ওমপ্রকাশ রাজভর মউ সদর আসন নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জেদ স্পষ্ট করেছেন। সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি (সুবহাসপা)-র প্রধান এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী ওমপ্রকাশ রাজভর সাফ জানিয়েছেন যে এনডিএ এই আসন দিক বা না দিক, সুহাসপা মউ সদর থেকে নির্বাচনে লড়বে।
UP: মঙ্গলবার ওমপ্রকাশ রাজভর মউ-তে ছিলেন। একটি জনসভায় তিনি আব্বাস আনসারীর বিধানসভা সদস্যপদ বাতিলের পর খালি হওয়া মউ সদর আসনে পুনরায় প্রার্থী হওয়ার দাবি পেশ করেন। তিনি ২০১৭ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন যে তাঁর দল সেবার এই আসনে মাত্র ছয় হাজার ভোটে হেরেছিল। ২০২২ সালে আব্বাস আনসারী এই আসন থেকে সুহাসপা-র টিকিটে জয়লাভ করেছিলেন। রাজভর বলেন, যদি উপনির্বাচন হয়, তাহলে সুহাসপা মউ আসন থেকে দৃঢ়ভাবে ময়দানে নামবে।
এনডিএ-র উপেক্ষা সত্ত্বেও নির্বাচন লড়বেন
ওমপ্রকাশ রাজভর স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে যদি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) তাঁকে এই আসনটি না দেয়, তাহলেও তিনি প্রার্থী দেবেন। যদিও তিনি এও আশা প্রকাশ করেছেন যে শেষ পর্যন্ত এই আসনটি সুহাসপা-র দখলেই আসবে।
ব্রীজেশ সিং কি এনডিএ-র প্রার্থী হবেন?
মউ সদর আসনে এনডিএ প্রার্থী হিসেবে মাফিয়া থেকে নেতা বনে যাওয়া ব্রিজেশ সিং-এর নাম শোনা যাচ্ছে। ব্রিজেশ সিং পূর্বাঞ্চলের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। এমনও শোনা যাচ্ছে যে ব্রিজেশ সিংকে সুহাসপা থেকে টিকিট দেওয়া হতে পারে। রাজভর যদিও এই বিষয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি, তবে ব্রিজেশ সিং-এর সমর্থকদের স্থানীয় সক্রিয়তা এই জল্পনাকে আরও উস্কে দিচ্ছে।
রাজভর এবং ব্রিজেশের মধ্যে অন্দরের বোঝাপড়া
মনে করা হচ্ছে যে সুহাসপা-র টিকিটে ব্রিজেশ সিং-কে ময়দানে নামানো হতে পারে। এই সমীকরণটিও গুরুত্বপূর্ণ কারণ মউ-এর রাজনীতিতে বহু বছর ধরে আনসারী পরিবারের প্রভাব ছিল। এখন যদি বাहुুবলী ব্রিজেশ সিং এখানে লড়েন, তাহলে লড়াইটা বেশ আকর্ষণীয় হতে পারে।
দুই জোট, একটি আসন, সুহাসপা-র দাবি বহাল
২০১৭ এবং ২০২২ উভয় নির্বাচনেই সুহাসপা মউ সদর আসন থেকে দাবি জানিয়েছিল। ২০১৭ সালে এই আসনটি বিজেপি-সুহাসপা জোটের কারণে সুহাসপা-র खाते যায় এবং মহেন্দ্র রাজভর মুখতার আনসারীর বিরুদ্ধে নির্বাচন লড়েছিলেন। যদিও, মুখতার প্রায় ৮৭০০ ভোটে জয়লাভ করেন। ২০২২ সালে সুহাসপা সমাজবাদী পার্টির (সপা) সাথে জোট করে নির্বাচন লড়েছিল। আসনটি আবারও সুহাসপা-র দিকে যায়, তবে প্রার্থী ছিলেন সপা-র পক্ষ থেকে মুখতার আনসারীর ছেলে আব্বাস আনসারী। তিনি বিজেপির অশোক সিংকে ৩৮ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন।
আব্বাস আনসারীর সদস্যপদ বাতিল
আব্বাস আনসারীকে ঘৃণা ভাষণ (hate speech) মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে দু'বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এর পরেই তাঁর বিধানসভা সদস্যপদ বাতিল করা হয়। এই কারণেই মউ সদর আসন এখন উপনির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। এমতাবস্থায়, সুহাসপা এই আসনটিকে নিজেদের বলে ময়দানে নামতে প্রস্তুত।
মউ আসনের রাজনৈতিক ইতিহাস
মউ সদর বিধানসভা আসনে ১৯৮০ সাল থেকে মুসলিম প্রার্থীদের আধিপত্য ছিল। ১৯৮০ সালে নির্দল খায়েরুল বাশার জয়ী হন। ১৯৮৫ সালে সিপিআই-এর ইকবাল আহমেদ, ১৯৮৯ সালে বসপা-র মোবিন, ১৯৯১ সালে সিপিআই-এর ইমতিয়াজ আহমেদ জয়ী হন। ১৯৯১ এবং ১৯৯৩ উভয় নির্বাচনেই বিজেপি মুখতার আব্বাস নকভিকে প্রার্থী করেছিল, কিন্তু তারা হেরে যায়। ১৯৯৬ সালে মুখতার আনসারী বসপা-র টিকিটে প্রথমবার জয়লাভ করেন এবং এরপর থেকে এই আসনটি আনসারী পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিজেপি আজও পর্যন্ত মউ আসন জিততে পারেনি।
কেন গুরুত্বপূর্ণ মউ আসন
মউ সদর বিধানসভা আসনটি শুধু পূর্বাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসনই নয়, এটি সামাজিক সমীকরণ এবং অপরাধমূলক ব্যাকগ্রাউন্ড যুক্ত নেতাদের প্রভাবের জন্যও পরিচিত। আনসারী এবং ব্রিজেশ সিং-এর মতো নামের কারণে এই আসনটি ক্রমাগত রাজনৈতিক আলোচনায় থাকে। এখন যখন উপনির্বাচন আসন্ন, তখন রাজভরের দাবি এবং ব্রিজেশ সিং-এর সম্ভাব্য প্রার্থীপদ এই নির্বাচনকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলছে।