ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সতর্ক করেছেন যে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে। ইউরোপীয় কমিশন ইউক্রেনের সাহায্যের জন্য এই সম্পদগুলি ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছে।
World News: রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি (Giorgia Meloni) ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (European Union) সতর্ক করেছেন যে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ (Frozen Assets) ব্যবহারের বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন (International Law) মেনেই নেওয়া উচিত। মেলোনির এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন ইউরোপীয় কমিশন (European Commission) ইউক্রেনের অর্থনৈতিক সাহায্যের জন্য এই সম্পদগুলি ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছে।
মেলোনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সতর্ক করলেন
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউরোপীয় কাউন্সিল (European Council) শীর্ষ সম্মেলনের আগে মেলোনি বলেন যে রাশিয়ার উপর চাপ বাড়ানো উচিত, কিন্তু কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের (Sovereign State) সম্পদ ব্যবহার আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন হবে। তিনি আরও বলেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তাদের নীতিগুলিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে এবং এমন কোনো পদক্ষেপ এড়িয়ে চলতে হবে যা আন্তর্জাতিক সমাজে ভুল বার্তা দিতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক
আসলে, ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তাব করেছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জব্দ করা প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের রাশিয়ান সম্পদ থেকে ২০২৬ এবং ২০২৭ সালে ইউক্রেনকে দেওয়া ঋণের গ্যারান্টি দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনা এমন সময়ে এসেছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা (Military Aid) কমে গেছে। মার্কিন সহায়তা হ্রাসের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির প্রতিরক্ষা এবং সহায়তা বাজেট প্রভাবিত হয়েছে। মেলোনি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছেন যে যেকোনো আর্থিক বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক নীতিগুলি (International Principles) মেনেই বাস্তবায়ন করা উচিত।

ব্রিটেনের সিদ্ধান্তের প্রতি ইতালির ভিন্ন মনোভাব
সম্প্রতি ব্রিটেন (United Kingdom) ঘোষণা করেছিল যে তারা ইউক্রেনে তাদের সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। এই ঘোষণার পর ধারণা করা হয়েছিল যে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিও ব্রিটেনের পথ অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাদের সৈন্যরা ইউক্রেনে পাঠানো হবে না। তিনি বলেন যে ইতালি যুদ্ধ শেষ করার জন্য কূটনৈতিক পথ (Diplomatic Path) বিশ্বাস করে এবং কোনো সামরিক হস্তক্ষেপের (Military Intervention) অংশ হবে না।
আন্তর্জাতিক আইনের সীমাবদ্ধতা
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো সার্বভৌম দেশের সম্পদ জব্দ করা বা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। অনেক ইউরোপীয় দেশ, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (European Central Bank) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) আগেই স্পষ্ট করেছে যে নিয়মের লঙ্ঘন কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য হবে না। রাশিয়াও বারবার সতর্ক করেছে যে তার সম্পদ অন্য কোনো দেশের সাহায্যের জন্য ব্যবহার করা 'চুরির' সমতুল্য।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ (Anton Siluanov) বলেছেন যে যদি পশ্চিমা দেশগুলি এই দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে রাশিয়াও 'যেমনকে তেমন' (Tit for Tat) জবাব দেবে। তিনি আরও বলেন যে রাশিয়া তার অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব (Economic Sovereignty) রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে।
পশ্চিমা দেশগুলির পদক্ষেপ
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (War) শুরু হয়েছিল, তখন পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করেছিল। এর মধ্যে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ইউরো ব্রাসেলসে (Brussels) অবস্থিত ক্লিয়ারিং হাউস ইউরোক্লিয়ারের (Euroclear) কাছে রয়েছে। এই সম্পদগুলি থেকে প্রাপ্ত সুদের কিছু অংশ ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের সাহায্যের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।












