মায়ানমারে ULFA-র ক্যাম্পে ড্রোন-মিসাইল হামলার দাবি করা হয়েছে। শীর্ষ কমান্ডার নয়ন মেধি নিহত হয়েছেন। ULFA ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, কিন্তু ভারতীয় সেনা হামলা অস্বীকার করেছে।
Myanmar ULFA Strike: ভারত-মায়ানমার সীমান্তে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আসামের জঙ্গি সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (ইন্ডিপেন্ডেন্ট), অর্থাৎ উলফা (আই)-এর দাবি, ভারতীয় সেনা মায়ানমারের সাগাইং প্রদেশে তাদের ক্যাম্পে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, এই হামলায় তাদের শীর্ষ কমান্ডার নয়ন মেধি সহ বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। যদিও ভারতীয় স্থলসেনা ও বিমানবাহিনী এই ধরনের কোনো স্ট্রাইকের কথা সরাসরি অস্বীকার করেছে।
উলফার তরফে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ
উলফা (আই)-এর তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ১৩ জুলাই সকালে তাদের শীর্ষ কমান্ডার নয়ন মেধি ওরফে নয়ন অসমের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার সময় ড্রোন ও মিসাইল হামলা হয়। এই হামলায় নয়ন মেধি ছাড়াও আরও এক কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছে। সংগঠনটি দাবি করেছে, এই হামলা ভারত সরকার চালিয়েছে।
মায়ানমারের সাগাইং প্রদেশে উলফার ঘাঁটি
উলফা (আই)-এর ক্যাম্পগুলি মায়ানমারের সাগাইং প্রদেশে অবস্থিত, যা ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন। ওয়াকথাম নামক গ্রামে ক্যাম্প নম্বর ৭৭৯ অবস্থিত বলে জানা গেছে। এছাড়াও, হোয়াত বস্তিতে সংগঠনটির ইস্টার্ন হেডকোয়ার্টারও রয়েছে, যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। জানা গেছে, আসামে জঙ্গি কার্যকলাপ দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর উলফা মায়ানমারকে তাদের আশ্রয়স্থল বানিয়েছে।
মায়ানমারে অরাজকতার সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গিরা
মায়ানমারে সেনা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংঘর্ষ চলছে। সেনার ক্ষমতা দুর্বল হওয়ায় বহু ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠন মায়ানমারের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে উলফা (আই) এবং এনএসসিএন (আই)-এর মতো সংগঠনগুলি প্রধান। বিভিন্ন সূত্রে খবর, মায়ানমারের চীন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলিতে কমপক্ষে চারটি জঙ্গি ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। যদিও এর কোনো সরকারি নিশ্চিতকরণ হয়নি।
এনএসসিএন (আই)-এর ঘাঁটিতেও হামলার খবর
কেবল উলফা নয়, নাগা জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনালিস্ট সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড (আই)-এর ক্যাম্পেও হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই সংগঠনগুলির ঘাঁটি চীন সীমান্তের কাছে অবস্থিত, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ।
উলফা প্রধান পরেশ বরুয়া এখনও পলাতক
উলফা (আই)-এর প্রধান পরেশ বরুয়া বহু বছর ধরে পলাতক। মনে করা হয়, তিনি হয় চীন-মায়ানমার সীমান্তে লুকিয়ে আছেন, অথবা বাংলাদেশে। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি আদালত তাকে একটি পুরনো সন্ত্রাসী মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, যা পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তন করা হয়। গত বছর আসামে স্বাধীনতা দিবসের সময় বোমা পুঁতে রাখার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এনআইএ পরেশ বরুয়া সহ আরও তিন জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। মনে করা হচ্ছে, চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সহায়তায় উলফাকে পুনরায় সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে।
সেনা কোনো স্ট্রাইক-এর কথা অস্বীকার করেছে
ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনী উভয়ই মায়ানমারে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, এ ধরনের কোনো ক্রস-বর্ডার অপারেশন চালানো হয়নি। মায়ানমার সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো সরকারি বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
২০১৫ সালে ভারত প্রথম মায়ানমারে সামরিক অভিযান চালায়
এটি প্রথমবার নয় যখন ভারতের বিরুদ্ধে মায়ানমারে সামরিক অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালে ভারতীয় সেনার স্পেশাল ফোর্স (প্যারা-এসএফ) মায়ানমার সীমান্তে প্রবেশ করে এনএসসিএন (আই)-এর ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছিল। এই অভিযানটি মণিপুরে ভারতীয় সেনার কনভয়ে হামলার প্রতিশোধ হিসাবে চালানো হয়েছিল, যেখানে প্রায় ৬০-৭০ জন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সময় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস কনফারেন্স করে এই তথ্য জানিয়েছিল।