উত্তর প্রদেশের মথুরায় যমুনা নদীর জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। অবিরাম জলবৃদ্ধির ফলে কলোনি ও গ্রামগুলি প্লাবিত হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রশাসন ত্রাণকার্যে নিয়োজিত রয়েছে।
মথুরা: উত্তর প্রদেশের মথুরায় সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) যমুনা নদীর জলস্তর ১৬৬.২৬ মিটার পৌঁছেছে, যা বিপদসীমার চেয়ে ২৬ সেন্টিমিটার উপরে। এর ফলে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জয়সিংহপুরা, কালিন্দী বিহার এবং বৃন্দাবনের কলোনিগুলি জলে ডুবে গেছে, রাস্তায় ৩-৪ ফুট জল জমেছে এবং লোকেরা নৌকোর সাহায্যে যাতায়াত করছে। জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ধান, বাজরা ও সবজির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ত্রাণ সামগ্রী ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান শুরু করেছে।
জলবৃদ্ধির ফলে ঘাট ও কলোনিগুলিতে জলমগ্নতা
জলস্তর বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় প্রভাব দেখা যাচ্ছে ঘাট ও কলোনিগুলিতে। বিশ্রম ঘাট, প্রয়াগ ঘাট এবং বৃন্দাবনের অনেক ঘাট সম্পূর্ণরূপে ডুবে গেছে। সিঁড়ি পর্যন্ত জল পৌঁছে যাওয়ায় জেলা প্রশাসন এখানে স্নান ও ধর্মীয় কার্যকলাপে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
জয়সিংহপুরা, কালিন্দী বিহার, ভক্তি বিহার, শ্যাম নগর, মোহিনী নগর এবং বৃন্দাবনের কলোনিগুলিতে ৩-৪ ফুট পর্যন্ত জল জমেছে। রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং লোকেরা নৌকা বা টিউবের সাহায্যে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে।
গ্রামগুলিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
গ্রামগুলিতে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হচ্ছে। বলদেব এবং মহাবন তহসিলের আকোষ, কৈলাস এবং ছিনপারাই গ্রামগুলিতে ধান, বাজরা, জোয়ার, চিনাবাদাম এবং সবজির ফসল সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। শত শত বিঘা জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকদের লক্ষ লক্ষ টাকার লোকসান হচ্ছে।
নৌঝিল-শেরগড় সড়কে জলের তীব্র স্রোত সড়ক ধুয়ে নিয়ে গেছে, যার ফলে গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর ফলে কেবল কৃষকদেরই নয়, সাধারণ মানুষের জীবনও প্রভাবিত হচ্ছে।
নদী কিনারে না যাওয়ার সতর্কতা
বন্যা মোকাবিলার জন্য প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে সক্রিয়। জেলাশাসক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন এবং প্রায় ২০০ পরিবারকে রেশন, পানীয় জল ও চিকিৎসা সুবিধা বিতরণ করেছেন। এছাড়াও, উদ্ধারকারী দল ক্রমাগত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
প্রশাসন মানুষকে সতর্ক করেছে যে তারা যেন নদী কিনারে না যায় এবং কোনো প্রকারের গুজবে কান না দেয়। কর্মকর্তারা বলছেন যে পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আরও সম্পদ সরবরাহ করা হবে।
অবিরাম বৃষ্টির ফলে মথুরায় বন্যার আশঙ্কা
মথুরায় বন্যার পরিস্থিতি আরও গুরুতর হচ্ছে কারণ পার্বত্য অঞ্চলে অবিরাম ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে তাজেওয়ালা, ওখলা এবং হথনিকুন্ড ব্যারাজ থেকে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এছাড়াও, গোকুল ব্যারাজ থেকে ৮২ হাজার কিউসেক জল আগ্রার দিকে ছাড়া হয়েছে।
যদি বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকে, তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যমুনার জলস্তর আরও বাড়তে পারে। এর সরাসরি প্রভাব মথুরা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর পড়বে।