পাকিস্তানে ২৫ বছরের কার্যক্রম বন্ধ করলো মাইক্রোসফট: কারণ অর্থনৈতিক অস্থিরতা

পাকিস্তানে ২৫ বছরের কার্যক্রম বন্ধ করলো মাইক্রোসফট: কারণ অর্থনৈতিক অস্থিরতা

Microsoft, পাকিস্তানের ২৫ বছরের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক সংকট, ট্যাক্স নীতি এবং ব্যবসার পরিবেশের খারাপ পরিস্থিতি এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

Microsoft: টেকনোলজি কোম্পানি Microsoft, পাকিস্তানে তাদের ২৫ বছর পুরনো কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। মাইক্রোসফটের পাকিস্তান প্রধান জাভেদ রহমান এটিকে "একটি যুগের সমাপ্তি" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং বিনিয়োগের জন্য এখন তারা বিকল্প, স্থিতিশীল এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বাজারের দিকে ঝুঁকছে।

২৫ বছর পর মাইক্রোসফটের যাত্রা সমাপ্ত

Microsoft, পাকিস্তানে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল ৭ মার্চ, ২০০০ সালে। সেই থেকে, কোম্পানিটি সেখানে বেশ কয়েকটি ডিজিটাল প্রকল্প এবং শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম পরিচালনা করেছে। কিন্তু ৩ জুলাই, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান থেকে তাদের সকল বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দেয়।

Microsoft-এর স্থানীয় অফিসগুলো এখন সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে এবং কর্মীদের হয়তো অন্য কোথাও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, অথবা তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

সরকারের অস্থিরতা ও ট্যাক্স নীতি প্রধান কারণ

টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের বারবার সরকার পরিবর্তন, সুস্পষ্ট নীতির অভাব, কর কাঠামোর জটিলতা এবং আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য পরিবেশকে কঠিন করে তুলেছে।

Microsoft-এর মতো বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোর জন্য সুষ্ঠুভাবে কাজ করা আরও কঠিন হয়ে যায় যখন নীতি-নির্ধারণ অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে এবং সরকারি সমর্থন পাওয়া যায় না।

প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খল এবং প্রতিভার অভাবও একটি কারণ

এছাড়াও, টেক হার্ডওয়্যারের সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং স্থানীয় প্রযুক্তিগত প্রতিভার অভাব একটি প্রধান কারণ। ডিজিটাল পণ্য ও সেবার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর দুর্বলতাও কোম্পানির উদ্বেগের কারণ হয়েছে।

অনেক সময় প্রকল্প এবং প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব সময়মতো বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রযুক্তি খাতের জন্য তা ক্ষতিকর হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপোড়েনও বাধা সৃষ্টি করেছে

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমাগত খারাপ হতে থাকা বাণিজ্য সম্পর্কও Microsoft-এর এই সিদ্ধান্তের একটি প্রধান কারণ। ২০১৮ সালে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালে কমে ১.২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

২০২৫ সালের শুরুতে, পহেলগামের সন্ত্রাসী হামলার পর উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়, যা পাকিস্তানের প্রতি বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোর আস্থা কমিয়ে দিয়েছে।

ভিয়েতনাম নতুন কেন্দ্র

মাইক্রোসফট, ২০২২ সালে পাকিস্তানে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় কোম্পানিটি ভিয়েতনাম-এর মতো স্থিতিশীল এবং উদীয়মান টেক হাবের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়।

ভিয়েতনামের বিদ্যমান প্রযুক্তিগত কাঠামো, শক্তিশালী প্রতিভার ভাণ্ডার এবং সরকারের সহায়ক মনোভাব Microsoft-কে আকৃষ্ট করছে।

গত দুই বছরে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল

Microsoft গত দুই বছরে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি সাপোর্ট প্রোগ্রাম এবং CSR (Corporate Social Responsibility) প্রকল্প ধীরে ধীরে বন্ধ করতে শুরু করে। এছাড়াও, নতুন অংশীদারিত্ব এবং প্রকল্পেও তারা স্থগিতাদেশ দেয়।

এগুলো সবই কোম্পানির পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল, যা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।

পাকিস্তানের জন্য সতর্কবার্তা

Microsoft-এর এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি কোম্পানির প্রস্থান নয়, বরং পাকিস্তানের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। সরকার এবং শিল্পমহল যদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতি সংস্কার এবং প্রযুক্তিগত পরিবেশের উন্নতি না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেক বৈশ্বিক কোম্পানি পাকিস্তান থেকে চলে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সময় এসেছে পাকিস্তানের আত্ম-অনুসন্ধান করা এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

Leave a comment