MOTN সমীক্ষা বিহারে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনবে স্যার সমর্থনে ৫৮% মানুষ

MOTN সমীক্ষা বিহারে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনবে স্যার সমর্থনে ৫৮% মানুষ

বিশেষ নিবিড় সংশোধনে আস্থা ভোটারদের

ইন্ডিয়া টুডে–সি ভোটারের মুড অফ দ্য নেশন (MOTN) সমীক্ষায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। বিহারের বেশিরভাগ মানুষ নির্বাচন কমিশনের শুরু করা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ার উপর ভরসা রেখেছেন। প্রায় ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এই উদ্যোগ ভোটার তালিকাকে নির্ভুল করে তুলবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করবে।

সমীক্ষার সংখ্যায় স্পষ্ট বার্তা

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৫৮ শতাংশ মানুষের ইতিবাচক মনোভাবের পাশাপাশি ১৭ শতাংশ মনে করছেন এই প্রক্রিয়া শাসক দলের সুবিধার জন্য তৈরি। আবার ১২ শতাংশ মানুষ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই উদ্যোগে তাদের সন্দেহ রয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে এখনও একাংশ মানুষের মধ্যে দ্বিধা বিরাজ করছে।

কতদিন ধরে সমীক্ষা চলল?

MOTN সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল ১ জুলাই থেকে ১৪ অগাস্ট পর্যন্ত। এতে প্রতিটি লোকসভা আসন থেকে মোট ৫৪,৭৮৮ জন ভোটারের মতামত নেওয়া হয়। তার পাশাপাশি, সি–ভোটারের নিয়মিত তথ্যভান্ডার থেকে আরও ১,৫২,০৩৮ জনের সাক্ষাৎকার যোগ করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ২,০৬,৮২৬ মানুষের অভিমত উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।

নির্বাচনী বছরে বিরোধীদের তোপ

২০২৫ সালের শেষ ভাগে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা। যদিও এখনও কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করেনি, তবুও বিরোধীরা আগেভাগেই এই SIR প্রক্রিয়াকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব “ভোট চোরি যাত্রা” শুরু করেছেন। রাজ্য জুড়ে পদযাত্রার মাধ্যমে তারা অভিযোগ তুলছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ভোট চুরির প্রস্তুতি চলছে।

রাহুল-তেজস্বীর বার্তা জনগণের উদ্দেশে

পদযাত্রায় রাহুল গান্ধী সরাসরি জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা বা কর্ণাটকের মতো বিহারেও তিনি ভোট চুরি হতে দেবেন না। তেজস্বী যাদবও দাবি করেছেন, মানুষের ভোটাধিকার বাঁচাতেই এই আন্দোলন। বিরোধীরা বলছেন, SIR-এর মাধ্যমে ভুয়ো ভোটার বাদ দেওয়া হলেও প্রকৃত ভোটারদের নাম কাটার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

বিশেষ নিবিড় সংশোধন আসলে কী?

এর উদ্দেশ্য হলো পুরোনো বা ভুল তথ্য সংশোধন করা এবং যাঁরা নতুন ভোটার হিসেবে নাম তুলতে চান, তাঁদের সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করা। মৃতদের নাম বাদ দেওয়া, স্থান পরিবর্তন রেকর্ড করা, বিদেশি বা অযোগ্য নাগরিকের নাম বাদ দেওয়া—সবই এর অন্তর্ভুক্ত। উদ্দেশ্য একটাই—ভোটার তালিকাকে শতভাগ নির্ভুল করা।

বৃহৎ সমীক্ষার অগ্রগতি

নির্বাচন কমিশনের দাবি, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি ভোটারের নাম পুনঃনিশ্চিত করা হয়েছে। সংশোধিত খসড়া তালিকাও প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোটার ইতিমধ্যেই তাদের নথি জমা দিয়েছেন। বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যাতে প্রকৃত ভোটারদের নাম তালিকায় যুক্ত থাকে এবং ভুয়ো ভোটারদের বাদ দেওয়া যায়।

২০০৩ সালের পর আবার বড় পদক্ষেপ

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় পরিসরে ভোটার তালিকা সংশোধন চালানো হচ্ছে। গত দুই দশকে মৃত্যু, অভিবাসন ও নতুন তরুণ ভোটার যুক্ত হওয়ার কারণে তালিকায় বিপুল ত্রুটি জমেছিল। এবার সেগুলো সংশোধন করে একটি নির্ভরযোগ্য ও হালনাগাদ তালিকা তৈরিই মূল লক্ষ্য।

রাজনৈতিক দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ

স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কমিশন সব রাজনৈতিক দলের বুথ এজেন্টদেরও যুক্ত করেছে। প্রতিটি ধাপে তারা অংশ নিচ্ছেন, যাতে কোনও পক্ষপাতিত্ব না হয়। কমিশনের বক্তব্য, এই সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিহারের ভোটার তালিকা আরও নির্ভুল হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে।

নির্বাচনের আগে আস্থার লড়াই

একদিকে কমিশনের দাবি, ভোটার তালিকা এবার ইতিহাসে সবচেয়ে সঠিক ও আপডেট হবে। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, এই প্রক্রিয়া শাসক দলকে সুবিধা করে দেবে। সমীক্ষার ফলাফলে যেমন জনতার আস্থা স্পষ্ট, তেমনই সন্দেহ ও অবিশ্বাসও ছড়িয়ে আছে। নির্বাচনের আগে এই দ্বন্দ্বই বিহারের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে।

Leave a comment