণ ডকুমেন্টেড রাখছি। প্রয়োজনে আদালতের সামনেও পেশ করা হবে।
তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ: ‘ইসি বিজেপির হয়ে কাজ করছে’
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছে। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “কমিশনের হয়ে বিজেপি উত্তর দিচ্ছে! তাহলে ওরা কি স্বশাসিত সংস্থা, না বিজেপির কমিশন?” তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ইসি নিরপেক্ষতার মুখোশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার ভিডিয়ো ও ইংরেজি অনুবাদ চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নবান্ন ও দিল্লির প্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ঘটনায়।