মিচেল স্টার্কের হঠাৎ অবসর!

মিচেল স্টার্কের হঠাৎ অবসর!

আন্তর্জাতিক T20 থেকে সরে দাঁড়ালেন অজি পেসার

অস্ট্রেলিয়ার তারকা ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক আচমকাই ঘোষণা করলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর। ৩৫ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসার জানালেন, তিনি এখন থেকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেবেন টেস্ট ক্রিকেটে। পাশাপাশি ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে ফিট রাখতে চান তিনি। অস্ট্রেলিয়ান দলে দীর্ঘদিন ভরসার প্রতীক হিসেবে থাকা স্টার্কের অবসর ক্রিকেট মহলে আলোড়ন ফেলেছে।

KKR-এর সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের সিদ্ধান্ত

কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) ২০২৪ সালের আইপিএল নিলামে মিচেল স্টার্ককে কিনেছিল রেকর্ড ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায়। সেই মরসুমে তিনি ছিলেন আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। অথচ এই দামি খেলোয়াড়ই হঠাৎ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানালেন। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এটি অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ধাক্কা।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে বিশ্বকাপ জয়ের কাহিনি

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুবাইয়ে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল স্টার্কের। সেই থেকে টানা প্রায় এক যুগ তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন। পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ ইনজুরির কারণে মিস করলেও, ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

শেষ ম্যাচ ভারতের বিরুদ্ধে

গত বছর ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে খেলেছিলেন নিজের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তার পর থেকে ধীরে ধীরে তিনি সাদা বলের ক্রিকেট থেকে দূরে সরে আসছিলেন। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন অবসরের। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডও জানিয়েছে, তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হবে।

রেকর্ড গড়া পরিসংখ্যান

৬৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৭৯টি উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। ইকোনমি রেট ৭.৭৪। একবার এক ইনিংসে চার উইকেট নেওয়ার নজিরও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। তাঁর উপরে আছেন শুধুই অ্যাডাম জাম্পা, যিনি ১০৩টি ম্যাচে ১০৩টি উইকেট নিয়েছেন।

নির্বাচকদের কণ্ঠে প্রশংসা

অস্ট্রেলিয়ান টিমের প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি বলেছেন, "মিচেল স্টার্কের গর্বিত হওয়া উচিত। বিশেষ করে ২০২১ সালের বিশ্বকাপে সে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। একের পর এক উইকেট তুলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিত। আমাদের জন্য বড় সান্ত্বনা এই যে, সে টেস্ট এবং ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলতে থাকবে।"

আইপিএলে স্টার্কের ছাপ

শুধু আন্তর্জাতিক নয়, আইপিএলেও স্টার্কের নাম আলাদা করে উল্লেখযোগ্য। তাঁর আগ্রাসী বোলিং, সুইং আর গতি বহু ম্যাচে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেছে। যদিও ইনজুরির কারণে একাধিক মরসুম তিনি খেলতে পারেননি। তবে ২০২৪-এ KKR তাঁকে বিপুল অর্থে দলে ভিড়িয়ে ভরসা রেখেছিল। কলকাতা সমর্থকরাও তাঁর অবসরের সিদ্ধান্তে খানিকটা হতাশ।

পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন

মিচেল স্টার্কের জীবনে বড় ভরসা তাঁর স্ত্রী অ্যালিসা হিলি, অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেট দলের তারকা। স্টার্ক একাধিকবার স্বীকার করেছেন, জীবনের নানা কঠিন সময়ে অ্যালিসাই তাঁকে শক্তি জুগিয়েছেন। এমনকি তাঁর ফর্মে ফেরার মুহূর্তগুলোতেও স্ত্রীর উপস্থিতি বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

সামনে টেস্ট ও ওয়ানডের লক্ষ্য

টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানালেও থামছেন না স্টার্ক। তিনি জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছর কেবল টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটেই মনোনিবেশ করবেন। বিশেষত ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দেশের হয়ে শেষবারের মতো চ্যালেঞ্জ নিতে চান তিনি। তাঁর লক্ষ্য, টেস্ট ফরম্যাটে আরও ধারাবাহিক সাফল্য এনে দেওয়া।

সমর্থকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

স্টার্কের ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ তাঁর সাহসী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ মনে করছেন, সময়ের আগেই তিনি টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিলেন। তবে সবার মুখেই একটি কথা—অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ইতিহাসে স্টার্কের অবদান অবিস্মরণীয়।

Leave a comment