ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষার অপরাধে অত্যাচার পানিপথে পরিযায়ী শ্রমিকের উপর পুলিশি নির্যাতনে ভাঙল পা

ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষার অপরাধে অত্যাচার পানিপথে পরিযায়ী শ্রমিকের উপর পুলিশি নির্যাতনে ভাঙল পা

বাংলাভাষার 'শাস্তি'! পানিপথে হেনস্থার শিকার গোয়ালপোখরের শ্রমিক

ভিন রাজ্যে ফের চরম নৃশংসতার শিকার বাংলাভাষী এক পরিযায়ী শ্রমিক। শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধেই ‘বাংলাদেশি’ বলে সন্দেহ করে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় হরিয়ানার পানিপথ থানার পুলিশ। অভিযোগ, জোর করে বাংলাদেশি স্বীকারোক্তি আদায় করতে চাওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় চলে অকথ্য মারধর, এমনকি শ্রমিকের একটি পা পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়।

অসহায় পরিযায়ী, আহত অবস্থায় ফেরেন বাংলায়, কাঁদলেন ভিডিও বার্তায়

গোয়ালপোখর ১ নম্বর ব্লকের উকুশভাষা গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ কবির। সংসার চালাতে গিয়েছিলেন হরিয়ানার পানিপথে। কিন্তু ফিরে এলেন হাড়ভাঙা যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে। এক ভিডিয়ো বার্তায় কান্নাজড়িত গলায় তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে তাঁকে প্রথমে আটক করা হয়, তারপর শুরু হয় নির্মম অত্যাচার। কেবল বাংলা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে এই বর্বরতা চালায় পুলিশ।

১৪ জুলাইয়ের ভয়াল রাত, পুলিশের দাপটেই বদলে গেল জীবন

পরিবার সূত্রে খবর, ১৪ জুলাই পানিপথে রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় পুলিশ তাঁকে থামায়। নাম, পরিচয় জিজ্ঞাসা করার পর বাংলা ভাষা শুনেই তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কোনও প্রমাণ ছাড়াই বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। তিনি অস্বীকার করলে শুরু হয় লাঠির ঘা।

জেলা রাজনীতির তৎপরতা, পাশে দাঁড়াল তৃণমূল নেতৃত্ব

ঘটনার কথা জানাজানি হতেই রবিবার ওই শ্রমিকের বাড়িতে যান স্থানীয় তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গীর রব্বানি। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয় চিকিৎসা থেকে শুরু করে আইনি লড়াইয়ের সম্পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হবে। নেতার দাবি, এই ঘটনা সম্পূর্ণ অমানবিক। বাংলার মানুষ বাংলাতেই কথা বলবেন, তাতে যদি এমন হয়, তা হলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা কোথায়?

পরিবারে শোকের ছায়া, আতঙ্কে অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকরাও

এই ঘটনায় কবিরের পরিবার আতঙ্কিত। তাঁর বৃদ্ধা মা বলছেন, ছেলে কী অপরাধ করেছিল যে ওর পা ভেঙে দেওয়া হলো? একইসঙ্গে আতঙ্কে ভুগছেন গ্রামের অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকরাও। অনেকেই কাজের জায়গা ছেড়ে ফিরে আসার কথা ভাবছেন। গোয়ালপোখরের একাধিক পরিবার এখন সঙ্কটে।

বাংলা বললেই বাংলাদেশি! জাতীয়তাবাদের নামে আঘাত কি ভাষার উপর?

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভাষাগত পরিচয়কে ঘিরে বিভেদ ও নিপীড়নের প্রশ্ন ফের জোরালো হচ্ছে। ভাষা কখনও অপরাধ হতে পারে না, এমন দাবি তুলছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, হিন্দিভাষী রাজ্যে বারবার বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর এমন নিপীড়ন রীতিমতো উদ্বেগজনক।

আইনি পদক্ষেপের দাবি, প্রশাসনের নীরবতায় ক্ষুব্ধ জনতা

এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত হরিয়ানার প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব চাইছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তক্ষেপ। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত বিষয়টি কেন্দ্রের কাছে তুলে ধরা এবং অভিযুক্ত পুলিশদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানানো।

চরম প্রশ্ন, কবে থামবে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর এই অত্যাচার?

এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর জাতিগত ও ভাষাগত বৈষম্য, এমনকি হেনস্থা ও হিংসার অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, কবে এই অবিচার থামবে? কবে রাষ্ট্র নিজের নাগরিকদের ভাষা, পরিচয় এবং মর্যাদাকে সুরক্ষা দেবে?

Leave a comment