পাকিস্তান-এ ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির-এর পদোন্নতি এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অভ্যুত্থানের আশঙ্কা বাড়ছে। রাষ্ট্রপতি জারদারি-কে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, এবং ক্ষমতার রাশ সেনাবাহিনীর হাতে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারও সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে সংঘাতের মেঘ দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির-কে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করার পর দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এই পদোন্নতি নিছক সামরিক প্রথা নয়, বরং ক্ষমতা পরিবর্তনের পূর্বাভাস হতে পারে। এখন আলোচনা চলছে, ফিল্ড মার্শাল মুনির রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারিকে সরিয়ে নিজে ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিনা? পাকিস্তান কি আবারও সামরিক অভ্যুত্থানের দিকে এগোচ্ছে?
ফিল্ড মার্শালের পদ: প্রতীক নাকি ক্ষমতার সিঁড়ি?
জেনারেল আসিম মুনির-কে মে ২০২৫-এ পাকিস্তানের দ্বিতীয় ফিল্ড মার্শাল নিযুক্ত করা হয়। এর আগে, ১৯৫৯ সালে জেনারেল আইয়ুব খান এই পদ লাভ করেন এবং পরে দেশের ক্ষমতাও দখল করেন। আসিম মুনিরের এই পদোন্নতি ভারতের 'অপারেশন সিঁদুর'-এর পরে হয়েছে, যখন সীমান্তে পাকিস্তানের সামরিক পরাজয় হয়। তাই অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এই পদোন্নতিকে শুধু সম্মান হিসেবে দেখছেন না, বরং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
শাহবাজ শরিফ-এর চেয়েও কি শক্তিশালী হয়ে উঠলেন মুনির?
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের জন্য এই পদোন্নতি প্রতিকূল হতে পারে। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে যে ফিল্ড মার্শাল হওয়ার পর মুনির এখন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি উভয়ের উপরে চলে এসেছেন। তাঁর আমেরিকা সফর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ তাঁর আন্তর্জাতিক প্রভাব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু সূত্রের খবর, ট্রাম্প-মুনির সাক্ষাৎ পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে।
হোয়াইট হাউসে জেনারেল, রাষ্ট্রপতি নন!
জুন ২০২৫-এ আসিম মুনির যখন আমেরিকা যান, তখন তিনি সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বা বিদেশমন্ত্রী কেউই উপস্থিত ছিলেন না। এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধানের স্তরের সম্মান দেখিয়েছেন। এটি পাকিস্তানে এই বার্তা দিয়েছে যে এখন আমেরিকার চোখে ক্ষমতার আসল কেন্দ্র অন্য কেউ।
সিপিইসি নিয়ে মতবিরোধ, আমেরিকার দিকে ঝোঁক?
রাষ্ট্রপতি জারদারি চীন-পন্থী হিসেবে পরিচিত এবং সবসময় সিপিইসি (চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর)-এর পক্ষে ছিলেন। অন্যদিকে, জেনারেল মুনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি এখন চীন থেকে সরে এসে আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি করছেন। সূত্রের খবর, আমেরিকা সিপিইসি-কে দুর্বল করতে চায় এবং মুনির এর জন্য 'কৌশলগত অংশীদার' হতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মুহূর্তে "খামোশ অভ্যুত্থান" শব্দটি ট্রেন্ডিং, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে জারদারিকে সরানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
এজাজ সঈদের দাবি এবং রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ
পাকিস্তানি সাংবাদিক এজাজ সঈদ প্রকাশ করেছেন যে রাষ্ট্রপতি জারদারিকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ বাড়ছে। অনেক সিনিয়র রাজনীতিবিদ এবং আমলা তাঁকে 'সম্মানজনক বিদায়' জানানোর পক্ষে রয়েছেন, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন করা যায়। তাঁর মতে, সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই ব্যাক-চ্যানেল কূটনীতির মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের রূপরেখা তৈরি করেছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের সামনে তিনটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে:
- রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং মুনিরকে নির্বাহী প্রধান করা।
- সিনেট ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করা।
- সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ করা, যেমনটা অতীতে জেনারেল জিয়া-উল-হক এবং পারভেজ মোশাররফ করেছিলেন।
বিরোধী দলের নীরবতা এবং জনগণের উদ্বেগ
আশ্চর্যজনকভাবে, বিরোধী দলগুলো এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট বিবৃতি দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরাও সেনাবাহিনীর ক্ষমতার সামনে সংবিধানের চেয়ে বাস্তবতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। জনগণের মধ্যে অবশ্য দ্বিধা রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এমনিতেই সংকটজনক, এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সাধারণ মানুষের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।