রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি রাশিয়ার অভ্যন্তরে টমাহক-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা হয়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হবে চমকপ্রদ। পুতিন বলেছেন যে রাশিয়া তার সার্বভৌমত্ব (sovereignty) যেকোনো মূল্যে রক্ষা করবে।
Vladimir Putin: রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা যুদ্ধের কারণে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার কড়া ভাষায় বলেছেন যে, যদি রাশিয়ার অভ্যন্তরে টমাহক (Tomahawk)-এর মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা হয়, তাহলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হবে "শক্তিশালী এবং চমকপ্রদ"। পুতিনের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমেরিকা এবং তার সহযোগী দেশগুলি ইউক্রেনকে উন্নত অস্ত্র দেওয়ার কথা ভাবছে।
আত্মমর্যাদাশীল দেশ চাপে নতিস্বীকার করে না
পুতিন রুশ ভৌগোলিক সোসাইটির ১৭তম কংগ্রেসে টিভিতে প্রচারিত তার ভাষণে বলেছেন যে, কোনো আত্মমর্যাদাশীল দেশ বাইরের চাপের কাছে মাথা নত করতে পারে না, বিশেষ করে রাশিয়ার মতো দেশ কখনোই নয়। তিনি বলেন যে পশ্চিমা দেশগুলি ক্রমাগত রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চাপ সৃষ্টি করছে, কিন্তু রাশিয়ার নীতি তার সার্বভৌমত্ব (sovereignty) রক্ষা করা। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে রাশিয়ার উপর বেশিরভাগ আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা (sanctions) ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের সময় জারি করা হয়েছিল।
নতুন নিষেধাজ্ঞায় অসন্তোষ
পুতিন তার ভাষণে বুদাপেস্ট আলোচনা বাতিল হওয়া এবং রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানি Rosneft ও Lukoil-এর উপর আরোপিত নতুন আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে এই সবই রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা। পুতিন জানান যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভোলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা দেশগুলি থেকে দূরপাল্লার অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করছেন যাতে রাশিয়ান অঞ্চলের অভ্যন্তরে আক্রমণ করা যায়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে এমনটি ঘটলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া এমন হবে যা বিশ্ব কল্পনাও করেনি।

রাশিয়ার উপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
সম্প্রতি আমেরিকা রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলির উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার উদ্দেশ্য হল রাশিয়ার জ্বালানি আয় সীমিত করা। আমেরিকান প্রশাসন জানিয়েছে যে এই পদক্ষেপ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তি দুর্বল করার জন্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এটিকে অন্যায় ও উস্কানিমূলক বলে অভিহিত করেছে। পুতিন বলেছেন যে পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার অর্থনীতিকে ভেঙে দিতে চায়, কিন্তু রাশিয়া প্রতিবারই আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
যুদ্ধের চেয়ে আলোচনা ভালো
পুতিন তার ভাষণে বলেছেন যে রাশিয়া সবসময় আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেয় কারণ আলোচনা যেকোনো বিরোধ বা যুদ্ধের চেয়ে ভালো বিকল্প। তিনি বলেন যে রাশিয়া যেকোনো বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়, কিন্তু যদি তার বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা হয় তবে সে চুপ করে থাকবে না। পুতিন আমেরিকান নিষেধাজ্ঞাগুলি সম্পর্কে আরও বলেছেন যে এর ফলে আমেরিকার ভোক্তাদের ক্ষতি হবে কারণ বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়বে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলে এর প্রভাব আমেরিকান জনগণের কাছে পৌঁছাবে।
রাশিয়ার কৌশলগত সামরিক মহড়া
পুতিনের এই বিবৃতির মধ্যেই রাশিয়া তার কৌশলগত পারমাণবিক বাহিনী (strategic nuclear forces)-র একটি বড় সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এই মহড়ায় আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়েছে। এই মহড়া রাষ্ট্রপতি পুতিনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়েছে। যদিও আমেরিকা এবং ন্যাটো (NATO) দেশগুলি এটিকে রাশিয়ার 'শক্তি প্রদর্শন' কৌশল বলে আখ্যায়িত করেছে।
ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক
আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলি ইউক্রেনকে নিরন্তর সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। এখন ইউক্রেনকে টমাহক-এর মতো দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা এতটাই বেশি যে তারা রাশিয়ার অভ্যন্তরেও আঘাত হানতে পারে। রাশিয়া এটিকে তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি বলে মনে করে। পুতিন বলেছেন যে ইউক্রেনকে যদি এমন অস্ত্র দেওয়া হয়, তবে রাশিয়া এটিকে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা বলে মনে করবে এবং এর পরিণতি খুব গুরুতর হবে।













