মতিহারির কনকটি গ্রামে মহরমের মিছিলের পর সংঘর্ষে অজয় যাদবের মৃত্যু। বিজেপি, তেজস্বী যাদবের নীরবতা এবং 'শাহাবুদ্দিন জিন্দাবাদ' স্লোগান নিয়ে আরজেডির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে।
বিহার: বিহারের মতিহারি জেলার কনকটি গ্রামে মহরমের মিছিলের সময় সহিংসতা এবং অজয় যাদবের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিজেপি তেজস্বী যাদব এবং আরজেডিকে কাঠগড়ায় তুলেছে। অমিত মালব্য অভিযোগ করেছেন যে তেজস্বী যাদবের 'শাহাবুদ্দিন জিন্দাবাদ'-এর মতো মন্তব্যের কারণে বিহারে অরাজকতা বেড়েছে। এই ঘটনার জেরে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
কনকটি গ্রামের ঘটনা কী?
মতিহারি জেলার মেহসি থানা এলাকার কনকটি গ্রামে রবিবার রাতে মহরমের মিছিল বের করা হয়। অভিযোগ, ফেরার পথে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবকের একটি দল হঠাৎ করে সহিংস হয়ে ওঠে। সেই সময় গ্রামে উপস্থিত অন্য সম্প্রদায়ের লোকেদের উপর ধারালো অস্ত্র ও তরোয়াল দিয়ে হামলা চালানো হয়।
এই হামলায় অজয় যাদব নামে এক যুবকের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এছাড়াও আরও চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মুজাফ্ফরপুরের শ্রী কৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে (এসকেএমসিএইচ) চিকিৎসা চলছে।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে ঘটনাস্থলে ডিআইজি হরকিশোর রায়, এসপি স্বর্ণ প্রভাত এবং জেলাশাসক সৌরভ জোরওয়াল দ্রুত পৌঁছান। কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করে দোষীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১২ জন অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
আহতদের অভিযোগ: হঠাৎ হামলা
আহত ধনঞ্জয় কুমার জানিয়েছেন, ওয়ার্ড সদস্য নিজামুদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে মিছিলে অংশ নেওয়া জনতা ফিরছিল। সেই সময় গ্রামে উত্তেজনা বাড়ে এবং হঠাৎ হামলা হয়। তিনি অভিযোগ করেছেন যে এই ঘটনার আগে কোনো বিবাদ ছিল না, কিন্তু তবুও তরোয়াল দিয়ে হামলা চালানো হয়।
বিজেপির আক্রমণ: তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ
ঘটনার পর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই বিষয়ে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং বিশেষ করে তেজস্বী যাদবকে নিশানা করেছে। বিজেপি আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X (আগে টুইটার) এ লিখেছেন যে তেজস্বী যাদব সম্প্রতি মঞ্চ থেকে 'শাহাবুদ্দিন জিন্দাবাদ' স্লোগান দিয়েছেন এবং এর পরেই মহরমের নামে বিহারে কিছু দুষ্কৃতী হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা শুরু করেছে।
মালব্য প্রশ্ন তুলেছেন যে তেজস্বী যাদব স্বয়ং যাদব সমাজ থেকে এসেছেন, তবুও তিনি অজয় যাদবের মৃত্যু নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। তিনি অভিযোগ করেছেন যে আরজেডির রাজনীতিতে 'মুসলিম তোষণ' এতটাই প্রভাবশালী যে নিজের সমাজের মানুষের জীবনও কোনো গুরুত্ব রাখে না।
'শাহাবুদ্দিনবাদী মানসিকতা'-র অভিযোগ
অমিত মালব্য তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেছেন যে বিহারে সম্প্রতি মহরমের নামে বিভিন্ন জেলায় যে সহিংসতা হয়েছে, তা সেই 'শাহাবুদ্দিনবাদী মানসিকতা'-র ফল, যা তেজস্বী যাদবের মতো নেতারা মহিমান্বিত করছেন। তিনি বলেন, তাঁরা যেভাবে মঞ্চ থেকে 'শাহাবুদ্দিন জিন্দাবাদ' স্লোগান তুলেছেন, তা কেবল একটি স্লোগান ছিল না, বরং একটি বিপজ্জনক আদর্শকে বৈধতা দেওয়ার মতো ছিল।
স্থানীয় বিধায়কের বক্তব্য:
ঘটনার পর স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক শ্যাম বাবু যাদব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। বিধায়ক অভিযোগ করেছেন যে একটি বিশেষ সম্প্রদায় পূর্বের শত্রুতার কারণে এই হামলা চালিয়েছে। তিনি প্রশাসনের কাছে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি জেলাশাসকের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও আবেদন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন যে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা বজায় থাকে।