২৩ বছর পর সিবিআই-এর জালে, আমদানি-রপ্তানি দুর্নীতি মামলার আসামি মনিকা কাপুর গ্রেফতার

২৩ বছর পর সিবিআই-এর জালে, আমদানি-রপ্তানি দুর্নীতি মামলার আসামি মনিকা কাপুর গ্রেফতার

CBI-এর হাত লেগেছে এক বিরাট সাফল্য, যখন তারা প্রায় ২৩ বছর ধরে পলাতক আসামি মনিকা কাপুরকে অবশেষে নিজেদের হেফাজতে নিতে পেরেছে। মনিকা কাপুরকে আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণ করে ভারতে আনা হচ্ছে।

নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান ব্যুরো (CBI)-এর ২৩ বছর পর বড় সাফল্য এসেছে। ২০০২ সালের বহুল আলোচিত আমদানি-রপ্তানি (Import-Export) দুর্নীতিতে প্রধান অভিযুক্ত মনিকা কাপুরকে আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণ করে ভারতে আনা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি ৯ জুলাই, ২০২৫ তারিখে সম্পন্ন হয়, যখন সিবিআই-এর একটি বিশেষ দল তাকে মার্কিন সংস্থাগুলির সমন্বয়ে ভারতে নিয়ে আসে।

মনিকা কাপুর দীর্ঘদিন ধরে আইনের চোখে ধুলো দিচ্ছিল, কিন্তু এখন তাকে ভারতে তদন্ত ও আদালতের কার্যক্রমের মুখোমুখি হতে হবে। আসুন জানা যাক, কে এই মনিকা কাপুর, কীভাবে কোটি টাকার সোনার দুর্নীতি করা হয়েছিল এবং অবশেষে কীভাবে তাকে ধরা হলো।

কে এই মনিকা কাপুর?

মনিকা কাপুর Monika Overseas নামে একটি ট্রেডিং কোম্পানির মালিক ছিলেন। তিনি তার দুই ভাই রাজন খান্না এবং রাজীব খান্নার সাথে মিলে ১৯৯৮ সালে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি খাতে জাল দলিলের মাধ্যমে একটি বড় দুর্নীতি করেন। তাদের কোম্পানি জাল শিপিং বিল, ইনভয়েস এবং ব্যাংক সার্টিফিকেট তৈরি করে ৬টি Replenishment লাইসেন্স সংগ্রহ করে। 

এই লাইসেন্সগুলির ভিত্তিতে, তারা মোট ২.৩৬ কোটি টাকার শুল্কমুক্ত সোনা আমদানি করে, এবং পরে এই লাইসেন্সগুলি আহমেদাবাদের Deep Exports নামক একটি কোম্পানির কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। Deep Exports এই লাইসেন্স ব্যবহার করে সোনা আমদানি করে, যার ফলে সরকারের প্রায় ১.৪৪ কোটি টাকার সরাসরি ক্ষতি হয়।

সিবিআই-এর তদন্ত এবং আদালতের কার্যক্রম

সিবিআই-এর গভীর তদন্তের পর ৩১ মার্চ, ২০০৪ তারিখে মনিকা কাপুর এবং তার ভাইদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি (IPC)-এর ১২০-বি (ষড়যন্ত্র), ৪২০ (প্রতারণা), ৪৬৭ (জাল দলিল তৈরি), ৪৬৮ (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি) এবং ৪৭১ (জাল দলিলের ব্যবহার) ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল।

যদিও রাজন এবং রাজীব খান্নাকে ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে দিল্লির সাকেত আদালত দোষী সাব্যস্ত করে, মনিকা কাপুর ক্রমাগত তদন্ত ও আদালত থেকে পালিয়ে ছিলেন। আদালত তাকে ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ তারিখে Proclaimed Offender ঘোষণা করে এবং পরে ২০১০ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড কর্নার নোটিশ জারি করা হয়।

প্রত্যর্পণের দীর্ঘ প্রক্রিয়া

সিবিআই ২০১০ সালে আমেরিকার কাছে মনিকা কাপুরের প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ (Extradition Request) পাঠিয়েছিল। আমেরিকার বিচার বিভাগীয় প্রক্রিয়া এবং ভারতের আইনি অনুরোধের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। কিন্তু সিবিআই-এর অবিরাম প্রচেষ্টা, মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে চাপের কারণে অবশেষে ২০২৫ সালে প্রত্যর্পণ সম্ভব হয়েছে।

সিবিআই-এর বিশেষ দল স্বয়ং আমেরিকা যায় এবং মনিকা কাপুরকে হেফাজতে নিয়ে ভারতে আসে। ৯ জুলাই, ২০২৫ তারিখে দিল্লি বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়।

Leave a comment