ত্রিনিদাদে মোদীর ভাষণ: ভারতীয় সম্প্রদায়, ক্রিকেট, রাম মন্দির ও ভারতের অগ্রগতি

ত্রিনিদাদে মোদীর ভাষণ: ভারতীয় সম্প্রদায়, ক্রিকেট, রাম মন্দির ও ভারতের অগ্রগতি

ত্রিনিদাদে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভারতীয় সম্প্রদায়কে সম্বোধন। লারা থেকে পোরান পর্যন্ত ক্রিকেটের আলোচনা। রাম মন্দির, বিহারের ঐতিহ্য এবং ভারতের মহাকাশ অভিযান নিয়ে কথা।

প্রধানমন্ত্রী মোদী: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পোর্ট অফ স্পেনে ভারতীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় খেলাধুলা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি ক্রিকেটার ব্রায়ান লারার স্মৃতিচারণ করে সুনীল নারাইন এবং নিকোলাস পোরানের মতো বর্তমান খেলোয়াড়দের প্রশংসা করেন। এছাড়াও, তিনি বিহারের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য, ভারতীয় সম্প্রদায়ের সংগ্রামী যাত্রা এবং ভারতের মহাকাশ মিশনের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেন।

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাৎ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর দু’দিনের সফরে রয়েছেন। এই সময় তিনি পোর্ট অফ স্পেনে আয়োজিত একটি কমিউনিটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এখানে তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকেদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এবং বলেন যে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ভারতীয় সম্প্রদায়ের যাত্রা সংগ্রাম, সাহস এবং সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, যে পরিস্থিতিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকেরা এখানে এসে তাদের জীবন শুরু করেছিলেন, তা ছিল খুবই কঠিন। তিনি বলেন, আপনাদের পূর্বপুরুষরা শুধু তাদের ভূমি ত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু তাদের আত্মা ও সংস্কৃতি ত্যাগ করেননি। তারা কেবল অভিবাসী ছিলেন না, বরং ভারতের সভ্যতার ধারক ছিলেন।

ক্রিকেট দিয়ে শুরু, সংস্কৃতি পর্যন্ত পৌঁছে

ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মোদী ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেন এবং বলেন যে, ২৫ বছর আগে যখন তিনি ত্রিনিদাদে এসেছিলেন, তখন ব্রায়ান লারার কভার ড্রাইভ ও ক্লাসিক শটগুলির খুব আলোচনা হত। আমরা সবাই তাঁর ভক্ত ছিলাম। আজ সেই একই উৎসাহ ও উদ্দীপনা তরুণদের মধ্যে সুনীল নারাইন এবং নিকোলাস পোরানকে নিয়ে দেখা যায়। এটি স্পষ্ট করে তোলে যে ভারত ও ত্রিনিদাদের মধ্যে খেলার মাধ্যমেও গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দীর্ঘ সময়ে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে। এই সম্পর্ক এখন শুধু ভাষা বা পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং অনুভূতি ও সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত।

রামায়ণ নিয়ে গিয়েছিলেন, ঐতিহ্য ভোলেননি

প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতীয় সম্প্রদায়ের সংগ্রামী যাত্রার কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁরা তাঁদের সঙ্গে গঙ্গা ও যমুনাকে নিয়ে যেতে পারেননি, তবে রামায়ণকে হৃদয়ে ধারণ করে এসেছিলেন। তাঁরা মাটি ত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু আত্ম-সম্মান ও ঐতিহ্য ত্যাগ করেননি। তিনি বলেন, এই সাম্প্রদায়িকতাই ভারত ও এখানকার মানুষকে একসঙ্গে বেঁধে রেখেছে।

রাম মন্দিরের শ্রদ্ধা ও অর্পণ

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে জানান যে, যখন ভারতের অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ শুরু হয়েছিল, তখন ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর লোকেরা পবিত্র জল ও শিলা পাঠিয়ে তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়েছিল। তিনি জানান, তাঁরাও একই অনুভূতি নিয়ে এখানে অযোধ্যা মন্দিরের প্রতিকৃতি এবং সরযু নদীর পবিত্র জল নিয়ে এসেছেন।

বিহারের ঐতিহ্যের প্রতি গর্ব

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে বিহারের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেন। তিনি জানান যে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলা জি-র পূর্বপুরুষ বিহারের বক্সার জেলার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি নিজেও বিহারে গিয়েছিলেন। সেখানকার মানুষ তাঁকে বিহারের মেয়ে মনে করে।

তিনি বলেন, এখানে উপস্থিত অনেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পূর্বপুরুষ বিহার থেকে এসেছেন। বিহারের ঐতিহ্য, জ্ঞান ও সংস্কৃতি কেবল ভারতের নয়, বিশ্বেরও একটি সম্পদ। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, রাজনীতি, কূটনীতি এবং উচ্চশিক্ষা-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিহার বিশ্বকে নতুন দিশা দেখিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে একবিংশ শতাব্দীর জন্যও বিহারের ভূমি থেকে নতুন অনুপ্রেরণা ও সুযোগ আসবে।

ভারতের মহাকাশ যাত্রা: এবার চাঁদে পদার্পণ

প্রধানমন্ত্রী মোদী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, খুব শীঘ্রই কোনো ভারতীয় চাঁদে পা রাখবে এবং ভারতের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন থাকবে। তিনি জানান, এখন আমরা শুধু তারাগণকে গণনা করি না, বরং আদিত্য মিশনের মতো প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।

ষষ্ঠ প্রজন্মের ওসিআই কার্ডও মিলবে

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে একটি বড় ঘোষণা করেন এবং জানান যে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ভারতীয় প্রবাসীদের ষষ্ঠ প্রজন্মকেও এখন OCI (Overseas Citizen of India) কার্ড দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ভারতের সঙ্গে সংযোগ কেবল রক্ত ​​বা উপনামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই সংযোগ আন্তরিকতা ও আপনত্বের।

Leave a comment